দক্ষিণ কলকাতা
শহরের বুকে
শুয়োরের খোঁয়াড়
ওয়ার কথা ছিল সুদৃশ্য উদ্যান। তার বদলে তৈরি হয়েছে কার্যত শুয়োরের খোঁয়াড়। খাস নিউ মার্কেটের সামনে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ধারের জমিটি ঘিরে বহু দিন ধরেই চলছে বিভিন্ন প্রকল্পের আশ্বাস। কিন্তু অভিযোগ, কোনও প্রকল্পই বাস্তবায়িত হয়নি। ফাঁকা জমিটির এক দিকে রয়েছে ভ্যাট। আর বাকি জমির রেলিং দিয়ে ঘেরা অংশের অনেকটা জুড়েই আবর্জনার স্তূপ তৈরি হয়ে রয়েছে। চরে বেড়াচ্ছে শুয়োরও। দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে উঠেছে পথচারীদের।
এই জমিতে কী প্রকল্প নিয়েছিল পুরসভা?
এর আগের দফায় তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত পুরবোর্ডের আমলে উদ্যান বিভাগ এই জমিতে একটি উদ্যান তৈরি করে। ফাঁকা জমিটি রেলিং দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। উদ্যানে ঢোকার জন্য পুরসভা একটি গেটও তৈরি করে। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই উদ্যানটি নষ্ট হয়ে যায়। পুর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, স্থানীয় বাসিন্দারাই উদ্যানটি নোংরা করেন। পরবর্তীকালে পুরসভা সিদ্ধান্ত নেয়, সামনে ‘হিডকো বিল্ডিং’-এর জন্য এখানে একটি জলাধার নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পের জন্য কোনও অর্থ বরাদ্দ না থাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি। পরে এই জমিতে পুরসভা একটি স্কুল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সে প্রকল্পও বাস্তবে রূপায়িত হয়নি।
মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, “এখানে যে উদ্যান তৈরি হয়েছিল তার ঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। উদ্যান সাজাতে ও পরিষ্কার রাখতে যে পরিমাণ অর্থ ও নিরাপত্তারক্ষী প্রয়োজন তা আমাদের নেই।” পুরসভার জঞ্জাল সাফাই দফতরের এক আধিকারিক জানান, এখান থেকে পুরসভার শ্রমিক আবাসনটি স্থানান্তরিত করলে জায়গাটি আবর্জনামুক্ত হতে পারে। কিন্তু ভ্যাটের সমস্যা রয়েই যাবে।
স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর শীলা কপূর বলেন, “এই জায়গার পরিবেশ অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। নিউ মার্কেটের মতো জায়গায় শুয়োর ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরকে বলার পরে তারা একাধিক বার অভিযান চালিয়ে শুয়োর সরিয়েছিল। কিন্তু তার পরেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।” মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, “শুয়োর সরানো হয়েছিল। তার পরেও অবস্থা তথৈবচ। পুলিশের ‘ক্যাট্ল ক্যাচার’ দফতরকে খবর দেওয়া হয়েছিল। তারাই এখান থেকে শুয়োর সরিয়েছিল। আবারও খবর দেওয়া হবে। কিন্তু এই অবস্থা যাতে বার বার না হয় সে জন্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে পুর-কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই জমি ঘিরে সমস্যা রয়েছে। জমি সংলগ্ন খোলা ভ্যাটটি আপাতত ঘিরে রাখা আছে। তবে পাশেই পুরসভার বাজারের জঞ্জাল বিভাগের শ্রমিকদের পুরনো আবাসন রয়েছে। এই আবাসনের বাসিন্দাদের অন্যত্র পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করা হলে এলাকাটি সুন্দর ভাবে রাখা যাচ্ছে না। আশপাশের লোকজন যখন-তখন ওই জমিতে ঢুকে পড়ছেন। কিন্তু বিকল্প জায়গা না পাওয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের সরানোও সম্ভব হচ্ছে না। জায়গাটি যাতে নোংরা না হয় তা দেখার জন্য নিরাপত্তারক্ষী রাখা যেতে পারে। তবে সে জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো আমাদের নেই।”

ছবি: সুমন বল্লভ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.