ধর্মঘটে অনুপস্থিত শিক্ষকদের এ বার জবাবদিহি করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন কি না, না থাকলে তার কারণ কী, সে সব জানতে চেয়ে জনা চল্লিশ শিক্ষক-শিক্ষিকাকে চিঠি দিয়েছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। প্রতিবাদ জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও (ওয়েবকুটা)। যদিও উপাচার্যের মতে, সরকারি অর্থে চলা বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি নির্দেশ মানতে বাধ্য। তাই ধর্মঘটে অনুপস্থিত শিক্ষকদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন তাঁরা। যদিও রাজ্যের অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয় বর্ধমানের পথে হাঁটেনি।
বন্ধ-ধর্মঘটে যাতে জনজীবন ব্যাহত না হয় সে জন্য রাজ্য সরকার কড়া মনোভাব নিয়েছে। গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারির ধর্মঘটের আগে রাজ্য একটি নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছিল, ধর্মঘটে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত না থাকলে শাস্তি পেতে হবে। তার পরে যতগুলি বন্ধ-ধর্মঘট হয়েছে, সেই নির্দেশিকা নতুন করে জারি করেছে সরকার। গত বুধ-বৃহস্পতিবারের বন্ধের আগেও নির্দেশিকাটি ফের জারি হয়। তা সত্ত্বেও যাঁরা ডিউটিতে যাননি, তাঁদের নানা ভাবে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার শনিবার জানান, ধর্মঘটের দু’দিন গরহাজির কয়েক জন বিভাগীয় প্রধান-সহ জনা চল্লিশেক শিক্ষককে চিঠি দিয়ে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চেয়েছেন তিনি নিজে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাজিরা খাতা নেই। তা হলে ধর্মঘটে কারা অনুপস্থিত ছিলেন, তা তিনি জানলেন কী করে? উপাচার্যের বক্তব্য, “ওই দু’দিন আমি নিজে বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেছি। যাঁদের দেখা যায়নি, তাঁদের কাছেই অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। ওই চিঠির সঙ্গে ওই দু’দিন উপস্থিত থাকার বিষয়ে সরকারি নির্দেশিকাও দেওয়া হয়েছে। সরকারের টাকায় বিশ্ববিদ্যালয় চলে। তাই আমাদের সরকারি নির্দেশ মানতেই হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চেয়ে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে সব শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীকে চিঠি দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তার পাশাপাশি ওই ৪০ জনের কাছে ২০-২১ তারিখ অনুপস্থিতির কারণ জেনেও চিঠি পাঠানো হয়েছে। কলকাতা, যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ধর্মঘটে অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা তাঁদের নেই। গত বছরই যাদবপুর জানিয়েছিল, ধর্মঘটে অনুপস্থিত যে শিক্ষকেরা ছুটির আবেদন জানাবেন, তাঁদের ছুটি মঞ্জুর হবে। যদিও উচ্চশিক্ষা দফতরের কাছ থেকে এ নিয়ে এখনও উত্তর আসেনি বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠনের (বুটা) এক নেতা জানান, ২০-২১ তারিখ অনুপস্থিতির কারণ জানতে চেয়ে কোনও চিঠি এখনও তাঁরা পাননি। তবে এমন চিঠি পেলে তা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে তা ‘অস্বস্তিকর ও অন্যায্য’। |