|
|
|
|
নিষ্প্রদীপ ঘরে শুধু হাহাকার |
বাড়ির কর্তা জেলে, ডেকে যাচ্ছে ডেভিল |
রানা সেনগুপ্ত • দেওয়ানদিঘি |
প্রাসাদোপম বাড়ির মূল দরজার বেল টিপতেই হাহাকার করে উঠল ‘ডেভিল’।
ঘটনার দিনই পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তাঁকে। একে একে গ্রেফতার হয় মোট ১১ জন। সকলেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন, শুধু তিনি ছাড়া। ঘটনার পরে বছর ঘুরল। জেলেই রয়েছেন দেওয়ানদিঘিতে জোড়া সিপিএম নেতা খুনে মূল অভিযুক্ত পতিতপাবন তা।
বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়িতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে চেঁচামেচি জুড়েছিল অ্যালসেশিয়ান। কুকুরের নাম ‘ডেভিল’ কেন? পতিতপাবনবাবুর ছেলে প্রীতমের উত্তর, “আমরা তো ইভিল। তাই আমাদের কুকুরের নামও ডেভিল।” ইভিল মানে তো শয়তান। প্রীতমের ক্ষোভ, “লোকে তো আমাদের শয়তান বলেই মনে করে। তা না হলে ৩৬৪ দিন পরেও এক জন বন্দি জামিন পান না কী করে?” পাশ থেকে তাঁর মা অন্নপূর্ণাদেবীর প্রশ্ন, “আমার স্বামী কি আর বাড়ি ফিরবে না?” |
|
বাড়িতে প্রতীক্ষায় পতিতপাবনের স্ত্রী অন্নপূর্ণা। ছবি: উদিত সিংহ। |
দুপুরের খাওয়া ফেলে প্রীতম ততক্ষণে নানা যুক্তি দিয়ে বোঝাতে শুরু করেছেন, তাঁর বাবার জামিন না পাওয়া কত বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন। ভাত, তরকারিতে মাছি বসছে। কিন্তু সে দিকে ভ্রূক্ষেপ নেই তাঁর। তিনি বলে চলেন, “ঘটনার ৭৭ দিনের মাথায় চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি। চার্জশিট পেশ হলে হয় মামলার বিচার শুরু করতে হয়, অথবা অভিযুক্তকে জামিন দিতে হয়। বাকি সব অভিযুক্তের জামিন হয়েছে, শুধু আমার বাবাকে দেওয়া হল না। কেন বলতে পারেন?” গত ১২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে ফের পতিতপাবনবাবুর জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে, জানালেন তিনি।
তৃণমূলের স্থানীয় নেতা পতিতপাবনবাবু এলাকার আটটি কারখানার আইএনটিটিইউসি-র সংগঠনের দেখাশোনা করতেন। প্রীতম জানান, বাবার অনুপস্থিতিতে তিনিই এখন সেই সব ইউনিয়নগুলি দেখাশোনা করছেন।
বাবার জামিনের ব্যাপারে সরকারের দ্বারস্থ হচ্ছে না কেন? মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন? দ্রুত সতর্ক হয়ে প্রীতমের উত্তর, “সামনেই পঞ্চায়েত ভোট, তার আগে আমি কোনও লুজ টক করব না।” পঞ্চায়েতের ভোটে তো সিপিএম প্রদীপ তা-কলম গায়েন হত্যাকাণ্ড তুলে ধরে প্রচার করতে চলেছে। ছাত্র রাজনীতি করে আসা প্রীতম বলেন, “ওটা তো আমাদেরও ইস্যু। আমরা প্রমাণ করে দেব, কে কতটা ভাল লোক ছিলেন।”
বর্ধমানের জেলে গিয়ে এক সময়ে প্রতি দিনই বাবার সঙ্গে দেখা করতেন প্রীতম। তাঁর দাবি, পতিতপাবনবাবুই তাতে বাধ সেধেছেন। প্রীতমের কথায়, “নেতা হয়ে তাঁর পরিবার বিশেষ সুবিধা নেবে, তাতে রাজি হননি বাবা। এখন তাই সপ্তাহে এক দিনই দেখা করতে যাই।” অন্নপূর্ণাদেবী বলছেন, “কত দিন হয়ে গেল উনি বাড়ি নেই। আমাদের সংসার যে অচলই হয়ে পড়েছে।”
বেরিয়ে আসার সময়ে ফের ডেকে ওঠে ডেভিল। ডাকতেই থাকে। |
|
|
|
|
|