|
|
|
|
বাণিজ্য বন্ধ, হাঁড়িতে টান লক্ষ্মী,বাবুলালদের |
নির্মল বসু • ঘোজাডাঙা |
দোকানে খরিদ্দার নেই, বন্দরে নেই পণ্যবোঝাই লরির লম্বা সারি। বন্দরকে ঘিরে রুটিরুজি বন্ধ। সদাব্যস্ত বন্দর এলাকা এখন সুনসান। বন্দরকে ঘিরে বেঁচে থাকা মুখগুলোর একটাই চিন্তা, কী ভাবে চলবে সংসার?
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে ইছামতী সেতুর ডান পাশ দিয়ে সোজা চলে গিয়েছে ওল্ড সাতক্ষীরা রোড। একেবারে ঘোজাডাঙা সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশের ভোমরায়।
ঘোজাডাঙা আন্তর্জাতিক স্থল বন্দর হিসাবে ঘোষণার পরে সেখানে রাস্তার দু’পাশে তৈরি হয়েছিল পণ্যবোঝাই ট্রাক থেকে মাল খালাসের জন্য পার্কিং জোন। আর এই বাণিজ্যকে ঘিরে গড়ে উঠেছে খাবার দোকান থেকে শুরু করে নানা ব্যবসা। মাল খালাস থেকে শুরু করে এই সব ব্যবসায় যুক্ত থেকে রুটিরুজির সংস্থান করছেন শ্রমিক থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা। বন্দরে শ্রমিক সংগঠনগুলির আন্দোলনে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে এই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। টানা সতেরো দিন বন্ধ থাকার পরে জেলাশাসকের হস্তক্ষেপে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চালু হয়েছিল বাণিজ্য। কিন্তু ফের একই কারণে এক সপ্তাহ পর ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে বহির্বাণিজ্য। তার ফলে একদিকে যেমন সমস্যায় পড়ে গিয়েছেন পণ্য খালাসের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকেরা। তেমনই রাস্তার ধারে দোকান করে বসে থাকা ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে। বাণিজ্য বন্ধ থাকায় আসছে না পণ্যবোঝাই ট্রাক। ফলে দেখা মিলছে না চালক, খালাসি ও মাল খালাসের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের। ফলে ওল্ড সাতক্ষীরা রোডের দু’পাশের চা-পান-বিড়ির দোকান, হোটেলগুলি খাঁ খাঁ করছে। |
বেচাকেনা নেই। এ ভাবেই দিন কাটছে দোকানির। —নিজস্ব চিত্র। |
বড় রাস্তার পাশে চা-পান-বাড়ির দোকান বাবুলাল সরকারের। তাঁর তিন ছেলেই স্কুলে পড়ে। বাবা-মা-স্ত্রীকে নিয়ে সাতজনের সংসারে ক্ষুন্নিবৃত্তির একমাত্র ভরসা চায়ের দোকানটুকু। কিন্তু বাণিজ্য বন্ধ থাকায় তাঁর মাথার চুল ওঠার জোগাড়। বললেন, “অন্য সময় এখানে লোকের মেলা বসে যায়। বেচাকেনা ভালই হত। বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দোকানে মাছিও ঢোকে না। সব মিলিয়ে প্রায় একমাস হতে চলল ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে।” সঞ্জিৎ দাস, শ্যামল বিশ্বাস, মনোজ দাসের অবস্থাও বাবুলালের মতোই। ঘোজাডাঙা খালধারে লক্ষ্মী মণ্ডলের মাটির বাড়ি। ক্যানে করে ঘুরে ঘুরে চা-বিস্কুট বিক্রি করে বেড়ান। জানালেন, “পেট চালাতে আগে এখানকার অনেকের সঙ্গে আমিও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্তে অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলাম। বাণিজ্য শুরু হওয়ায় সকলেই কিছু না কিছু কাজ পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন বাণিজ্য বন্ধ থাকায় পেট চালানোই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সরকারি বাবুরা যদি আমাদের মতো লোকের কথা ভেবে বাণিজ্য চালু করার ব্যবস্থা নেন, তাহলে সকলের উপকার হয়।”
লক্ষ্মীর আবেদন সরকারিবাবুদের কানে পৌঁছবে কি না জানা নেই। তবে বসিরহাটের মহকুমাশাসক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “ঘোজাডাঙায় সীমান্ত বাণিজ্য যাতে দ্রুত চালু করা যায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|