হরভজনকে ঠিক মতো ব্যবহারই করা হল না
দু’দিনেই চিপকে বেশ কয়েকটা ভাল একক পারফরম্যান্স দেখা গেল। বাকি তিন দিনে নিশ্চয়ই আরও কয়েকটা দেখা যাবে। যাই বলুন, প্রথম টেস্ট কিন্তু জমে গিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা কত দূর গড়াবে, জানি না। তবে সচিন তেন্ডুলকরকে ব্যাট করতে দেখাটা এখনও পর্যন্ত এই টেস্টে আমাদের কাছে সবচেয়ে দামি উপহার। সচিন উইকেটে নেমে এমন ব্যাটিং করলে তো তা হবেই। ইনিংসের প্রথম বল থেকেই রাজকীয়তার ছাপ ওর ব্যাটে। অস্ট্রেলিয়ার আক্রমণকে যে রকম অনায়াসে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সামলাল সচিন, তাতে কোনও প্রশংসাই বোধহয় যথেষ্ট নয়। টেকনিক নিয়ে তো কোনও কথা বলারই নেই, প্রতি শটের টাইমিং - একেবারে নিখুঁত। ওকে ব্যাট করতে দেখে মনে হচ্ছে এই দু’দিন আগেই আগের টেস্টটা খেলে উঠেছে।
কোনও অসাধারণ শিল্পীর পারফরম্যান্স যে ভাবে বাড়তি মাত্রা পেয়ে যায় যোগ্য সঙ্গতে, সে ভাবেই ভারতীয় ব্যাটিং আরও দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে সচিন যোগ্য সঙ্গত পেয়ে যাওয়ায়। সঙ্গতকার অবশ্যই বিরাট কোহলি। সচিনের পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ার মতো কোনও ব্যাটসম্যান দাঁড়িয়ে গেলে তো এমনই হবে। ক্রিকেট দেখার ভরপুর সুখ পাচ্ছি আমরা। এই না হলে টেস্ট ক্রিকেট? সচিনের সঙ্গ পাওয়াটাই বোধহয় বিরাটের পরিণত হওয়ার প্রধান কারণ। স্বাভাবিক। সঙ্গে যদি সচিন তেন্ডুলকরের মতো একজন ব্যাটসম্যান থাকে, তা হলে তো আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকারই কথা। বিরাটের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। ওর পারফরম্যান্সে এই আত্মবিশ্বাসের ছাপ একেবারে স্পষ্ট। চতুর্থ উইকেটের এই পার্টনারশিপটা রবিবার আরও দুটো সেশন টিকে থাকতে পারলে ভারত যে অস্ট্রেলিয়ার ঘাড়ে বিশাল এক রানের পাহাড় চাপিয়ে দিতে পারবে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
সচিনের এই ‘ক্ল্যাসিক’ দেখার আগে অবশ্য আমরা আরও দুটো মন মাতানো পারফরম্যান্স দেখেছি। মাইকেল ক্লার্ক রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ক্লার্কের ফুটওয়ার্ক যেমন অসাধারণ, তেমনই দুর্দান্ত ক্রিজের একেবারে ভিতরে এসে ঘূর্ণি বলগুলোর বিষ নষ্ট করে দেওয়ার পদ্ধতি। রিকি পন্টিংয়ের হাত থেকে অধিনায়কের ব্যাটন হাতে নেওয়ার পর ওর ব্যাটে রানের ফোয়ারা চলছে তো চলছেই। এই টেস্টেও দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে বরাবরের মতোই। প্রথম দিন লাঞ্চের পর ক্লার্ক যখন ব্যাট হাতে নামল, তখন অস্ট্রেলিয়া কিছুটা বিপদে। সেই বিপদ থেকে দলকে টেনে তুলল অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক। একেই বলে ক্যাপ্টেন। অস্ট্রেলিয়া দলে ওয়াটসন ছাড়া ক্লার্কই এর আগে ভারতে খেলে গিয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা দারুণ ভাবে কাজে লাগাল, জীবনের প্রথম টেস্ট খেলা এনরিকেরও প্রশংসা করতে হবে। ক্লার্ককে যোগ্য সঙ্গত করে গেল। যেটা না থাকলে অস্ট্রেলিয়া হয়তো আড়াইশোতেই শেষ হয়ে যেতে পারত। এই পার্টনারশিপটাই ওদের চারশো’র কাছাকাছি পৌঁছে দিল।
ইংল্যান্ড সিরিজে নিজের সেরা জায়গায় না থাকলেও অশ্বিন যে এই সিরিজে ফর্মে ফিরেছে, তা শুরুতেই প্রমাণ করে দিল। ওর বোলিংয়ে নানা বৈচিত্র থাকলেও, সারাক্ষণ অশ্বিন একেবারে লাইন লেংথ ঠিক রেখে বল করে গেল। হাতেনাতে পুরস্কারও পেল। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ঘরের মাঠের দর্শকদের সামনে ভাল পারফরম্যান্স করার চেয়ে আনন্দ আর অন্য কিছুতে নেই। চিপকের এই পারফম্যান্স নিশ্চয়ই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে অশ্বিনের কাছে।
তবে ইংল্যান্ড সিরিজের সেরা বোলার প্রজ্ঞান ওঝাকে না নিয়ে মাঠে নামাটা মনে হয় ঠিক হয়নি। হরভজনকে ভুবনেশ্বরের জায়গায় দলে নিলেই ভাল হত বোধহয়। চিপকের এই ধীরগতির, ঘূর্ণি উইকেটে ওঝা থাকলে অস্ট্রেলিয়া এত দূর এগোতে পারত বলে মনে হয় না। হরভজনকে যে ভাবে ব্যবহার করা হল, তা নিয়েও আমার কিছু বলার আছে। যখন দলের প্রথম শ্রেণির স্পিনার, তখন ওকে কেন প্রথম দিনের শেষ সেশনে দ্বিতীয় দিন প্রথম ঘণ্টায় ব্যবহার করা হল না, বুঝলাম না। জাডেজাকে দিয়ে ওর থেকে বেশি ওভার বল করানো হল ! অস্ট্রেলিয়ার লোয়ার অর্ডার ব্যাট করার সময় যদি ওকে দিয়ে বল করানো হত, তা হলে হয়তো হরভজন সাফল্য পেত। সে ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা আত্মবিশ্বাস ছন্দ পেয়ে যেত। আমার বিশ্বাস, টেস্ট ক্রিকেটে ওর ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সোজা কথা, ভারতকে বড় লিড নিতেই হবে। কারণ, উইকেটের অবস্থা আরও খারাপ হবে এবং এই উইকেটেই চতুর্থ ইনিংসে ভারতকে রান তাড়া করতে হবে। তবে সচিন - কাহলি জুটি দ্রুত ভেঙে দিতে পারলে অস্ট্রেলিয়া ভাল জায়গায় চলে যাবে। রবিবার তৃতীয় দিনটা গুরুত্বপূর্ণ। আমার আর তর সইছে না।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.