উপনির্বাচনে বেশি ভোট
জয় দেখছে কংগ্রেস, দ্বিধায় বাম-তৃণমূল
রাজ্যের তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ৮০ শতাংশের উপর ভোট পড়ায় কংগ্রেস শিবির জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তবে শাসক তৃণমূল ও বাম শিবির জয় নিয়ে কিছুটা দ্বিধাভিভক্ত। সিপিএম এ বিষয়ে আগাম কোনও বাজি ধরতে নারাজ হলেও বামফ্রন্টের শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্বের ধারণা, ভোটের ফল বামেদের অনুকূলেই যাবে।
মুর্শিদাবাদের রেজিনগর, মালদহের ইংরেজবাজার ও বীরভূমের নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে শনিবার ভোট গ্রহণ ছিল। এর মধ্যে রেজিনগরে ৮৪%, ইংরেজবাজারে ৮২% এবং নলহাটিতে ৮৫% ভোট পড়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে যা ভোট পড়েছিল, তার তুলনায় এ বারে রেজিনগরে প্রায় ২% বেশি ভোট পড়েছে। নলহাটিতে গত বারের তুলনায় প্রায় ৩% কম ভোট পড়লেও ইংরেজবাজারে ভোটের হার মোটামুটি একই আছে। কিন্তু রাজনীতির কারবারিদের মতে, এ বার যা ভোট পড়েছে, উপনির্বাচনে সাধারণ ভাবে এত ভোট পড়ে না।
প্রদেশ কংগ্রেস নেতা তথা বিধায়ক মানস ভুঁইয়া স্পষ্ট বলেন, “উপনির্বাচনে সাধারণ ভাবে ৬০%-র বেশি ভোট পড়ে না।” এ বার ভোটের হার ভাল হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “প্রথমত, মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বিতীয়ত, এখন বাংলার প্রাকৃতিক অবস্থা ভাল। তাই মানুষ বেশি করে ভোট দিয়েছে।” তিনটি কেন্দ্রেই কংগ্রেস ভাল ফল করবে জানিয়ে মানসবাবুর মন্তব্য, “বাংলার রাজনীতিতে নতুন দিশা তৈরি হবে।” কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রেজিনগরে কংগ্রেসের মূল কাণ্ডারি অধীর চৌধুরীও বলেন, “তিনটি কেন্দ্রই কংগ্রেসের। আমাদের এখানে ভোট ধরে রাখার ব্যাপার ছিল। আমরা সে কাজে সফল হচ্ছি বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, ১৯ মাসের তৃণমূল সরকারের শাসনে মানুষের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাই এ দিনের ভোটদানের হারে প্রতিফলিত হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ থাকলেই বেশি ভোট পড়ে।”
ভোটের লাইনে চা পান। শনিবার মুর্শিদাবাদে।—নিজস্ব চিত্র
রেজিনগরের হুমায়ুন কবীর ও ইংরেজবাজারের কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ওই দুই কেন্দ্রে অকাল ভোট হয়েছে। অন্য দিকে নলহাটির কংগ্রেস বিধায়ক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় জঙ্গিপুরের সাংসদ হয়ে যাওয়ায় সেখানে ভোট হচ্ছে। তিনটি কেন্দ্রই কংগ্রেসের দখলে ছিল। এ বার বেশি ভোট পড়ায় তাঁরা তিন কেন্দ্র ছিনিয়ে নিতে পারবেন কি? তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সতর্ক মন্তব্য, “আমি এখনই কোনও আশার কথা বলছি না।’’ তবে দলের মহাসচিব, রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, “বেশি ভোট পড়া মানে মানুষের গণতন্ত্রে আস্থা ফেরা। সেটা হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যে রাজ্য সরকার চলছে, তার সুশাসনের ফলেই। ২০১১ সালের ভোটে এই তিন কেন্দ্রেই তৃণমূলের কোনও প্রার্থী ছিল না। এ বার আমরা প্রার্থী দিয়েছি। জেতার সম্ভাবনা প্রবল।”
উপনির্বাচনে বেশি ভোট পড়া নিয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “এটা গণতন্ত্রের পক্ষে খুবই ভাল কথা। তবে ফলাফল কী হবে, তা আমি আগাম কী করে বলব?” সূর্যকান্তবাবুকে প্রশ্ন করা হয়, বেশি শতাংশ ভোট মানেই প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোট এ রকম ধারণা প্রচলিত। এ দিনের উপনির্বাচনের ভোটও কি কংগ্রেস এবং তৃণমূল দু’ দলেরই বিরুদ্ধে যাবে? বামেরা কি জিতবে? জবাবে তিনি বলেন, “বেশি ভোট মানেই প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোট, এ রকম বলা যায় না। বামেরা জিতবে কি না, তা জানতে ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”
তবে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য নেতা হাফিজ আলম সৈরানি বলেন, “সাধারণত পশ্চিমবঙ্গের উপনির্বাচনে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোট পড়ে। এ বার ব্যতিক্রমী ভাবে ৮০ শতাংশের উপর ভোট পড়েছে। সাধারণত বেশি ভোট পড়লে তা শাসকের বিরুদ্ধে যায়। সে কথা মাথায় রাখলে তিনটি কেন্দ্রেই বামফ্রন্টের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।”
এই উপনির্বাচনে তিন কেন্দ্রেই বিজেপি-রও প্রার্থী ছিল। তাঁদের দল এ বারের ভোটে ‘নির্ধারক শক্তি’ হবে বলে দাবি করেছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তাঁর কথায়, “ফল যা-ই হোক, তিন কেন্দ্রেই আমাদের দল ভোট বাড়িয়ে নির্ধারক শক্তি হয়ে উঠবে বলে আশা করছি।”
উপনির্বাচন মোটামুটি নির্বিঘ্নে ও শান্তিতে হওয়ার প্রেক্ষিতে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের ফলেই শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটও এ ভাবেই করা হোক।” কয়েক দফায় পঞ্চায়েত ভোট করার দাবি জানিয়ে বিমানবাবু এ দিন বলেন, “অতীতেও পঞ্চায়েত ভোট একাধিক পর্বে করা হয়েছে। প্রশাসনের একাংশ শাসকদলের তল্পিবাহক। সে কারণেই নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.