চাওয়া হয়েছিল ২০ কোটি টাকা। বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ৩ কোটি টাকা। কোচবিহার জেলায় গত ডিসেম্বর মাস থেকেই টাকার অভাবে ধুঁকছে ১০০ দিনের কর্মসংস্থান প্রকল্প। ওই প্রকল্পে জবকার্ডধারীদের কর্মদিবস বাড়ানোর পরিকল্পনাও কার্যত শিকেয় উঠেছে। চলতি আর্থিক বছরে ১ হাজার ৭০০ র বেশি প্রকল্পে আর্থিক বরাদ্দ কী ভাবে দেওয়া হবে তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “সম্প্রতি ওই প্রকল্পে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলেছে। আরও বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আর্জি জানিয়েছি।” কোচবিহার জেলায় ২০১১-১২ আর্থিক বছরে ১০০ দিনের প্রকল্পে ৮৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা খরচ করা হয়। জবকার্ডধারী আগ্রহী আবেদনকারীদের গড়ে ১৪ দিন কাজ দেওয়া হয়। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৮০ কোটি ২ লক্ষাধিক টাকা আগ্রহী। জবকার্ডধারীরা গড়ে ২৫ দিন কাজ পেয়েছেন। ডিসেম্বর মাস থেকে চাহিদা মত বরাদ্দ মিলছে না। ফলে, টাকার অভাবে ওই কাজের দিন সংখ্যা বাড়িয়ে ৪০ দিন করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে প্রশাসন। তাই রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কাছে ২০ কোটি টাকা জরুরি ভিত্তিতে বরাদ্দ চেয়ে আর্জি জানানো হয়। গত সপ্তাহে ওই প্রকল্পের জন্য মাত্র ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে জবকার্ডধারীদের কাজের দিনসংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের একটি সূত্রেই দাবি করা হয়েছে, নতুন করে বরাদ্দ না দেওয়া হলে চলতি আর্থিক বছরে গড়ে জবকার্ডধারীদের ৩০ দিনের বেশি কাজ দেওয়া সম্ভব হবে না। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোচবিহার জেলা নোডাল অফিসার অম্লান তালুকদার অবশ্য বলেন, “ফের বরাদ্দ পাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা ৪০ দিন কাজ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা মাথায় রেখেই এগোচ্ছি। তা ছাড়া হাতে এখনও পুরো মার্চ মাস রয়েইছে।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, চলতি আর্থিক বছরে ফেরুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বরাদ্দের ৯১ শতাংশের বেশী টাকা খরচের হিসেব জমা দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কোচবিহারের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় দুই হাজার প্রকল্প অনুমোদন হয়ে রয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ সংস্কার পুকুর খনন ও সংস্কার আলবাঁধ তৈরি, নিচু মাঠ সংস্কারের মত বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। আর্থিক বছর শেষের আগে ওই সব কাজ সম্পূর্ণ করতে হলে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা দরকার। প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, যা বরাদ্দ এসেছে তা দিয়ে বড় জোর অনুমোদিত প্রকল্পগুলির মধ্যে ২৭৯ টি সম্পূর্ণ করা যেতে পারে। বরাদ্দ খরচে পারফরম্যান্স খতিয়ে দেখে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ওই প্রকল্পগুলির তালিকা করা হচ্ছে। মাথাভাঙার পচাগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কাজল রায় বলেন, “দুই মাস আগে ৩৭ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়। কিন্তু ২৫ লাখ টাকা কয়েক ধাপে দেওয়া হয়। এখনো বাকি ১২ লাখ টাকা পাইনি। কবে পাব সেটাও কেউ বলতে পারছেন না। ফলে ১০ টি প্রকল্পের কাজ শুরুই করা যাচ্ছে না। ঠিকঠাক বরাদ্দ পেলে মার্চের মধ্যে ৫০ লক্ষ টাকার কাজ করার সুযোগ আছে। তাই প্রকল্প তৈরি করে রেখেছি।” সব মিলিয়ে জেলার ৫ লক্ষ ৯২ হাজার জবকার্ডধারীর মধ্যে আগ্রহী আবেদনকারীর কর্মদিবস কতটা বাড়ানো যাবে সেই হিসেব কষছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। |