|
|
|
|
রাজ্যের দাবি মানার আশ্বাস শিন্দের |
এনসিটিসি নিয়ে আপত্তি মেটাতে মরিয়া কেন্দ্র
|
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা |
হায়দরাবাদের বিস্ফোরণকে সামনে রেখে সন্ত্রাস মোকাবিলায় জাতীয় তদন্ত কেন্দ্র (এনসিটিসি) গঠনের প্রস্তাব ফের ঠান্ডা ঘর থেকে বার করতে সক্রিয় মনমোহন সিংহের সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অ-কংগ্রেসি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও এ ব্যাপারে ফের আলোচনা করতে চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে।
মুম্বইয়ে ২০০৮-এর নভেম্বরে জঙ্গি হামলার পরেই এনসিটিসি গঠনের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু তা আটকে যায় অ-কংগ্রেসি রাজ্যগুলির আপত্তিতে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্য সরকার এনসিটিসি বিলে মূলত দু’টি কারণে আপত্তি জানিয়েছে। প্রথমত, এনসিটিসি-কে আইবি-র নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। কোনও অবস্থাতেই আইবি সরকারের কাছে (সংসদে) দায়বদ্ধ নয়। এমন একটি সংস্থার অধীনে এনসিটিসি-র মতো যুক্তরাষ্ট্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অস্তিত্ব মানতে নারাজ রাজ্য। দ্বিতীয়ত, তল্লাশি-আটক ও গ্রেফতারের ক্ষমতা সাংবিধানিক ভাবে পুলিশের হাতে রয়েছে। আর পুলিশের নিয়ন্ত্রণ রাজ্যের হাতে। কেন্দ্রের প্রস্তাব অনুযায়ী, এনসিটিসি-কে পুলিশের এই তিন ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। সংসদের কাছে দায়বদ্ধ নয়, এমন কোনও তদন্ত সংস্থার হাতে পুলিশের মূল তিন ক্ষমতা দেওয়া সংবিধানের পরিপন্থী বলে মনে করে পশ্চিমবঙ্গ। অন্য একাধিক রাজ্যের আপত্তিও এই জায়গাতেই।
রাজ্যগুলি মনে করে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ভার যখন রাজ্যের, তখন কেন্দ্র সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। হায়দরাবাদের ঘটনায় যখন কেন্দ্রের ব্যর্থতার অভিযোগ উঠছে, তখন গোয়েন্দা কাঠামোকে শক্ত করতে কেন্দ্রীয় সরকার ফের এনটিসিটি নিয়ে আলোচনা চালাতে চায় রাজ্য ও বিরোধী দলগুলির সঙ্গে। রাজ্যের অধিকারের কথা মাথায় রেখে প্রয়োজনে প্রস্তাবকে আরও শিথিল করতেও প্রস্তুত কেন্দ্রীয় সরকার। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদম্বরমও প্রধানমন্ত্রীকে সম্প্রতি চিঠি দিয়ে এনসিটিসি গঠনের বিষয়টি দ্রুত সারতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি শিন্দের আবেদন, সরকার এনসিটিসি করার জন্য এখনই প্রস্তুত। যদি এর মধ্যে গোয়েন্দা বিভাগ বা অন্য কোনও বিভাগকে বাদ দেওয়ার দাবি ওঠে, তা হলেও সরকারের কোনও আপত্তি নেই। এই অবস্থায় এটি দ্রুত গঠনের জন্য সকলকে আলোচনায় বসার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। শিন্দের এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ আজ বলেন, “এনসিটিসি গঠন নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা যাবে না।” বিজেপির শরিক দল জেডি (ইউ) নেতা এন কে সিংহও বলেন, “এনসিটিসি-তে সম্মতি দিতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু সন্ত্রাস মোকাবিলার জন্য রাজ্যের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করতেই হবে, এ ধারণাটাও ভুল।” বিরোধীদের আশঙ্কা, রাজ্যকে পাশ কাটিয়ে কেন্দ্র যে কোনও রাজ্যে তল্লাশি বা গ্রেফতারের অধিকার পেলে রাজনৈতিক ভাবেও তার অপব্যবহার হতে পারে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্র বলছে, গোটা দেশের গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় সাধনের জন্য এনসিটির মতো সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অসীম। শিন্দে আশাবাদী, মমতা-সহ অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হবেন তিনি। রবিবারই শিন্দে কলকাতায় আসছেন। তাঁর সঙ্গে মমতার কথাও হবে। সেখানে এই বিষয়টি উঠতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক জানিয়েছেন, নতুন প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখতে তিনি আগ্রহী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, গত জানুয়ারি মাসেই বিরোধীদের আপত্তির কথা মাথায় রেখে আগের প্রস্তাবটি অনেকটা শিথিল করা হয়েছে। চিদম্বরম যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তখন রাজ্য পুলিশকে না জানিয়ে গোয়েন্দা বাহিনী যখন ইচ্ছা যে কোনও রাজ্যে গিয়ে তল্লাশি বা গ্রেফতার করবে, এমন প্রস্তাব ছিল। কিন্তু পরিবর্তিত প্রস্তাব, যেটি কিছু রাজ্যকে পাঠানো হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, রাজ্য পুলিশকে জানিয়েই তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হবে। যদিও রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক শীর্ষ কর্তা আজ জানান, এনসিটিসি নিয়ে কোনও নতুন প্রস্তাব তাদের কাছে আসেনি। আর কেন্দ্রের যে পুরনো প্রস্তাব রয়েছে, রাজ্য তা মানবে না। রাজ্য তার আগের অবস্থানেই অটল। এই অবস্থায় এনসিটিসি-র পরিণতি নিয়ে ধন্দ থাকছেই। হায়দরাবাদ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে শিন্দে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে নতুন করে আবেদন জানালেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে, এনসিটিসি সংক্রান্ত প্রস্তাবটি যদি আরও শিথিল করতে হয়, তা হলে তা অর্থহীন হয়ে পড়বে। রাজ্যগুলি যদি এখনও দাবি জানায় যে, গোয়েন্দা বাহিনী রাজ্যকে শুধু তথ্য দেবে, বাকি কাজ রাজ্য পুলিশের, তা হলে সেই প্রস্তাব বর্তমান ব্যবস্থাতেই রয়েছে বলে দাবি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের। তা ছাড়া প্রথমে এনসিটিসি-কে আইবি অধীনে রাখার প্রস্তাব ছিল। এখন সেটি আইবি-র হাত থেকে সরিয়ে স্বাধীন মর্যাদা দেওয়ার কথা হচ্ছে। এই প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি রয়েছে তাতে খোদ আইবি-রও। তাদের প্রশ্ন, এনসিটিসি যদি গোয়েন্দার কাজ করে, তা হলে আইবি কী করবে? যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুক্তি, এনসিটিসি শুধু সন্ত্রাস মোকাবিলার কাজ করবে। আইবি-কে অন্য যাবতীয় বিষয় দেখতে হবে। |
|
|
|
|
|