‘শাস্তিদান পর্ব’ চলছেই। বন্ধের দিন কাজে না আসার ‘শাস্তি’। কোথাও ধারালো অস্ত্রে কান কাটা যাচ্ছে পঞ্চায়েতকর্মীর। কোথাও হামলায় চোখে আঘাত পাচ্ছেন সিটু সমর্থক ইটভাটার শ্রমিক। স্কুলে নিগৃহীত হচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।
এ বার আক্রান্ত হাওড়ার বিই কলেজ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিস। বন্ধের দু’দিন কাজে না আসায় শনিবার ওই অফিসে ঢুকে বিএসএনএল-এর কর্মীদের মারধর করা হল। অভিযোগের তির তৃণমূলের দলীয় পতাকা হাতে রাখা কিছু বহিরাগত লোকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, হামলাকারীদের মধ্যে ছিলেন বিএসএনএলের দু’জন ঠিকা কর্মী, যাঁরা তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিউসি-র সদস্য বলেই পরিচিত। পুলিশে লিখিত অভিযোগ করেছেন বিএলএনএল কর্তৃপক্ষ। আইএনটিটিইউসি নেতৃত্ব অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বন্ধের দু’দিন কাজে না যাওয়ায় বালি পুরসভার কিছু কর্মীদেরও অফিসে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি শহরের নেতাজি পাড়ায় শুক্রবার রাতে এক সিপিএম কর্মীর বাড়িতে ছুরি, বেল্ট, রড, ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। |
এ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত দুই যুবক এলাকায় তৃণমূল সমর্থক হিসেবে পরিচিত। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে আক্রান্ত পরিবার দাবি করেছে, বন্ধের দিন সিপিএমের মিছিলে যোগ দেওয়ার ‘আক্রোশে’ হামলা হয়। উৎপল মোহন্ত নামে ওই সিপিএম কর্মী এবং তাঁর ভাই তথা এসএফআই নেতা উদয়কে মারধর করা হয়। বাড়ির এক বধূকে বিবস্ত্র করে মারধরের অভিযোগও দায়ের হয়েছে।
অভিযুক্তদের অন্যতম বিশ্বজিৎ রায়কে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। উৎপল ও উদয়ের বিরুদ্ধে বাড়িতে হামলা ও মেয়েকে মারধরের পাল্টা অভিযোগ থানায় দায়ের করেছেন বিশ্বজিতের বাবা। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “প্রতিবেশীর মধ্যে বিবাদের জেরে ওই ঘটনা বলে জেনেছি।” ধূপগুড়ির ব্লক টাউন তৃণমূল সভাপতি গোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “পড়শির বিবাদে আমাদের দলকে কেন টেনে আনা হচ্ছে, জানি না।”
বিএসএনএল দফতরে হামলার পিছনে অবশ্য পুরোদস্তুর রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলে বামপন্থী কর্মী সংগঠনের দাবি। দু’দিনের সাধারণ ধর্মঘট ‘সফল’ করার জন্য কর্মীদের অভিনন্দন জানাতে এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ এক্সচেঞ্জে জমায়েত হয়েছিলেন ‘বিএসএনএল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’ নেতৃবৃন্দ। |
চোখে গুরুতর চোট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি কুলপির সিটু সমর্থক। |
তাঁদের দাবি, ওই সময় তৃণমূলের পতাকা, পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে এক দল বহিরাগত যুবক এসে হামলা চালায়। অফিসারদের ঘরে ঢুকে ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি গেটের তালা না খোলার জন্য টেবিল-চেয়ার উল্টে দেওয়া হয়। গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রও নষ্ট করে হামলাকারীরা। অভিযোগ, বাধা দিতে গেলে ওই যুবকেরা অফিসের কর্মীদের মারধর শুরু করে। সন্দীপ মণ্ডল নামে এক ঠিকাকর্মী এবং মনসিজ বসু নামে বিএসএনএলের স্থায়ী কর্মী আহত হন। এক্সচেঞ্জে ‘মেন ডিভিশন ফ্রেম’ বা এমডিএফ রুমেও ভাঙচুর চলে। এই ঘর থেকেই ওই এলাকার সমস্ত টেলিফোন সংযোগ গিয়েছে। কর্মীদের অফিসে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলেও দিনভর বিক্ষোভ চলায় কার্যত বন্ধ হয়ে যায় এক্সচেঞ্জের সমস্ত কাজকর্ম।
এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক প্রবীর দত্ত বলেন, “আমরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। কর্তৃপক্ষকে তা জানিয়েছি।” হাওড়া জেলা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি অরূপেশ ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “টেলিফোন এক্সচেঞ্জে তৃণমূলের কোনও সংগঠনই নেই। এক দল ঠিকা শ্রমিক-কর্মচারীর সঙ্গে অফিসের লোকেদের ছোটখাটো বিবাদ হয়েছে। বাকিটা সাজানো নাটক!”
অন্য দিকে, কুলপিতে সিটু সমর্থকের উপরে হামলার ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃত গোলামউদ্দিন পেয়াদা ও আমিনউদ্দিন পেয়াদার বাড়ি কুলপির গাজিরপুর গ্রামে। শনিবার সকালে সেখান থেকেই তাদের ধরা হয়। ধৃতদের ডায়মন্ড হারবার আদালতে হাজির করানো হলে দু’দিনের জেল-হাজত হয়। প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার সকালে বন্ধের সমর্থনে স্থানীয় মশামারি গ্রামে সিটুর মিছিলে কিছু তৃণমূল সমর্থক লাঠি, রড নিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। মিছিলে থাকা গোপীনাথ মাঝি নামে এক ইটভাটা কর্মী বাঁ চোখে গুরুতর চোট পান। |