|
|
|
|
গত বারের ধানের দাম না মেলায় ফের ক্ষোভ মন্তেশ্বরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মন্তেশ্বর ও বর্ধমান |
সরকারি সহায়ক মূল্যে বিক্রি করা ধানের দাম মেটানোর দাবিতে বৃহস্পতিবার মন্তেশ্বর ব্লক অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন শ’খানেক চাষি। তাঁদের অভিযোগ, বছরখানেক আগে ধান বিক্রি করলেও দাম পাননি তাঁরা। সন্ধ্যায় মহকুমা প্রশাসনের এক এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভ-অনশন থামানোর অনুরোধ করলেও চাষিরা মানেননি। মহকুমাশাসক শশাঙ্ক শেঠি জানান, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
এ দিন সকাল ১০টা থেকে অনশন শুরু করেন চাষিরা। তাঁরা জানান, ২০১২-এর ফেব্রুয়ারি-মার্চে জামনা, কুলে, দেওয়ানিয়া, লস্করপুর, সেলে, মড়াইপিড়ি, আসুরি ও নতুনগ্রাম এলাকার ৫৭০ জন সরকারি সহায়ক মূল্যে জামনা কৃষি উন্নয়ন সমিতিতে ধান বিক্রি করেন। চাষিদের দাবি, ধান বিক্রির পরেই টাকা পাওয়া নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়। মাত্র ১৩১ জনের টাকা মেটানো হয়। বাকি ৪৩৯ জনের বকেয়া মেটাতে খাদ্য দফতর, সমবায় দফতর ও প্রশাসনের নানা স্তরে আবেদন করা হয়। কাজ না হওয়ায় গত ৯ ডিসেম্বর ব্লক অফিসে অনশনে বসেন বহু চাষি। তার পরে বকেয়া থাকা ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার মধ্যে ৫০ লক্ষ মেটানো হয়। বাকি টাকা দু’মাসের মধ্যে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মেলে। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও তা দেওয়া হয়নি। |
|
ব্লক অফিসে অনশন। —নিজস্ব চিত্র। |
চাষিদের দাবি, বকেয়া টাকা না মেলায় বহু চাষিকেই চলতি মরসুমে দেনা করে চাষ করতে হয়েছে। তরুণ মণ্ডল নামে এক চাষির কথায়, “সহায়ক মূল্যে ১৯৯ বস্তা ধান বিক্রি করেছিলাম। টাকা তো পেলাম না, উপরন্তু হয়রানি পোহাতে হচ্ছে।” সুকুমার মণ্ডল, সৈয়দ আব্দুল বারিদের দাবি, “কোনও মৌখিক প্রতিশ্রুতি শুনে ফিরে যেতে আমরা নারাজ।” মন্তেশ্বরের বিডিও প্রদীপকুমার বারুই বারবার অনশন তোলার আবেদন জানালেও চাষিরা তা শোনেননি।
বিক্ষোভে হাজির থাকা মন্তেশ্বরের সিপিএম বিধায়ক সৈয়দ মহম্মদ হেদায়তুল্লাহের অভিযোগ, “চাষিদের থেকে সরকারের ধান কেন নেহাতই প্রহসন। জামনার এই ঘটনায় প্রমাণ হয়, চাষিরা সরকারের থেকে টাকা পাচ্ছেন না।” মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চাঁদু দাস বলেন, “চাষিদের কাছে কেনা ধান সমবায় সমিতি বিক্রি করে এলাকার একটি চালকলকে। তারা এখনও বড় অঙ্কের টাকা আটকে রাখায় সমবায় চাষিদের বকেয়া মেটাতে পারেনি।”
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দেশের বাড়ি এই মন্তেশ্বরেই। তিনি অবশ্য সরকারের গাফিলতির কথা মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “খবর পেয়েছি, জনা পনেরো চাষি ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। গত বার জামনা সমবায় সমিতি কাগজে-কলমে দেখায়, চাষিদের কাছ থেকে মোট ১৪২৯৮ কুইন্টাল ধান কিনেছে তারা। তা থেকে ৯৭২২ কুইন্টাল চাল তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু সরকারের ঘরে জমা পড়ে মাত্র ৩৯৬২ কুইন্টাল। অথচ সমবায়টি যে তালিকা পাঠিয়েছে তাতে দেখানো হয়েছে, ২৭০ জন চাষির থেকে ধান কিনে চেকে দাম মেটানো হয়েছে।”
খাদ্যমন্ত্রীর দাবি, “স্থানীয় একটি চালকলে ওই ধান ভাঙিয়ে চাল করার কথা ছিল। চালকল ও সমবায়ের যোগসাজশে প্রায় ৯১ লক্ষ টাকার চাল বাজারে বেচে দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা কয়েক দিন আগেই ওই চালকলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি। পরে সমবায়ের জমা দেওয়া তালিকা খতিয়ে দেখা গিয়েছে, যে চাষিদের নাম তাতে রয়েছে তাঁদের বড় অংশেরই অস্তিত্ব নেই। ফলে ভুয়ো চাষিদের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আমরা ওই সমবায়ের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে চলেছি। তা বুঝে সমবায় ও চালকল তালা দিয়ে কর্তৃপক্ষ পালিয়ে গিয়েছে। আর রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই চাষিদের নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে সিপিএম।” |
|
|
|
|
|