|
|
|
|
মৃত্যুদণ্ড রদের আর্জি খারিজে আপাতত ছেদ চান রাষ্ট্রপতি |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর গত সাত মাসে সাত জনের মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি খারিজ করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই ফাঁসি কাঠে ঝোলানো হয়েছে আজমল কসাব ও আফজল গুরুকে। কিন্তু আপাতত এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ছেদ টানতে চাইছেন রাষ্ট্রপতি।
আফজল গুরুর ফাঁসির পর গত সপ্তাহে বীরাপ্পনের চার সঙ্গীর মৃত্যুদণ্ডের আর্জি খারিজ করে দেন প্রণববাবু। কিন্তু তার পরেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে তাঁর কাছে এই সংক্রান্ত আরও সাতটি ফাইল পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে পাঁচটি ঘটনায় অপরাধীদের ফাঁসির সাজা মকুব না করারই পরামর্শ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু সূত্রের খবর, সম্প্রতি সেই ফাইল রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা মাত্রই রেগে যান তিনি। তাঁর সচিবালয়ের আমলাদের তিনি বলেন, এ ভাবে লাগামছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্পর্শকাতরতার বিষয়টি ভাবা উচিত। স্বল্প সময়ের মধ্যে একের পর এক মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি খারিজ করলে ঘরে বাইরে ভাল বার্তা যাবে না। তাই মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি খারিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রসঙ্গত, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল তাঁর মেয়াদে তিনটি মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি খারিজ করেছিলেন। তাঁর মেয়াদের শেষ লগ্নে পৌঁছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পরামর্শে ৩৫টি মামলায় ফাঁসির সাজা কমিয়ে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরামর্শ দেন। কিন্তু প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর প্রথম সাত মাসেই চারটি মামলায় সাত জনের মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি খারিজ করেন। যদিও এ সব ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকই আর্জি খারিজের পরামর্শ দিয়েছিল। সাংবিধানিক রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাতে সায় দিয়েছেন মাত্র। কিন্তু স্বল্প সময়ে এতগুলি আর্জি খারিজ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। তা ছাড়া, রাষ্ট্রপুঞ্জে যখন মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি বন্ধের জন্য প্রস্তাব গৃহীত হচ্ছে, তখন ভারতে সেই প্রথা চলায় মানবাধিকার সংগঠনগুলিও সমালোচনা শুরু করেছে। বীরাপ্পনের চার সঙ্গীর মৃত্যুদণ্ডের আর্জি রাষ্ট্রপতি খারিজ করার পর তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। তাদের আইনজীবী আদালতে জানান, ফাঁসির সাজাই যখন দেওয়া হবে, তখন ৯ বছর ধরে কেন তাদের মানসিক যন্ত্রণা দেওয়া হল? এই অবস্থায় আদালত আপাতত মৃত্যুদণ্ডের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে।
সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, আসলে রাজনৈতিক কারণে আফজল গুরুর ফাঁসির সিদ্ধান্ত নিয়ে যেমন দীর্ঘসূত্রতা করা হয়েছে, তেমনই বাকি মামলাগুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেও দীর্ঘসূত্রতা দেখিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর মৃত্যুদণ্ড মকুব সংক্রান্ত ১১টি ফাইল পুনরায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়ে মতামত জানতে চেয়েছিলেন। ওই ফাইলগুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি অনেক দিন ধরেই ঝুলে রয়েছে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলও তাঁর মেয়াদে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেননি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিবেচনা করে সব ফাইল এক সঙ্গে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোতেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। রাজনীতির কারবারিদের মতে, এটা ঠিকই যে মৃত্যুদণ্ড মকুবের ব্যাপারে সরকার তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকই রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিচ্ছে। এবং রাষ্ট্রপতি পরামর্শটি মানছেন। কিন্তু এ-ও ঠিক যে সাধারণ মানুষ এত খুঁটিনাটি জানেন না। বরং অনেকে মনে করছেন, হয়তো রাষ্ট্রপতিই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সম্ভবত সেই কারণেই এ বার মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি খারিজের ব্যাপারে পরবর্তী কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সময় নিতে চাইছেন রাষ্ট্রপতি। যাতে তাঁর ভাবমূর্তিতে কোনও নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। |
|
|
|
|
|