খুশিতে বাঁচুন
ব্যায়ামে বাড়াবাড়ি
ব্যায়াম ভাল। কিন্তু বেশি ভাল নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
কেন?
ব্যায়ামের সময় শরীরে ধকল হয়। এর ফলেই বিশ্রামের সময়ে মাংসপেশির বিকাশ হয়, হাড়ের শক্তি বাড়ে। তাই বিশ্রাম গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিশ্রামের সময় খুব কমে গেলে মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। অস্থির ক্ষয় হয়। একই সঙ্গে মনঃসংযোগে সমস্যা, দীর্ঘ ক্ষণ ক্লান্তিভাব, মাঝেমধ্যেই মেজাজ হারানোর মতো সমস্যাও হতে পারে। আছে আঘাত লাগার আশঙ্কাও। কম ঘুমোলে ক্ষতির আশঙ্কা আরও বাড়ে।
সমস্যা হল, শরীরচর্চা যে মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বা বিশ্রাম যে কম হচ্ছে তা অনেক সময়েই বোঝা যায় না। মনে হয় আর একটু বেশি ব্যায়াম করলেই শরীর চনমনে হয়ে উঠবে, ক্ষমতা বাড়বে। বিশেষ করে যাঁরা ফিট, তাঁদের মধ্যে এ ধরনের মানসিকতা বেশি দেখা যায়। এ ধরনের ক্ষতি এক বার হয়ে গেলে কিন্তু সারতে অনেক সময় লাগে। তবে যাঁরা শরীরচর্চা শুরু করছেন তাঁদের এ ভয় নেই।
সমস্যা হচ্ছে যে কী ভাবে বুঝবেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় ১৩০ ধরনের লক্ষণ রয়েছে। তার অনেকগুলিই বুঝতে গেলে বিভিন্ন পরীক্ষা করার দরকার হয়। যেমন রক্তে ল্যাকটেট আর হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন ইত্যাদি। তবে সুবিধা হল এ ধরনের সমস্যায় অনেকগুলি মানসিক পরিবর্তন হয়। সে দিকে নজর রাখলে সমস্যা যে শুরু হয়েছে তা নিজেই বুঝতে পারবেন।
ব্যায়ামের সময়ে এন্ডোরফিন ক্ষরণ হয়। এতে মেজাজ ভাল হওয়ার কথা। তবে কঠিন ব্যায়ামের পরে মেজাজ অল্প কিছু ক্ষণের জন্য খারাপ থাকতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ ক্ষণ মেজাজ খারাপ থাকলেই মুশকিল। নীচের মানসিক সমস্যাগুলি হলেই সতর্ক হতে হবে। শরীরচর্চার পরে দীর্ঘ সময় ধরে বিরক্তি ভাব। বিষাদ এবং অনুপ্রেরণার অভাব। সারা দিন ব্যায়াম নিয়েই চিন্তা করতে থাকা। কোনও কারণে এক দিন ব্যায়াম করতে না পারলেই মনখারাপ হয়ে যাওয়া।
ঘুমের সমস্যা।
কিছু শারীরিক লক্ষণও দেখা দেয়: মাঝেমধ্যেই ক্লান্ত লাগা। মাংসপেশিতে ব্যথা। তাপমাত্রা ও রক্তচাপ বাড়া। ঘনঘন মাথাব্যথা। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়া। কী মনে রাখবেন?
কত ক্ষণ ব্যায়াম করেছেন, কত বার ব্যায়াম করছেন, কতটা চাপ নিচ্ছেন আর কী মাত্রায় ব্যায়াম করছেন শরীরচর্চা করতে গেলে এই চারটি বিষয় সব সময়ে মনে রাখতে হবে। এর মধ্যে কোনও একটি বা একাধিক বিষয় মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেই মুশকিল।
ধরুন, আপনি দৌড়ান। প্রতি দিনই যদি দৌড়ের গতি এবং সময় বাড়াতে থাকেন তবে আঘাতের আশঙ্কা বেড়ে যায়। আবার ধরুন আপনি প্রতি দিনই ওজন তোলেন। ফলে একই মাংসপেশির উপরে চাপ পড়ে। এর পরে ঠিকমতো বিশ্রাম না নিলে ক্ষতি হতে পারে। আবার প্রতি দিন সার্কিট ট্রেনিং বা ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং করলেও কিন্তু আপনি বাড়াবাড়ি করছেন।
জিমে যন্ত্রের সাহায্যে ব্যায়ামের সময়ও সতর্ক থাকতে হবে। জিমে যন্ত্রের সাহায্যে ওজন নিয়ে ব্যায়াম করার সময়ে আলাদা ভাবে নির্দিষ্ট মাংসপেশির ব্যায়াম হয়। এতে অনেক সময় নিজের ক্ষমতা অনেক বেড়ে গিয়েছে বলে মনে হয়। এই ভুলে অনেকেই জিমে যন্ত্রে আরও কঠোর পরিশ্রম শুরু করেন। ফলে মাংসপেশির ভারসাম্য নষ্ট হয়, শরীরের ক্ষতি হয়। তা ছাড়া মনে রাখতে পুষ্টির বিষয়টিও।
কী করবেন?
প্রথমেই প্রয়োজন বুঝতে হবে। কোন স্তরের ফিটনেস আপনার পক্ষে উপযুক্ত, কোন ব্যায়াম করবেন, কী মাত্রায় করবেন তার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। যখনই বুঝতে পারছেন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে তখনই ব্যবস্থা নিন। প্রথমে কিছু দিন ব্যায়াম বন্ধ রাখুন। বসে না থেকে এ সময়ে স্ট্রেচিং করতে পারেন। অন্তত আট ঘণ্টা অবশ্যই ঘুমোবেন। ঠিকমতো খান। শরীরচর্চার প্রাথমিক বিষয়গুলিতে নজর দিন। দেখুন, ঠিকমতো ছুটছেন কি না? ঠিকমতো স্কোয়াট করছেন কি না?
পুশ-আপ, পুল-আপ ঠিকমতো করছেন কি না?
ব্যায়ামের পরে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে মাংসপেশির বিকাশ হয়, সহ্যক্ষমতা বাড়ে। কিন্তু দেখা গিয়েছে এক ঘণ্টার বেশি ব্যায়ামে পরে নিত্য কাজের চাপে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে শরীরের ক্ষতি হয়। তাই ওয়ার্ম-আপ আর কুল-ডাউন মিলিয়ে এক ঘণ্টার বেশি ব্যায়াম করবেন না। তা ছাড়া সপ্তাহে অন্তত এক দিন পুরো বিশ্রাম। বাকি ছ’দিন হালকা, মধ্যম ও তীব্র মাত্রায় ব্যায়াম করুন। বিভিন্ন দিন, বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করুন। যেমন, সপ্তাহে ছ’দিনই দৌড়ানোর বদলে এক দিন সাঁতার, এক দিন ওজন নিয়ে ব্যায়াম আর চার দিন দৌড়ান। এতে শরীরের নানা অংশের ব্যায়াম হবে। পাশাপাশি কোনও একটি অংশের উপরে চাপ বাড়বে না। একঘেয়েমিও কেটে যাবে।

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.