ভারসাম্যের রাজনীতি
কট্টরদের মন রাখতেই বক্তৃতা বয়কট বামেদের
ত কাল পশ্চিমবঙ্গে সিটু-র ধর্মঘট সফল করতে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরা রাস্তায় নামেননি।
আজ ধর্মঘটের সমর্থনে সংসদে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বক্তৃতা বয়কট করলেন সিপিএম-সহ বাম সাংসদেরা। এই ঘটনাকে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের ভারসাম্য রক্ষার কৌশল হিসেবেই দেখেছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। তাঁদের মতে, কংগ্রেস বিরোধিতার রাজনীতি থেকে তাঁর দল যে সরছে না, সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন তিনি।
শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা দু’দিনের ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে সিপিএমের মধ্যে দু’টি মত উঠে এসেছিল। এক দিকে ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ধর্মঘটের রাজনীতি থেকে সরে আসার ভাবনা। যাতে দলের নতুন প্রজন্মের সমর্থন রয়েছে।
অন্য দিকে রয়েছেন ধর্মঘট-বন্ধেই অচল থাকতে চাওয়া কট্টরপন্থীরা। কারাট দুই মতাবলম্বীদের মধ্যে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
বুদ্ধদেবের ধর্মঘট-বিরোধিতা নিয়ে সিটু-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রবল আপত্তি ছিল। তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের বিষয়ে কারাট হস্তক্ষেপ করেননি। আবার ধর্মঘট চলছে, এই যুক্তিতে আজ চার বাম দলের সাংসদরা যখন রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা বয়কট করেছেন, তখন তিনি বাধা দেননি। শুধু তা-ই নয়। অন্য বাম দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে মিলে শ্রমিক সংগঠনগুলিকে অভিনন্দন জানিয়ে এই বন্ধকে ‘ঐতিহাসিক’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন। ওই বিবৃতিতে এ-ও বলা হয়েছে যে, “পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসন ধর্মঘট ব্যর্থ করার চেষ্টা করলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে জোরদার ধর্মঘট হয়েছে।”
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বাজেট অধিবেশনের শুরুতে যৌথসভায় আজই ছিল প্রণববাবুর প্রথম বক্তৃতা। তাই সেই বক্তৃতা বয়কট করা নিয়ে কিছুটা হলেও দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন সিপিএমের একাংশ। কারণ, রাষ্ট্রপতির মর্যাদাহানির অভিযোগ উঠবে, এমন আশঙ্কা ছিল তাঁদের। (বস্তুত ঠিক সেই অভিযোগই তুলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি) বিষয়টি নিয়ে গত পাঁচ দিন ধরে সিপিএমের অন্দরে এবং বাম দলগুলির মধ্যে আলোচনা হয়।
আজ অধিবেশন শুরুর আগে সংসদ চত্বরে ধর্নায় বসেন বাম-সাংসদরা। সেখানেই বয়কটের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। শুধু রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নয়, আজ লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশনেও যাননি বামেরা। দৈনিক ভাতাও নেননি। সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “শ্রমিকরা ধর্মঘট করছেন। আর একটু ভাল বেতনের জন্য তাঁদের দাবি যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু সরকার এই সব দাবি নিয়ে আলোচনা করতেই অস্বীকার করছে। শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েই আমরা আজকের অধিবেশনে উপস্থিত হচ্ছি না।”
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় চার বাম দলের মধ্যে মতবিরোধ সত্ত্বেও প্রণববাবুকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কারাট। দলের মধ্যেও এই প্রশ্নে মতবিরোধ ছিল। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে ফাটল ধরাতে প্রণববাবুকে সমর্থনের কথা বলেছিলেন বুদ্ধবাবু-সহ আলিমুদ্দিনের নেতারা। সেই যুক্তি মেনে নিয়েছিলেন কারাট। এ বারও ধর্মঘট নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে বুদ্ধবাবুর অবস্থানের বিরোধিতা করেননি। এ নিয়ে সিটু-র কেন্দ্রীয় নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় কারাটের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁদের প্রশ্ন ছিল, এই প্রথম গত বছরের সেপ্টেম্বরে
ধর্মঘটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এসে ‘ভাষা দিবস’-এর দোহাই দিয়ে আপত্তি তোলা হচ্ছে কেন?
কারাট কিন্তু শেষ পর্যন্ত আলিমুদ্দিনের বিষয়ে নাক গলাতে চাননি। সিপিএমের একাংশের ব্যাখ্যা, এই মুহূতের্র্ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এতটাই দুর্বল যে, তাঁদের পক্ষে আলিমুদ্দিনের উপরে ছড়ি ঘোরানো সম্ভব নয়।
তাই এ কূল-দু’কূল রক্ষারই চেষ্টা করছেন কারাট।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.