|
|
|
|
ভারসাম্যের রাজনীতি |
মন্দার আবহেও সামাজিক প্রকল্পে জোর রাষ্ট্রপতির |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
লোকসভা ভোটের কার্যত আর এক বছর বাকি। তার আগে সংসদে তাঁর বক্তৃতায় প্রকারান্তরে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের এক রিপোর্ট কার্ড আজ তুলে ধরলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। যেখানে আর্থিক মন্দার কথা মেনে নিয়েও সামাজিক প্রকল্প রূপায়ণের ওপরে জোর দিলেন তিনি। অনেকেই বলছেন, এটা আসলে সরকার ও দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথের পর এই প্রথম বাজেট অধিবেশনের যৌথ সভায় বক্তৃতা দিলেন প্রণববাবু। বক্তৃতায় তিনি যেমন ঘরে-বাইরে আর্থিক সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ জানালেন, তেমনই সরকারের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে তুলে আনলেন রোজগার গ্যারান্টি, নগদ হস্তান্তর, জননী সুরক্ষার মতো সামাজিক প্রকল্প রূপায়ণের প্রসঙ্গ। জানালেন, তাঁর সরকার খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ করাতে বদ্ধপরিকর।
কিন্তু যৌথ সভায় তাঁর সেই বক্তৃতা শেষ হতেই রাজনীতির কারবারিরা প্রশ্ন তুললেন, এর মধ্যে নতুন কী? বরং যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফের ক্ষমতায় এসেছিল ইউপিএ তার অনেক কিছুই এখনও পূরণ হয়নি। উল্টে বহু চর্চায় সেই বিষয়গুলিও এত দিনে ক্লিশে হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার মধ্যে ধন্ধও রয়েছে প্রচুর। এক দিকে যখন আর্থিক সঙ্কট এবং ঘাটতির কথা বলা হচ্ছে, তখন খাদ্য সুরক্ষার মতো সামাজিক প্রকল্পে বিপুল বরাদ্দই বা হবে কী ভাবে?
স্বাভাবিক ভাবেই রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার পর বিজেপি নেতৃত্ব বলেন, “সরকারের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে যেন মুদিখানার তালিকা পড়লেন রাষ্ট্রপতি। মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতি ও দুর্নীতির প্রসঙ্গে দেশে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলার দিশাও দেখা গেল না রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায়। উল্টে সরকারের দেউলিয়াপনাই ধরা পড়ল বাজেট অধিবেশনের শুরুতে।”
সংসদের বাজেট অধিবেশনের যৌথ সভায় রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা তৈরি করে সরকার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা অনুমোদন করা হয়। এবং বরাবরই রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় সরকারের সাফল্যের কথাই মূলত তুলে ধরা হয়। সে দিক থেকে লোকসভা ভোটের আগে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা যে এ বার সরকারের প্রচারপত্র হয়ে উঠবে, সেই ধারণা আগাম ছিলই।
আজ তার অন্যথাও হয়নি। তবে অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ যে সতর্কবার্তা শোনাচ্ছেন, আজ রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার শুরুতেও সেই একই প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়। প্রণববাবু বলেন, আরও বেশি সুযোগ, সম্ভাবনা, পরিকাঠামো উন্নয়ন, নিরাপত্তা নিয়ে মানুষের চাহিদা এখন ক্রমশই বাড়ছে। এক দিকে যখন সেই আকাঙ্ক্ষা বাড়ছে, তখন আর্থিক মন্দা, রোজগারের নিরাপত্তা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি নিয়ে সরকারের ওপর চাপও বাড়ছে। অথচ গত এক বছরে বিশ্ব অর্থনীতির পাশাপাশি ঘরোয়া অর্থনীতিও সঙ্কটের মধ্যে কাটিয়েছে। ফলে সরকারকে এই দুই পরিস্থিতি মাথায় রেখেই কাজ করতে হচ্ছে। আবার সরকারকে আর্থিক ঘাটতি কমানোর ব্যাপারেও ভাবতে হচ্ছে। তা ছাড়া মূল্যবৃদ্ধির হার কিছুটা কমলেও তা এখনও উদ্বেগের কারণ।
এই আর্থিক সঙ্কটের কথা জানানোর পরেই রোজগার গ্যারান্টি, গরিবদের বাসস্থান, বার্ধক্য-বিধবা ভাতা, মহিলা ও শিশু কল্যাণ, সংখ্যালঘু ও আদিবাসী উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্যের বিষয়গুলি তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি। জানান, মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য একশোটি জেলার সরকারি হাসপাতালে একটি করে ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার’ গড়ে তুলবে সরকার।
পরে সরকারের এক শীর্ষ নেতা বলেন, যে আর্থিক মন্দা ও সঙ্কটের কথা রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, তা বাস্তব। খরচ কমাতে তাই বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের জন্য চাপ বাড়ছে। কিন্তু এ-ও সত্য যে, খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ ও তা রূপায়ণ করা রাজনৈতিক ভাবেও সরকারের জন্য জরুরি। ফলে এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলাটাই এখন সরকারের চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম আসন্ন বাজেটে তা কতটা সুচারু ভাবে করতে পারেন, সেটাই দেখার। |
|
|
|
|
|