স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের সহচর জামাতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ করার জন্য ২৬ মার্চ, স্বাধীনতার দিনটিকেই সময় হিসেবে বেঁধে দিল একুশের প্রজন্ম চত্বর।
একুশের বিপুল জনজোয়ার বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়ে দিল, রাজাকার নেতাদের ফাঁসি ও জামাতকে নিষিদ্ধ করার দাবি না মানা পর্যন্ত শাহবাগের আন্দোলন থামছে না। এ বার দাবি উঠেছে, ইসলামি ব্যাঙ্কের মতো জামাতের নিজস্ব ব্যাঙ্কের জাতীয়করণ। শাহবাগের অভিযোগ, ইসলামি ব্যাঙ্ক ও তার মতো বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের পুষ্ট করছে, জঙ্গিদের অস্ত্র ও বোমা কেনার টাকা জোগাচ্ছে। দাবি উঠেছে, স্বাধীন তদন্ত কমিশন গড়ে তাদের সমস্ত কুকাজ খুঁজে বার করা হোক।
কাল মধ্যরাতে ঘড়ির দুই কাঁটা এক হওয়ার পরেই ঢাকার ভাষা শহিদ মিনারে মানুষের ঢল নামে। এ বারের একুশে যেন আরও উদ্দীপনার। সকাল পর্যন্ত জনস্রোত ফুলের শ্রদ্ধা জানায় ভাষা আন্দোলনের শহিদদের। মানুষের দ্বিতীয় গন্তব্য ছিল শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর। সেখানকার বিক্ষোভকারীরাও মিছিল করে শপথ নিয়ে আসেন শহিদ মিনারে। তার পরে বিকেল তিনটেয় পূর্বনির্ধারিত জনসভা। দুটি ট্রাককে পাশাপাশি রেখে তৈরি হয়েছিল অস্থায়ী মঞ্চ। |
একুশের বর্ণমালা। ভাষা দিবসের মিছিল। বৃহস্পতিবার ঢাকায়। ছবি: উমাশঙ্কর রায়চৌধুরী |
‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে ওঠে একবার’ স্লোগানের মধ্যে সেই মঞ্চে ওঠেন ১৭ দিন ধরে নিরবচ্ছিন্ন অবস্থান চালিয়ে আসা বিক্ষোভকারীরা। আশপাশের অন্তত পাঁচ বর্গ কিলোমিটার রাস্তা তখন মানুষে ঠাসা। সকলেরই প্রশ্ন, কী ঘোষণা হবে মঞ্চ থেকে? একুশেই কি সাঙ্গ হবে অবস্থান-বিক্ষোভ?
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল শাহবাগের বিক্ষোভ। সেই সংগঠনের নেতা ইমরান সরকার ঘোষণা করলেন, ক্ষান্তি নয় আন্দোলনে। যত দিন না ছয় দফা দাবি মিটছে, শাহবাগের রাস্তাই ঠিকানা বিক্ষোভের। বলা হল, একাত্তরে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল জামাতে ইসলামি। রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী গড়ে স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিল। গণহত্যা, ধর্ষণ, লুঠপাটে দোষী এই সংগঠন ও তার নেতারা। স্বাধীনতার পরেও তারা নানা জঙ্গি সংগঠনকে উৎসাহ দিয়ে গিয়েছে। নাশকতা চালিয়েছে সমানে। এদের নিষিদ্ধ করতে হবে, আর তার জন্য চরম সময়সীমা হওয়া উচিত ২৬ মার্চ, স্বাধীনতার দিনটিই। লাখো মানুষের গর্জন সেই দাবিকে সমর্থন করে। ঘোষণা হয়, প্রতি শুক্রবার শাহবাগে হবে মহাসমাবেশ।
শুধু তো শাহবাগ নয়, একুশের চেতনায় বাংলাদেশের সর্বত্রই এ বার যেন এক নতুন একুশে। চট্টগ্রামে সকাল থেকেই উৎসব। যশোরে সাংস্কৃতিক উৎসবেও জামাতকে নিষিদ্ধ করার দাবি। রাজশাহিতে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজাকারদের ফাঁসির দাবি তুললেন মানুষ।
আখাউড়া সীমান্ত আজ খুলে
দেয় দুই দেশের সীমান্তরক্ষীরা। ভারত ও বাংলাদেশের মানুষ একযোগে পালন করেন একুশে। একই ছবি পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তেও। দু’দেশের মানুষ হাতে হাত দিয়ে নাটকে-গানে-স্লোগানে পালন করছেন ভাষা শহিদ দিবস। |