অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১১টা। প্রায় ১৫ ফুট লম্বা লোহার গেট ধীরে ধীরে খুলে গেল। খাতায় নাম লিখিয়ে গেটের ভেতর দিয়ে ঢুকে পড়লেন ২৫-৩০ জন শ্রমিক। ‘ইউনির্ফম’ পরা কয়েকজন শ্রমিক বেরিয়ে এলেন। অনবরত ভেসে আসছে অতিকায় যন্ত্রের ধাতব আওয়াজ। ভেতরে ঢুকল দশ চাকার দুটি ট্রাক। বৃহস্পতিবার এমন ছবি দেখা গেল জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া রানিনগর শিল্প বিকাশ কেন্দ্রে। এক বহুজাতিক ঠান্ডা পানীয় প্রস্তুতকারী সংস্থার শ্রমিকরা নিজেরাই ধর্মঘট উপেক্ষা করে কাজে নেমেছেন। পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের পক্ষে আধিকারিক দেবাশিস দাশগুপ্ত বলেন, “বুধ ও বৃহস্পতিবার রানিগরের ১৫টি কারখানায় কাজ হয়েছে।”
বাম, ডান সহ ১১টি শ্রমিক সংগঠনের ডাকা বুধ ও বৃহস্পতিবারের সাধারণ ধর্মঘটের দুদিনই স্বাভাবিক ছন্দে ছিল রানিনগর কেন্দ্র। বুধবারের মত এ দিনও জলপাইগুড়ি শহরের রাস্তা ছিল সুনসান। দোকান-বাজার বন্ধ ছিল। যদিও শহর থেকে থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে দেখা গেল অন্য ছবি। ওই পানীয় সংস্থার শ্রমিক রসনাথ রায় বললেন, “ধর্মঘটের কথা শুনেছি। কিন্তু কাজ না করলে খাবার জুটবে কী ভাবে? শ্রমিকের অধিকারের দাবিতে ধর্মঘট জানি। |
আমার কাছে শ্রমিকের প্রথম অধিকার কাজের অধিকার। বাড়িতে ছেলে মেয়ে রয়েছে। দু’দিন কাজ না করলে খাবার জুটবে না।” বেকারিতে খাটেন আলি হুসেন। তিনি বলেন, “রানিনগরে ছোট বড় কারখানার শ্রমিক অনেকে নানা সংগঠনে। কিন্তু কাজ না করলে কেউই মজুরি পাবেন না। সংগঠন তো আর পেটের ভাত জোগাবে না। তাই কাজ করেছি।” এলাকার বামনপাড়ার বাসিন্দা শ্রমিক উত্তম সরকারের কথায়, “কেউ কেউ ধর্মঘটের কথা বলছিলেন। দু’দিনের হাজিরা কেটে নিলে সমস্যা হবে বলায় ওই নেতারা চলে গিয়েছেন।” বস্তুত, প্রশাসনের নজরদারিও ছিল রানীনগর শিল্প বিকাশ কেন্দ্রে। কোতোয়ালি থানার মোবাইল ভ্যান দিনভর নজরদারি চালিয়েছে। ঠান্ডা পানীয়, বেকারি, থেকে শুরু করে গবাদি পশুর খাদ্য তৈরি, ইন্ডিয়ান অয়েলের বটলিং প্লান্টের মত বিভিন্ন সংস্থার কারখানা রয়েছে রানিনগরে।
সিটুর জেলা সম্পাদক তথা ধর্মঘট সমর্থনকারী শ্রমিক সংগঠনগুলির জেলা আহ্বায়ক জিয়াউল আলম বলেন, “বুধবার রানিনগরে ধর্মঘট হয়েছে। বৃহস্পতিবার কিছু মুষ্টিমেয় লোক কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে রাজগঞ্জের খাদ্য ও সার প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির কারখানায় সর্বাত্মক বনধ হয়েছে।” ডানপন্থী সংগঠন হিন্দ মজদুর সভার সর্বভারতীয় সম্পাদক সমীর রায় বলেছেন, “কয়েক জন শ্রমিক রানিনগরে কাজে যোগ দেন। তা ছাড়া কটা শিল্প রয়েছে সেখানে? বাগানগুলিতে বনধ সফল হয়েছে।” তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের রানিনগর শাখার নেতা মানিক চন্দ বলেন, “রানিনগরের সব শ্রমিকই আমাদের দলের সমর্থক। শ্রমিকরা স্বাভাবিক ভাবে যাতে কাজ করতে পারেন, সে দিকে নজরদারি রাখা হয়। স্বার্থান্বেষী সংগঠনগুলির শ্রমিক বিরোধী ধর্মঘট রানিনগরে ভেস্তে গিয়েছে।” |