অস্ট্রেলিয়া আর ভারত দু’দলই টেস্ট সিরিজ শুরুর দোরগোড়ায় নিশ্চয়ই মাথায় রাখবে, ওদের পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাটনটা এখন নয়া প্রজন্মের হাতে উঠতে চলেছে। গত পনেরো বছরে এই দু’দেশের মধ্যে বেশ কিছু প্রচণ্ড কড়া লড়াই হয়েছে। সেই পরম্পরা এখন একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটারের হাতে। সে কারণে দু’দেশের কাছেই এই সিরিজটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের গত দু’বছর টেস্ট ক্রিকেটে পারফরম্যান্স বেশ নীচে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের সেটা ওল্টানো দরকার। সম্ভবত গম্ভীরকে প্রথম দু’টো টেস্টে নির্বাচকদের বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্যে সেই চেষ্টা ফুটে উঠছে। গম্ভীরের বেশ কিছু দিন যাবত ব্যাটিং ফর্ম অন্য রকম গেলেও ওর দল থেকে বাদ পড়াটা ভীষণ অপ্রত্যাশিত। গম্ভীর অতীতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভাল করা ছাড়াও একজন লড়াকু চরিত্রের ক্রিকেটার। ভারতীয় দলের অবিসংবাদী অংশ। ফলে ওকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা অবশ্যই কঠিন ছিল। এত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজে ওর আর সহবাগের ওপেনিং জুটি ভেঙে দেওয়াটাও একটা ঝুঁকির কাজ হয়েছে।
ভারতের আর একটা বড় সিদ্ধান্ত হল হরভজন সিংহকে দলে রাখা। বর্ষীয়ান অফস্পিনার নিশ্চয়ই বুঝবে এটাই ওর শেষ সুযোগ প্রমাণ করার যে, এখনও সর্বোচ্চ পর্যায়ে কিছু করে দেখানোর মশলা ওর ভেতর আছে। আর এ জাতীয় চ্যালেঞ্জ বরাবর হরভজনের থেকে সেরাটা বার করে আনে। মিডিয়ার আকর্ষণ কেড়ে নেওয়ার একটা ব্যাপারও ওর মধ্যে থাকে। যেটা টিমের বাকিদের মিডিয়ার তীক্ষ্ম নজর এড়িয়ে অন্তত কিছুটা শান্তিতে খেলার সুযোগ করে দেয়। যা ধোনি আর ওর দলের পক্ষে উপকারী হতে পারে। বিশেষ করে ধোনি খুশি হবে এই মুহূর্তে কিছুটা মিডিয়ার নজরের বাইরে থাকায়। টেস্টে ওর দলের খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য ওকে প্রচুর সমালোচনার সামনে পড়তে হয়েছে। যদিও সেগুলো ন্যায্য সমালোচনা। কারণ, ভারতের অধঃপতনটা আচমকাই হয়েছে এবং সেটাও র্যাঙ্কিংয়ে একেবারে শীর্ষস্থান থেকে প্রায় তলানিতে।
ধোনি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দুর্ধর্ষ। কিন্তু ওর টেস্ট রেকর্ড ধারাবাহিকতাহীন। টেস্টে ভারতের ক্যাপ্টেন্সির প্রশ্নে বিকল্প ছিল। একটা সময় সহবাগের নাম শোনা গিয়েছিল। সম্প্রতি বিরাট কোহলির নাম নিয়েও আলোচনা হচ্ছিল। কোহলি অধিনায়ক হিসেবে খুব ভাল হতে পারে। ও কঠিন অবস্থায় ভাল খেলে দেখিয়েছে। যদিও মাঝেমধ্যে ও হঠাৎ করে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে মাঠে। তবে কে বলতে পারে, অধিনায়কত্ব পেলে ওই আবেগটাই মাঠে ওকে আরও বেশি সাহায্য করবে না! অস্ট্রেলীয়দের বিরুদ্ধে পূজারাকে দেখতেও আমি অধীর হয়ে আছি। ও অনেকটাই দ্রাবিড়ের ঘরানার এবং যথেষ্ট প্রতিভাবান আর নজরকাড়া তরুণ ব্যাটসম্যান। ও যদি ভাল মতো উন্নতি করে তা হলে ভারতের মিডলঅর্ডারে ইস্পাত হয়ে উঠতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার কথায় বলতে পারি, এই দলটা এক বছর আগে ভারতের বিরুদ্ধে খেলা অস্ট্রেলিয়া টিমের তুলনায় বেশি অভিজ্ঞ আর জমাট। মাঝের মাসগুলোয় মাইকেল ক্লার্কের দল লম্বা পা ফেলে এগিয়েছে এবং ওরা জানে এই সিরিজটা ওদের কড়া পরীক্ষা নেবে।
অস্ট্রেলীয়দের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে স্পিন বোলিং। বেশির ভাগ অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান আইপিএল খেলেছে। ভারতীয় উইকেট আর পরিবেশ সম্বন্ধে ভাল জানে। তবে টেস্ট ক্রিকেট অন্য চ্যালেঞ্জ। যার জন্য অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের তৈরি থাকা দরকার। অস্ট্রেলীয় স্পিনারদের কাছেও এই সিরিজ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের মাটিতে ইংল্যান্ডের টেস্ট সিরিজ জয়ে মন্টি পানেসর আর গ্রেম সোয়ান বিরাট ভূমিকা নিয়েছিল। ওই মানের স্পিনার হয়তো অস্ট্রেলিয়ার নেই। লিয়ঁকে নিয়ে তেমন হইচই হয় না। তবে ও কখনও লড়াই করতে পিছপা নয়। সচিনদের বল ফ্লাইট করাতেও চাইবে। পেস আক্রমণে মিচেল স্টার্ক-পিটার সিডল-জেমস প্যাটিনসনকে নিয়ে বেশ দক্ষই অ্যাটাক। মোজেস হেনরিকের কাছে শুক্রবারটা একট বিরাট দিন। যেহেতু সে দিন ওর মাথায় ব্যাগি গ্রিন উঠবে। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ও একজন ভাল সম্ভাবনা। যার খেলাটা অনেকটা শেন ওয়াটসনের মতোই অলরাউন্ড।
যদিও রিকি পন্টিং আর মাইক হাসি বাদে সাম্প্রতিককালে এই প্রথম অস্ট্রেলিয়াকে ভারতে খেলতে হচ্ছে বলে আমার দেশের কাছে এটা বিরাট চ্যালেঞ্জিং সিরিজ। তবে আমি দারুণ আশাবাদী যে, অস্ট্রেলীয়রা আগামী কয়েক সপ্তাহে ভারতীয় পরিবেশ খুব ভালই মানিয়ে নেবে। এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়া দল এক নম্বর হয়ে ওঠার থেকে খুব একটা দূরে নেই। এবং ভারত সফরটা অস্ট্রেলিয়া টিমের উন্নতির ব্যাপারে খুব গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ।
সব শেষে যে ব্যাপারে আমি বিশেষ দ্বিধা দেখাই না, সিরিজের স্কোরলাইন নিয়ে সেই ভবিষ্যদ্বাণী করতে হলে বলবআমার হিসেবে ভারত ২-১ জিতবে! |