শক্তি-জিনাতের ছায়ায় নিজেদের খুঁজছেন দাদা-ভাই
কী গো, তুমার শক্তি কপূর কই...
— আসবে আসবে, সব্বাই আসবে।
আর জিনাত আমন?
— উঃ বললাম তু, সবাই আসবে... এখন যাও। কথা বলতে দাও।
ঝাঁকড়া গাছ। পুরুষ্টু গুঁড়ি। ইয়া সব ডাল। তার ছায়া-বৃত্তে দাঁড়িয়ে কথা।

সে জো আছে! একে হুজুগে জনতা, তা-য়, ওই দেখুন...
গাছের দীর্ঘ শাখায় অজস্র হনুমান।

এই হ্যাট হ্যাট, দিল রে ফেনা (বরবাদ) করে। আসলে এই কুড়োল গাছ হনুমানের বড় প্রিয় কি না!
ম্যাজেন্টা পাঞ্জাবির হাতায় কপাল মুছে খেঁকিয়ে ওঠেন,
— তুমাদের দেখছি কথা শুনবার ইচ্ছাই নাই। ঠায় ভিড় করে আছ। গাছে হনুমান, মাঠে তুমরা...
স্পষ্টই বিরক্ত তিনি।

এটাই বুঝি কুড়োল গাছ, এই গাছেই..?
হেসে ফেলেন।
— হ্যাঁ, এই গাছেই দাদাকে বেঁধে টাকা আদায় করব বলেছিলাম। তা তুমি যদি বহরমপুরের রবিনহুড হও, তা হলে আমি হলাম রেজিনগরের, এই বলে রাখলাম!
মারকাটারি হুমকির সঙ্গে চোখ ধাঁধানো পাঞ্জাবি। নির্বাচনী জৌলুসটাই ছিনিয়ে নিয়েছেন! নিজেই বলছেন
— ম্যাজেন্টার সঙ্গে দু’টো ময়ূরকণ্ঠী নীল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরছি। তবে, কাচা হচ্ছে না।
তেরো গাড়ির কনভয়, শ’দেড়েক বাইক আর লাল হুড খোলা জিপ।

— জিনাতদিকে মাঝে রাখব বুঝলেন, রাস্তার যা হাল, ঝাঁকুনিতে পড়ে গেলে রোড-শোটাই ফেনা!
তাঁর চকচকে মোবাইল বেজে ওঠে। প্রবল হল্লা। কালো কাচ তুলে ধূসর ইনোভা ধুলো উড়িয়ে সটান ঢুকে পড়ে লোকনাথপুরের মাঠে। গাড়ি তাক করে ছুট জনতার। এসেছে বোম্বাইয়ের ই-স্টারেরা এসে গিয়েছে।
গাড়ি থামতেই কাচের গায়ে টোকা।

‘কই জিনাত, দেখা দাও’ নাতনি কোলে প্রাক-চল্লিশ নাজমা বিবি হাঁ মুখে অপেক্ষায়।
রোদচশমা ঠিক করে ‘চুরা লিয়া’ হাসি ছড়িয়ে সদ্য-ষাট ‘জিনাতদি’ নেমে আসেন ধুলোয়।
দুধ-সাদা চুড়িদারের শক্তি কপূর তখনও গাড়িতে। তাঁর ঢুলুঢুলু চোখ দেখে আন্দুলবেড়িয়ার মোক্তার অস্ফুটে বলেই ফেলেন,
— ‘কী গো, হরলিক্স (মদ) খেয়ে লিয়ছ!’

কেউ না বুঝলেও ম্যাজেন্টা পাঞ্জাবি কটাক্ষটা আঁচ করে ধুলো মাখা স্নিকার দাপিয়ে এগিয়ে আসেন
— এই হট্, হট্ এখান থেকে।
হুজুগে জনতা আর হনুমান হটিয়ে তিনি চড়েন হুডখোলা জিপে । হাত বাড়িয়ে দেন ‘জিনাতদি’র দিকে।

— কেমন দেখছেন? এমন পারবেন আপনাদের দাদা? এত লোক, এত স্টার? এত দিন তো আমাদের দলের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীদের হাফপ্যান্ট-মন্ত্রী বলে এলেন। তা এ বার কেন নিজে সেই হাফপ্যান্টেই? দাদাকে বলবেন, ভেবে-চিন্তে কথা বলতে হয়।
রাজ বব্বর যখন রেজিনগরে এলেন, তখন তো আপনার দাদার রোড শো-য়ে দেদার লোক হয়েছিল...
— বললেই হল! ক’টা মাত্র দলীয় কর্মী। উনি তো আমাকে হারাতে এখানেই পড়ে আছেন। ভাবছি, ওঁকে রেজিনগরের প্রতিমন্ত্রী করে দেব!
তবে পরক্ষণেই ভ্রু-কুঁচকে যাচ্ছে।
— দাদাকে বলছি, ঘুঘু দেখেছে, ফাঁদ দেখেনি! ফল বেরনোর পরে বুঝবে, আমি কী জিনিস।
ম্যাজেন্টা পাঞ্জাবি, রেজিনগরে তৃণমূল প্রার্থী, রাজ্যের মন্ত্রী, হুমায়ুন কবীর। তিনি ঠিক কী জিনিস, জানেন?
শক্তিপুরের মাঠে সভা ভাঙল।

মঞ্চ থেকে এক লাফে নেমে মোবাইলে এ পর্যন্ত আসা মিস্ড-কলগুলোয় এক ঝলক চোখ বুলিয়ে নেওয়ার ফাঁকে তাঁর দাদা বলছেন,
— জানব না? এত দিন যে দলটা কোলে-পিঠে করে মানুষ করল, মন্ত্রীর লোভ দেখাতেই সে সরে পড়ল। সে কী জিনিস জানব না!
কিন্তু আপনার সঙ্গে মনোমালিন্যের ফলেই তো...
— দেখুন, তিরিশ বছর ধরে ওকে দেখছি। দলে মন কষাকষি হয়ই। তবে ও যে এতটা লোভী তা বুঝিনি। মমতা অন্তত এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করেছেন। ওঁকে দলে নিয়ে চিনিয়ে দিয়েছেন বেইমান কাকে বলে।
ক্রমাগত ফোন বাজছে। জনা কয়েক গ্রামীণ মহিলা এসে তাঁর হাত চেপে ধরতেই ‘দাদা’ বলছেনআপনাদের কাছে ভোট চাইব না। শুধু মনে রাখবেন ওই মিরজাফরটা যেন ভোট না পায়।
কেন?
— শুনুন, আমরা নবাবের দেশের লোক। নবাবিয়ানা কমতে পারে তবে আভিজাত্য কমে না। কংগ্রেসেরও তাই। বিশ্বাসঘাতকের ঠাঁই নেই। ও-ও তো জানে, ওর দাদা কী ধাতুতে গড়া।
দাদা? বোতাম লাগানো ফুলশার্ট, রেজিনগরে কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় ভরসা এবং হ্যাঁ, তিনিও দিল্লির মন্ত্রী, অধীররঞ্জন চৌধুরী।
দাদা আর ভাই। বহরমপুর আর রেজিনগর। যেন যুযুধান দুই জনপদ।
মাঝে রাই-সর্ষের অনন্ত আবাদের পাশে পড়ন্ত বিকেলে হাঁ-মুখে দাঁড়িয়ে রোড-শো দেখতে দেখতে গফুর আলি শুধু জেনে নিতে চান
— “বলো তো, যার ই-স্টার দেখতে যাব, তাকেই ভোট দিতে হবে না কি?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.