আবেগ, অশ্রুজলে স্মরণ ভাষা-শহিদদের
বাংলাভাষা এবং তাকে কেন্দ্র করে জাতিসত্ত্বার আবেগ মিশে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিল। শাহবাদ স্কোয়ারের আন্দোলন সেই আবেগকে কতটা উসকে দিয়েছে, বৃহস্পতিবার বেনাপোল সীমান্তে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান তারই সাক্ষী থাকল।
হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে মিশে থাকা ভাষা দিবসের সেই আবেগকে কী ভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে, ভাষা জানা নেই। যে দিকে তাকানো যায়, শুধুই ভাষা দিবসের কথা উল্লেখ করে নানা পোস্টার, ব্যানার, ফ্লেক্স। কোথাও ‘ভাষা শহিদ’ বরকত, জব্বার, সালামদের বিশাল বিশাল ছবি। যাঁদের উল্লেখ করে কোথাও পোস্টারে লেখা, “আমরা ভুলিনি তোমাদের। ভুলিনি তোমাদের রক্তের স্রোতধারা। তোমাদের জানাই লক্ষ সেলাম।” শ’য়ে শ’য়ে ছেলেমেয়ের গালে রং দিয়ে আঁকা হয়েছে ‘অমর একুশ’। মঞ্চ থেকে টানা গান-আবৃত্তি চলেছে দিনভর। ভিড়ের মধ্যে সেই গান শুনে পাঞ্জাবির হাতায়, শাড়ির আঁচলে চোখের জল মুছে নিচ্ছিলেন কত শত তরুণ-তরুণী।
বাংলাদেশের নবীন প্রজন্মের এই আবেগটুটুই হয় তো শাহবাগ-আন্দোলন পর্বে বাংলাদেশের সেরা প্রাপ্তি।
কথা হচ্ছিল খাইরুল নাহারের সঙ্গে। মধ্যবয়সী গৃহবধূটি থাকেন সারসায়। তাঁর উপলদ্ধি, “বছর তিনেক ধরে এই দিনটায় আসছি বেনাপোলে। কিন্তু এ বার যেন অনেক বেশি উন্মাদনা চোখে পড়ছে। নতুন প্রজন্মের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে।” সেই প্রজন্মেরই ছাত্রী শান্তা, মরিয়মরা। বাংলাদেশের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করে তারা। সকালে স্কুলে শহিদ বেদিতে মালা দিয়ে স্কুলের পোশাকেই চলে এসেছে বেনাপোলে। তাদের কথায়, “ইংরেজি স্কুলে পড়ি তো কী হয়েছে। বাংলাই তো আমাদের মাতৃভাষা।”
এই বোধটাই যেন গোটা অনুষ্ঠানের মূল চালিকাশক্তি।
মঞ্চে বাংলা ব্যান্ডের গান হচ্ছিল। বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীরা পাজামা-পাঞ্জাবি, শাড়িতে সেজেগুজে মঞ্চে দাঁড়িয়ে গাইছিলেন নানা দেশাত্ম্যবোধের গান। তাঁদেরই এক জন বললেন, “আমরা মূলত বাংলা গান শুনি, গাই। কিন্তু এই দিনটায় অন্য ভাষায় গান শোনা তো দূরের কথা কথা বলতেও ইচ্ছে করে না।”
পেট্রাপোল সীমান্তে ‘অমর একুশে’। ছবি: পার্থসারথি নন্দী।
শাহবাগ স্কোয়ারের গণ আন্দোলন এ বার ভাষা দিবসের সাজসজ্জায় নতুন একটি অংশ জুড়েছে। প্রত্যেকের বুকে দেখা গেল কালো ব্যাজ। শহিদ স্মরণে। চায়ের দোকানি পারভেজ রহমানের বুকেও দেখা গেল সেই ব্যাজ। সকাল সকাল চলে এসেছিলেন বেনাপোলের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। বললেন, “কত্তা, এ যে মায়ের টান। এড়াই ক্যামনে।” বেনাপোলের বাসিন্দা পলি মিত্রের কথায়, “শাহবাগ স্কোয়ার নতুন প্রজন্মের কাছে ভাষা দিবসের ইতিহাসকে নতুন ভাবে তুলে ধরেছে। এই আবেগ আমাদের দেশের সম্পদ।”
সেই সম্পদের ছোঁয়া অবশ্য ততটা চোখে পড়ল না এ পারে পেট্রাপোলের অনুষ্ঠানে। গান-বাজনা, বক্তৃতা সবই হল। তবে কোথায় যেন পরিকল্পনার অভাব। নেতা-মন্ত্রীরা অবশ্য ছিলেন অনেকেই। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “দু’দেশের মধ্যে ব্যারিকেডই রাখা উচিত নয়।” সিপিএমের উদ্যোগেও অন্যান্য বছর অনুষ্ঠান হত পেট্রাপোলে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম অমিতাভ নন্দী বলেন, “প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। তাই সল্টলেকে আমরা এ দিনের অনুষ্ঠান করেছি।”
এ সব সত্ত্বেও দু’দেশের মানুষ এই দিনটাকে কেন্দ্র করে কাছাকাছি এলেন। বাংলাদেশি কিশোরী মার্জিয়া রহমান মিমির কথা, “এখানে এসে বুঝলাম, ও পারে দেশটা আছে, সেটাও যেন আমাদের খুব কাছের।”

একুশ কি শুধু একুশেই
ভাষা নিয়ে তুমুল আবেগে ভাসে ২১ ফেব্রুয়ারি।
কিন্তু তারপর? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

বাড়িতে সব সময়ে বলা হয়, ইংরেজি শিখলেও বাংলাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা তো মোবাইলে বাংলাতেই মেসেজ করি।

শাহবাগ স্কোয়ারে গিয়েছিলাম। ছোট থেকে এ সব নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। সারা বছরই ভাষা নিয়ে আবেগ অনুভব করি। স্কুলে প্রার্থনাও হয় বাংলায়

ভাষা নিয়ে মানুষের এত আবেগ, বেনাপোলে এসে জানলাম। সত্যি বলতে, কলকাতায় বসে কখনও এ ভাবে ভাবিনি। অনুভূতিটা আগামী দিনে ধরে রাখার চেষ্টা করব।

আজকের দিনটা রাস্তায় নেমে ঘটা করে পালন করা হয় ঠিকই। কিন্তু সারা বছরই তো বাংলা ভাষার মধ্যে থাকি। আমার কথাতেও বাঙাল টান এখনও স্পষ্ট।

এ দিনটা সত্যি আলাদা কোনও তাৎপর্য বহন করে না। কথাবার্তা বাংলায় বলি ঠিকই, কিন্তু বাকি সব কাজ তো সারতে হয় ইংরেজিতে। সরকার বাংলা নিয়ে কিছু ভাবুক।

সব বাবা-মা তো দেখি আজকাল ছেলেমেয়েদের ইংরেজি স্কুলেই পাঠাচ্ছে। এই দিনটা ক্রমে তাৎপর্য হারাচ্ছে। উচ্চশিক্ষায় বাংলাকে প্রাধান্য দেওয়াটা খুব দরকার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.