|
|
|
|
রেল ময়দানে অধীরের দুই লড়াই |
মমতাকে টেক্কা দিতে পবনের সঙ্গে পাঞ্জা
|
অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
সীমিত সামর্থ্য। ক্ষমতা নেই আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার। আর এই স্বল্প সাধ্যের বৃত্তের মধ্যেই এখন দুই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। এক জনের সঙ্গে আদায়ের লড়াই তো অন্য জনের সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতা।
এক দিকে রয়েছেন মন্ত্রকের পূর্ণমন্ত্রী পবন বনশল। প্রাথমিক পর্বে সুসম্পর্ক থাকলেও রেল ভবনের গুঞ্জন, ইতিমধ্যেই ব্যক্তিত্বের সংঘাত তৈরি হয়েছে দুই মন্ত্রীর মধ্যে। অধীর যে ভাবে ইস্ট-ওয়েস্ট প্রকল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রী থেকে সনিয়া গাঁধীর কাছে দরবার করে বেড়িয়েছেন, তাতে বেজায় চটেছে বনশল-শিবির। স্বাভাবিক ভাবেই বেড়েছে দূরত্বও। ফলে বাংলার স্বার্থ আদৌ রক্ষা করা হবে কি না, হলেও কতটা হবে, তা নিয়েই সংশয় রয়েছে অধীর-শিবিরে।
পবন বনশল যদি অধীরের ঘরের লড়াই হয়, তা হলে বাইরে তাঁকে অবশ্যই পাঞ্জা কষতে হচ্ছে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়ার সঙ্গে। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের চারটে বাজেট পেশ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বিশেষ করে মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যের জন্য ১৬টি রেল প্রকল্প ঘোষণা করেন। তার মধ্যে শেষ পর্যন্ত ঠিক ক’টি প্রকল্প বাস্তবে রূপায়ণ করা সম্ভব, তা নিয়ে এখন রেল কর্তারা প্রশ্ন তুললেও অধীরের কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হল, চালু প্রকল্পগুলির জন্য পবন বনশলকে দিয়ে অর্থ বরাদ্দ করা। |
|
সমস্যা হচ্ছে, মমতার অধিকাংশ প্রকল্পের পিছনে অর্থ ঢালার কোনও কারণ দেখছে না বনশল-শিবির। রেল কর্তাদের বক্তব্য, মমতার আমলেই যোজনা কমিশন প্রশ্ন তুলেছিল, প্রকল্পগুলি রূপায়ণের টাকা কোথা থেকে আসবে?
কিন্তু নিজের রাজনৈতিক ফায়দা দেখতে গিয়ে তখন কার্যত যোজনা কমিশনের পরামর্শ উপেক্ষা করে একের পর এক প্রকল্প ঘোষণা করেছেন মমতা। যার পরিণতি হল, এখন অর্থের অভাবে কার্যত থমকে গিয়েছে সেগুলির কাজ। তার উপরে বিষফোঁড়া রাজ্যের জমি-নীতি। রেলকর্তারা মনে করছেন, এর জেরেই মমতার আমলে ঘোষিত অধিকাংশ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে। সর্বোপরি বাজেট বরাদ্দের টাকা ফিরে যাওয়ার উদাহরণও রয়েছে। অধীর-শিবিরেরও বক্তব্য, “একেই রেলের হাতে টাকার অভাব। তার উপরে বরাদ্দের টাকা ফিরে গেলে সেই প্রকল্পে নতুন অর্থ বরাদ্দ করা হবে কেন, সে প্রশ্ন তুলেছে বনশল-শিবির। ফলে আমাদের পক্ষে রাজ্যের জন্য লড়াই করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।”
দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের দ্রুত রূপায়ণে তৎপর হন অধীর। কিন্তু এখন সেই প্রকল্পের কাজ জমি অধিগ্রহণ ও যাত্রাপথ সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে রয়েছে। ফলে ওই প্রকল্পের জন্য টাকা আদায় করতে কালঘাম ছুটছে অধীরের।
এ দিকে, আসন্ন লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে নিজের জেলা মুর্শিদাবাদ-সহ গোটা উত্তরবঙ্গের জন্য একগুচ্ছ প্রস্তাবও মঞ্জুর করাতে তৎপর হয়েছেন অধীর। কারণ, কংগ্রেসের প্রভাব এখনও মূলত উত্তরবঙ্গ-কেন্দ্রিক। তাঁর যুক্তি, “তৃণমূলের আমলে রেল বাজেটে উপেক্ষিত থেকেছে উত্তরবঙ্গ। তাই সেখানকার কথা মাথায় রেখে একাধিক পরিকল্পনা নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাজেটে কী পরিকল্পনা পাশ হয়, তাই এখন দেখার।” বনশল কোনও আশ্বাস দেননি। তবু অধীর নিজের জেলার জন্য অন্তত একটি বড় মাপের প্রকল্প আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শেষ বেলায় অবশ্য ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো, কাঁচরাপাড়া, নিউ জলপাইগুড়ি, ডানকুনি, হলদিয়ার রেল কারখানাগুলির জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে রাজি হয়েছেন পবন বনশল। মালদহ থেকে দিল্লি পর্যন্ত দুরন্ত ধাঁচের একটি সুপারফাস্ট ট্রেন ও শিয়াদলহ-হাওড়া লাইনে নিত্যযাত্রীদের জন্য লোকাল ট্রেন বাড়ানোর বিষয়ে স্পষ্ট আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি অধীর-শিবিরের। অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে রেল ওভারব্রিজ, সাবওয়ে বা টিকিট সংরক্ষণের মতো ছোট মাপের প্রকল্পগুলিতেও। তবে অধীর-শিবিরের বক্তব্য, না আঁচালে বিশ্বাস নেই। এই পরিস্থিতিতে তাই মঙ্গলবার রাজ্যের প্রকল্পগুলির জন্য বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির আশ্বাস তেমন ভাবে না থাকলে তৃণমূলের আক্রমণ ঠেকানোর কৌশল নিতেই হবে অধীর তথা প্রদেশ কংগ্রেসকে। মমতার আমলে ঘোষিত রাজ্যের প্রকল্পগুলির বাস্তব ভিত্তি নেই, এখন তারা এই যুক্তিতেই রক্ষণ সাজাতে শুরু করেছে। |
অধীরের প্রস্তাব |
• মুর্শিদাবাদে কংক্রিট স্লিপার কারখানা, কোচ নির্মাণ ওয়ার্কশপ, কোল্ড চেন ডিপো। বাঁকাতে কোচ রক্ষণাবেক্ষণ কারখানা
• বেলডাঙা ও ভগবানগোলায় রেল হাসপাতাল
• খাগড়াঘাটে রেল পুলিশ ব্যারাক
• রেল মিউজিয়াম হাওড়ার বদলে মুর্শিদাবাদে
• ডানকুনি ও শিয়ালদহ মেন লাইনে লোকালের সংখ্যা বৃদ্ধি করা
• শিয়ালদহ লাইনে যাত্রী চাপ কমাতে সোদপুরে লুপ লাইন নির্মাণ |
নতুন লাইন |
• চৌরিগাছা-সাঁইথিয়া ভায়া কান্দি
• কৃষ্ণনগর-বহরমপুর (ভায়া করিমপুর-ডোমকল-ইসমাইলপুর) |
নতুন ট্রেন |
হাওড়া-নিউজলপাইগুড়ি ভায়া কাটোয়া-আজিমগঞ্জ (পণ্য+ যাত্রিবাহী ট্রেন), ফারাক্কা-হাওড়া (সকালে গিয়ে সন্ধ্যায় ফেরা), হাওড়া-রায়পুর, শিয়ালদহ-বহরমপুর (মেমু), মালদহ-দিল্লি সুপারফাস্ট ভায়া মুর্শিদাবাদ, কাটোয়া-জঙ্গিপুর (ডেমু), বালুরঘাট-হাওড়া (প্রতিদিন), মালদহ-চেন্নাই (সাপ্তাহিক), নিউজলপাইগুড়ি-মালদহ-ভাগলপুর
|
টিকিট সংরক্ষণ কেন্দ্র |
আদর্শ স্টেশন |
বহরমপুর, ডোমকল, অমরপুর, জঙ্গলমহল,
নবগ্রাম,
ইসলামপুর, জলঙ্গি, হরিহরপুর |
বহরমপুর কোর্ট,
খাগড়াঘাট জিয়াগঞ্জ, চাকুলিয়া, ঘাটশিলা |
ডাবলিং |
যাত্রাপথ বৃদ্ধি |
কাটোয়া-ফারাক্কা
(ভায়া আজিমগঞ্জ), পলাশী-জিয়াগঞ্জ |
ধনধান্যে এক্সপ্রেস লালগোলা পর্যন্ত,
ভাগলপুর-সুরাত এক্সপ্রেস আজিমগঞ্জ পর্যন্ত |
যাত্রা বৃদ্ধি |
নয়াদিল্লি-ডিব্রুগড় রাজধানী ভায়া লখনউ সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন |
রোড ওভারব্রিজ |
সাবওয়ে |
বহরমপুর কোর্ট স্টেশন |
বেলডাঙা ও মুর্শিদাবাদ |
|
|
|
|
|
|
|