|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা |
আলোর নীচে |
অন্ধকারের দ্বীপ |
কাজল গুপ্ত |
দু’দিন বাদেই পরীক্ষা। সুমনের ব্যস্ততা তাই তুঙ্গে। কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই চিন্তা বাড়ে তার। বিধাননগরের সংযুক্ত এলাকার বাসিন্দা সুমন বলে, “অনেক কষ্ট করে মা কেরোসিন তেল যোগাড় করে আনে। তাই অনেক ক্ষণ ধরে হ্যারিকেনও জ্বালিয়ে রাখা যায় না। পড়াশোনা করতে খুব সমস্যা হচ্ছে।”
সংযুক্ত এলাকার বাসিন্দা সুমিত্রা দাসের কথায়: “এখনও সব জায়গায় বিদ্যুৎ পৌঁছল না। রাস্তার আলোও টিমটিম করছে। সন্ধ্যা হলে বাইরে যেতে ভয় লাগে।” টুকরো টুকরো এমন অজস্র ছবি বিধাননগর পুরএলাকায় গেলেই চোখে পড়ে।
এখনও সম্বল হ্যারিকেন কিংবা কুপি। রাস্তায় আলো জ্বললেও সর্বত্র বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ শেষ হয়নি। অথচ, তিন বাতির স্বল্প আলোয় ঝকমক করছে শহরের অন্য অংশ। এক দিকে আলোই নেই, অন্য দিকে আলোর প্রাচুর্য এমনই দ্বৈত পরিবেশ সল্টলেকে।
|
সল্টলেক |
তবে ‘বৈষম্য’ আরও রয়েছে বলে অভিযোগ। যেমন, ত্রিফলা আলোও আবার সর্বত্র লাগানো হয়নি। খোদ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের ওয়ার্ড থেকে বিরোধীদের একাধিক ওয়ার্ড এলাকায় তিন বাতির দেখা নেই। পুরপ্রশাসনের দাবি, পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জায়গায় ‘ত্রিফলা’ লাগানোর কাজ চলছে। অধিকাংশ জায়গাতেই বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। এখনও ‘সামান্য’ কিছু জায়গায় বাকি রয়েছে। সে সব ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর প্রস্তুতি চলছে। মহিষবাথান, নয়াপট্টি, পোলেনাইট, সর্দারপাড়া, বারোকপাট, উত্তর গরুমারা, ছয়নাবি, কুলিপাড়া, খাসমহলের মতো সংযুক্ত এলাকাগুলি ১৯৯৫-তে বিধাননগর পুরসভার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। আঠারো বছরেও সর্বত্র বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ শেষ হয়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিপিএম কিংবা তৃণমূল উভয়েই যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পুরোপুরি কার্যকরী করতে পারেনি। বিধাননগর পুরসভার বিরোধী দল সিপিএমের দাবি, তাদের সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ শুরু হয়েছিল। তবে এখনও কিছু জায়গায় বাকি রয়েছে। তবে ত্রিফলার ক্ষেত্রে সল্টলেকের তুলনায় সংযুক্ত এলাকা ব্রাত্য বলেই দাবি বাসিন্দাদের।
|
সর্দারপাড়া |
পুরসভা সূত্রে খবর, পুর এলাকার বড় রাস্তায় ত্রিফলা লাগানো হচ্ছে। ওয়ার্ডের ভিতরে ত্রিফলা আলো কাউন্সিলর তহবিল থেকে করা হচ্ছে। শুধু সংযুক্ত এলাকাই নয়, খোদ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তৃণমূলের সব্যসাচী দত্তের ওয়ার্ডেও ত্রিফলার দেখা মেলেনি! না কি ত্রিফলায় তাঁর অনীহা? সব্যসাচীবাবুর জবাব: “আলোর দফতর আমার এক্তিয়ারভুক্ত নয়। ফলে কী কারণে আমার ওয়ার্ডে ত্রিফলা পৌঁছল না, বলতে পারব না।”
|
মহিষবাথান |
১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চামেলি নস্কর বলেন, “যে সব জায়গা বাকি রয়েছে, সেখানেও বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ চলছে। তবে ত্রিফলা আলো লাগানোর কাজ হয়নি।”
পুরসভায় বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের ইলা নন্দী বলেন, “বাম আমলে সংযুক্ত এলাকায় বিদ্যুৎ আনার কাজ শুরু হয়েছিল। কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ এখনও পৌঁছয়নি।
ত্রিফলার ক্ষেত্রে সল্টলেক ও সংযুক্ত এলাকার মধ্যে বৈষম্য রয়েছে।”
পুরসভা সূত্রে খবর, বিধায়ক ও সাংসদ তহবিল থেকেও প্রাপ্য অর্থ সংযুক্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজে ব্যয় করা হচ্ছে।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, সল্টলেকের তুলনায় সংযুক্ত এলাকায় ‘অন্ধকার’ বেশি। জবাবে বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “সংযুক্ত এলাকায় আগে সর্বত্র বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তার পরে ত্রিফলা।”
তিনি আরও বলেন, “সল্টলেকে পর্যায়ক্রমে সর্বত্রই ত্রিফলা লাগানো হচ্ছে। ওয়ার্ডগুলিতে কাউন্সিলর তহবিল থেকে ওই কাজ করা হচ্ছে। যাঁরা চাইছেন, সেখানে আলো লাগানো হচ্ছে।” পুরসভা সূত্রে খবর, অনেকে আবার ত্রিফলা আলো ব্যবহার করতে চাইছেন না। যেমন, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুবল রং বললেন, “ওয়ার্ডে বেশি আলো প্রয়োজন। ত্রিফলাতে কাজ হবে না।”
|
ছবি: শৌভিক দে |
|
|
|
|
|