কলকাতা লিগে ভরাডুবি ও উচ্ছ্বাস
‘হ্যাটট্রিক সপ্তাহ’ শেষ বলজিৎ ‘শো’-য়ে
ইস্টবেঙ্গল ৬ (বলজিৎ হ্যাটট্রিক, রবিন ২, চিডি)
মহমেডান ১ (উই)
লকাতা লিগের ইতিহাসে কখনও ‘হ্যাটট্রিক সপ্তাহ’ উদযাপিত হয়নি !
শনিবারের পর ময়দানে ‘মোহনবাগান দিবস’, ‘ইস্টবেঙ্গল দিবস’-এর মতো সেটা চালু করে দিতেই পারে আই এফ এ। সোম থেকে শনিগত ছয় দিনে চারটে হ্যাটট্রিক হয়ে গেল লিগে। তা ->ও সুপার নাইনে, মানে বাংলার ফুটবলের সেরা ন’টি ক্লাবের খেলায়।
ওকোলি ওডাফার জোড়া হ্যাটট্রিকের পাশে অ্যান্ডু বরিসিচ ছিলেন। এ দিন আবার তিন গোল করে ফেললেন এক পঞ্জাব তনয়বলজিৎ সাইনি।
নাইজিরীয় আর অস্ট্রেলীয়র চেয়ে নিখাদ এক ভারতীয়র হ্যাটট্রিক এক কদম হলেও এগিয়ে থাকবে দু’টো কারণে — এক) মহমেডানের মতো দলের বিরুদ্ধে লেগে থেকে সাফল্য পাওয়া।
দুই) চিডির সঙ্গী বাছার জন্য টিমে যে ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’ সিস্টেম ট্রেভর মর্গ্যান চালু করেছেন, সেই চেয়ারে বসে তীব্র চাপের মুখেও একের পর এক গোল করে যাওয়া।
শুধু কি তাই? জেসিটি অ্যাকাডেমির ছেলে বলজিতের শুধু এ বছরের উত্থান -পতন নিয়েই তো একটা ছোট গল্প লেখা যেতে পারে। কলকাতা লিগে দু’টো হ্যাটট্রিক করার পর দল থেকে ছিটকে যাওয়া।
নয়নের মণি। বলজিতের কাঁধে হরমনজ্যোৎ সিংহ খাবরা। শনিবার যুবভারতীতে। ছবি: উৎপল সরকার
দমদমে তাঁর পাশের ফ্ল্যাটে বন্ধুরা ‘ধর্ষণকাণ্ডে’ জড়িয়ে পড়ার পর নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও পুলিশি ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল তাঁকে। নাম বিভ্রাটের জন্য। এরপর ডার্বি ম্যাচে দলে অপ্রত্যাশিত ভাবে ঢুকে পড়া। টিম সূত্রের খবর, রবিন সিংহ আগের দিন অনুশীলনে দেরিতে আসায় ক্ষুব্ধ ট্রেভর মর্গ্যান সুযোগ দিয়েছিলেন বলজিৎকে। লাল -হলুদ স্ট্রাইকার এর পর থেকেই গোলের ফুলঝুরি ছোটাচ্ছেন। চার ম্যাচে ছয় গোল। শতাংশের হিসাবে যা একশোরও বেশি ! কিন্তু কোন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় জেদি, লক্ষ্যে স্থির ফাগওয়ারার ছেলের এই সাফল্য? অনেকেই বলছেন, লেডি লাক। জানুয়ারিতে বিয়ে হয়েছে তাঁর। স্ত্রীর নাম পল্লবী। বলজিৎ ম্যাচের পর বলেও দিলেন, “হ্যাটট্রিকটা আমি স্ত্রী -কে উৎসর্গ করছি।” নতুন বিয়ের পর পরই চমকপ্রদ সাফল্যউচ্ছাস থাকবেই। কিন্তু যেটা অনুচ্চারিত থেকে যাচ্ছে তা হল, চিডির সঙ্গে বলজিতের যুগলবন্দি নতুন উপাদান যোগাতে শুরু করেছে ময়দানি আলোচনায়। তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে, চিডি তাঁর সঙ্গী হিসাবে দুই সিংহমননদীপ বা রবিনের চেয়ে বলজিৎ সিংহকে পেলেই মাঠে বেশি সাবলীল থাকেন কি না, তা নিয়ে। হঠাৎ জারি করা ফতোয়ার জন্য অন্য ফুটবলারের সঙ্গে লাল -হলুদ কোচেরও মন্তব্য পাওয়া যায়নি এ ব্যপারে। তবে খেলা দেখতে আসা মোহন -কোচ মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু বললেন, “চিডি এবং বলজিতের মধ্যে কম্বিনেশনটা ভাল কাজ করছে।”
হতোদ্যম। শনিবার যুবভারতীতে। ছবি: উৎপল সরকার
রঘু নন্দীর এরিয়ানকে সাত গোলে বিধ্বস্ত করে সুদে -আসলে প্রতিশোধ নেওয়ার তিন দিন পর ফের হাফ ডজন গোল ! কলকাতা লিগ জেতার হ্যাটট্রিক করার পথে মর্গ্যানের বাধা আর মাত্র দু’টি ম্যাচপ্রয়াগ ইউনাইটেড এবং মোহনবাগান। জটিল অঙ্কে না গিয়ে যেটা সরাসরি লিখে দেওয়া যায় তা হল, ওই দুটি ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে ইস্টবেঙ্গল। তবে সেই ম্যাচ তো এপ্রিলে। তার আগে এ এফ সি কাপ, আই লিগ, আই এফ এ শিল্ড আছে। যুবভারতীতে পেন -চিডিরা যা খেললেন তাতে মর্গ্যানের সঙ্গে পুরো দলের আত্মবিশ্বাস বাড়তে বাধ্য। জায়গা বদল করে বিপক্ষের রক্ষণকে বোকা বানানোর স্ট্র্যাটেজি, গোল করার মুন্সিয়ানা, বিপক্ষের বুকে চেপে বসে টুঁটি টিপে মেরে ফেলা, ব্যক্তিগত দক্ষতার ফুলঝুরি আগামী দিনে লাল -হলুদ ছটায় আচ্ছন্ন হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে সব দিক দিয়েই।
পজিশন ধরে ওয়ান টু ওয়ান বিচার করলে ইস্টবেঙ্গলের তুলনায় অলোক মুখোপাধ্যায়ের মহমেডান সব দিক দিয়েই পিছিয়ে। তার উপর বিপক্ষকে ঠিকঠাক বিশ্লেষণ না করে সাদা -কালো কোচ ৪ -৫ -১ ফর্মেশনে দল নামিয়ে দেওয়ায় আরও বিপদে পড়ে গেল রেড রোডের পাশের ক্লাব। এ যেন পরীক্ষায় বসার আগেই উত্তর লিখে ফেলা ! সেই সুযোগটাই নিলেন চতুর মর্গ্যান। মাঝমাঠে সংখ্যার বিচারে পিছিয়ে থেকে তিনি অন্য চাল দিলেন। ৪ -৩ -৩ করে দিলেন। দুই স্ট্রাইকার চিডি এবং বলজিতের সঙ্গে জুড়ে দিলেন পেন ওরজিকে। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা পেন পেন্ডুলামের মতো দুললেন।
আর খাবরা, লালরিন্দিকাকে তিনি ব্যবহার করলেন উইং দিয়ে। ফলে আক্রমণের ঝড় উঠল। কিন্তু ঝড় উঠছে দেখেও মহমেডান সতর্ক হল না। পেনের পিছনে মার্কার লাগালেন না অলোক। ডিফেন্সিভ স্ক্রিন ব্যবহার করে রক্ষণ মজবুতের চেষ্টাও করলেন না। নিট ফল —পঁচিশ মিনিটের মধ্যেই তিন গোল করে ফেললেন বলজিৎ আর চিডি। হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল চার্লস, কিংশুকদের নিয়ে তৈরি মহমেডান রক্ষণ। এরপর আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব ছিল না। হয়ওনি। যে নামছে সেই গোল করছে। ‘গোলকানা’ রবিন সিংহও জোড়া গোল করে ফেললেন। হাফ ডজনের গোলের ‘কৃতিত্বে’ চোনা পড়ল একবারই। মহমেডানের উই ব্যবধান কমানোর সময়।


ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, নওবা, উগা, রাজু, সৌমিক, লালরিন্দিকা, কেভিন (সঞ্জু) , পেন, খাবরা, চিডি (বরিসিচ), বলজিৎ (রবিন)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.