স্নাতকোত্তরে অভিন্ন প্রবেশিকা এ বছর নয় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
আপত্তি তুলেছিল প্রেসিডেন্সি, যাদবপুর-সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। শেষ পর্যন্ত চলতি বছরেই অভিন্ন প্রবেশিকার মাধ্যমে স্নাতকোত্তরে ছাত্র ভর্তির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হল রাজ্য সরকারকে। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর উপাচার্যদের কাছে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছে, ২০১৩-’১৪ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ৪০% আসনে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদেরও ভর্তির সুযোগ দেবে। এর অর্থ, ৬০% আসনে বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের পড়ুয়া ভর্তি করবে। ৪০% আসনে নিজেদের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সঙ্গে সুযোগ পাবেন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও। ওই ৪০% আসনে ভর্তির প্রক্রিয়া কেমন হবে, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষই তা ঠিক করবেন। বিগত শিক্ষাবর্ষে এই সূত্র মেনেই ছাত্র ভর্তি করেছে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়।
অভিন্ন প্রবেশিকার মাধ্যমে একটিই মেধা-তালিকা তৈরি করে তার ভিত্তিতে রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ছাত্র ভর্তির পরিকল্পনা করেছিল উচ্চশিক্ষা দফতর। সেই পরিকল্পনার মূলে ছিল উচ্চশিক্ষা সংসদের সুপারিশ। সংসদের বক্তব্য, সব পড়ুয়াকে সমান সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এই ধরনের ব্যবস্থা দরকার। কিন্তু রাজ্যের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের এই যুক্তি মানতে চায়নি। সেই তালিকায় যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সির সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে উত্তরবঙ্গ, গৌড়বঙ্গ, এমনকী সম্প্রতি চালু হওয়া সিদো-কানহু-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ও।
যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সি জানায়, ভাল মানের ছাত্রছাত্রী পাওয়ার জন্য তারা ২০১৪ সালে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ইন্টিগ্রেটেড বা সুসংহত পাঠ্যক্রম চালু করতে চায়। সে-ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তরে আলাদা করে ভর্তির সুযোগ কমবে। প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ আরও জানান, নতুন ছাঁদে ঢেলে এই প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বমানে পৌঁছে দেওয়ার যে-চেষ্টা চলছে, অভিন্ন প্রবেশিকা তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
অভিন্ন প্রবেশিকায় সায় দেননি উত্তরবঙ্গ, গৌড়বঙ্গ, সিদো-কানহু-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষও। তাঁদের বক্তব্য, এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনগ্রসর জেলার ছেলেমেয়েরা পড়তে আসেন। অভিন্ন প্রবেশিকায় তাঁরা বঞ্চিত হতে পারেন। ওই প্রবেশিকার সূত্রে দূরের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠাঁই হলে ওই পড়ুয়াদের অনেকেরই, বিশেষত মেয়েদের পড়াশোনার ইতি ঘটতে পারে। কারণ সেখানে যাওয়ার আর্থিক সামর্থ্য ও অন্যান্য সুযোগ অনেকেরই নেই।
গত বছর ৬০% আসনে নিজেদের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ৪০% আসন সকলের জন্য মুক্ত করে দিয়েছিল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। এ ভাবেই ছাত্র ভর্তি হয়েছে। এবং তা নিয়ে কোনও স্তরেই কোনও অভিযোগ ওঠেনি। তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার কেন স্নাতকোত্তরে অভিন্ন প্রবেশিকা চালু করতে আগ্রহী, সেই প্রশ্নও উঠেছে। আবার যে-সংস্থাকে অভিন্ন প্রবেশিকা নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে স্থির হয়েছিল, সেই কলেজ সার্ভিস কমিশন (সিএসসি)-ও জানিয়ে দেয়, তড়িঘড়ি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যাবে না।
উচ্চশিক্ষা সংসদ জানিয়েছিল, ২০১৩-’১৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য অভিন্ন প্রবেশিকা হবে ১৫ জুনের মধ্যে। ২৫ জুনের মধ্যে ফল বেরোবে। বৃহস্পতিবার সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “পরীক্ষার ব্যবস্থাপনার জন্য কলেজ সার্ভিস কমিশনের কিছুটা সময় দরকার। তাই এ বছর অভিন্ন প্রবেশিকা হল না।” তিনি জানান, আগামী বছর থেকে স্নাতকোত্তরে অভিন্ন প্রবেশিকার মাধ্যমেই স্নাতকোত্তরে ছাত্র ভর্তি হবে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যে-সব কারণে আপত্তি তুলেছে, কী ভাবে সেগুলির নিষ্পত্তি হবে, তা স্পষ্ট নয়। বিশেষত, যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি যদি অভিন্ন প্রবেশিকার মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি না-করে, রাজ্য অন্যদের এই ব্যাপারে বাধ্য করাতে পারে কি না, সেই প্রশ্নেরও জবাব মেলেনি। ফলে আগামী বছরেও অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। |