বনগাঁ থানায় হামলা চালানোর অভিযোগে শনিবার সকালে ছ’জনকে ধরল পুলিশ, যাঁরা এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত।
তবে, হামলাকারীদের মতো ধৃতদেরও দলীয় কর্মী হিসেবে মানতে চাননি রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। জ্যোতিপ্রিয় এ দিন বলেন, “যারা ধরা পড়েছে, তাদের সঙ্গে দলের সম্পর্ক নেই। তৃণমূলের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত করা হয়েছে। পুলিশকে বলা হয়েছে, প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করতে।” কারা ‘চক্রান্তকারী’, সে বিষয়ে দলীয় স্তরে খোঁজখবর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
ধৃত বিশ্বজিৎ উপাধ্যায়, প্রদীপ বিশ্বাস, সুভাষ মজুমদার, বিশ্বনাথ রায়, দিলীপ সরকার এবং রমেশ পলাশ সকলেরই বাড়ি ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত এলাকায়। শুক্রবার থানার সামনে বিক্ষোভে অনেকের সঙ্গে নেতৃত্বও দেন বিশ্বজিৎ। তাই মন্ত্রী-নেতারা ধৃতদের দলের কেউ বলে মানতে না চাওয়ায় ছয়ঘরিয়া এলাকায় তৃণমূলের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। তাঁদের মতে, পরিস্থিতি ‘প্রতিকূল’ হয়ে যাওয়াতেই নেতারা এখন ধৃতদের দলের কেউ বলে স্বীকার করছেন না। |
বনগাঁ থানায় হামলার অভিযোগে ধৃতেরা। —নিজস্ব চিত্র |
দুর্নীতির অভিযোগে ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধানকে গ্রেফতারের দাবিতে শুক্রবার বনগাঁ থানায় স্মারকলিপি দিতে যান তৃণমূলের কয়েকশো সমর্থক। অনেকের হাতেই ছিল দলের ঝান্ডা। হঠাৎই ভাঙচুর শুরু হয়। গণ্ডগোলে জখম হন থানার তিন কর্মী। চোট পান ডায়েরি করতে আসা এক মহিলাও।
পুলিশ মোট ৫০ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করে। থানা চত্বরে বেআইনি সমাবেশ, সরকারি কাজে বাধাদান, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর-সহ সাতটি ধারায় মামলা রুজু করা হয়। ধৃতদের মধ্যে চার জনের নাম এফআইআরে রয়েছে। এ দিনই বনগাঁ আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ধৃতদের ১০ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার সুগত সেন। তাঁদের মধ্যে তৃণমূলের ছয়ঘরিয়া অঞ্চল সভাপতি তথা ওই পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা সন্তোষ দাসও রয়েছেন।
কেন হামলা হল থানায়?
জেলা তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্তোষবাবু দলকে কিছু না জানিয়েই তাঁর ‘ক্ষমতা জাহির করতে’ শ’তিনেক কর্মী-সমর্থক নিয়ে শুক্রবার থানায় স্মারকলিপি দিতে যান। তাঁদেরই অনেকের ধৈর্যচ্যুতি হওয়ায় আচমকা ওই হামলা হয়। ঘটনার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (যিনি পুলিশমন্ত্রীও) হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। তৎপর হয় পুলিশ। এ জন্য দলীয় নেতৃত্ব আর হামলাকারীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। তবে তৃণমূলের অন্দরের আর একটা মত হল, শুক্রবার যাঁরা থানায় গিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই রাজ্যে পালাবদলের পরে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে আবার সন্তোষবাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর বলেও পরিচিত। ওই নেতার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যও ওই কাণ্ড করা হয়ে থাকতে পারে।
সন্তোষবাবু এ নিয়ে মুখ খোলেননি। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি রতন ঘোষ আবার হামলার পিছনে সিপিএম বা অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের মদতের অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগ উড়িয়ে
দিয়ে বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির
বিরোধী দলনেতা সিপিএমের গোবিন্দ মণ্ডল বলেন, “হামলাকারীরা তৃণমূলের লোক, তাতে সন্দেহ নেই। মিথ্যা আমাদের দিকে আঙুল তুললে হবে?” |