|
|
|
|
নিষ্প্রদীপ ঘরে শুধু হাহাকার |
রক্তের দাগ শুকনো, মায়ের চোখ ভেজাই |
রানা সেনগুপ্ত • দেওয়ানদিঘি |
চোখের জলে ভাসছেন বৃদ্ধা। কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, “আমার ছেলেটাকে ওরা মারল কেন? ও কী ক্ষতি করেছিল?”
দেওয়ানদিঘির সিপিএম সদর জোনাল অফিস থেকে ঢিল ছোড়া দূরে যেখানে পড়ে ছিল সিপিএমের দুই নেতা প্রদীপ তা ও কমল গায়েনের দেহ, ছড়িয়ে ছিল চাপচাপ রক্ত, সেই জায়গা এখন পরিষ্কার। ঠিক কী ঘটেছিল ২০১২-এর ২২ ফেব্রুয়ারি? প্রশ্ন শুনেই ভিড় পাতলা হতে শুরু করে। যেতে যেতে অনেকে বলে যায়, “জানি না, জানি না। কিছুই জানা নেই।”
বৃহস্পতিবার সকালে দেওয়ানদিঘির বাড়িতে গিয়ে দেখা মেলেনি নিহত নেতা প্রদীপবাবুর স্ত্রী চিত্রলেখাদেবীর। বাড়িতে নেই তাঁদের মেয়ে পৃথাও। মির্জাপুরে নিহত নেতার আদি বাড়িতে গিয়ে দেখা মেলেনি তাঁর ভাই, খুনের মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী প্রবীরবাবুর। ছিলেন না প্রদীপবাবুর মা ছায়ারানিদেবীও। সকলেই যেন এড়িয়ে যেতে চাইছেন সে দিনের দুর্বিষহ স্মৃতি। পরিবারের এক মহিলার থেকে পাওয়া গেল দেওয়ানদিঘির একটি ঠিকানা। সেখানেই রাধারানিদেবীকে পাওয়া যাবে বলে তাঁর কাছে জানা গেল। |
|
আত্মীয়ের বাড়িতে প্রদীপ তায়ের মা ছায়ারানি। |
দেখা মিলল বৃদ্ধার। শুরুতেই পরিবারের উপরে আসা হুমকির প্রসঙ্গ তুললেন ছায়ারানিদেবী। তাঁর অভিযোগ, “চিত্রলেখা হাইকোর্টে গিয়েছিল। তার আগে আমাদের কত হুমকি শুনতে হয়েছে! ছোট ছেলে প্রবীর বাড়ি থেকে বেরোতে পারত না। কে কোথায় ওঁত পেতে রয়েছে, কে জানে! নাতনি পৃথাকে বর্ধমান স্টেশন পর্যন্ত অনুসরণ করা হত। বউমা হাইকোর্টে গিয়ে সব জানানোর পরে সে সব বন্ধ হয়েছে।” তবে আতঙ্ক কাটেনি। বৃদ্ধার কথায়, “আমার দু’টো নাতনি বর্ধমানের স্কুলে যায়। ওরা না ফেরা পর্যন্ত কিছুতেই স্বস্তি পাই না।” পাশ থেকে তাঁর বড় মেয়ের ছেলে রাজু সামন্ত বলে ওঠেন, “অভিযুক্তদের অনেকেই তো ধরা পড়েনি। বহাল তবিয়তে ঘুরছে। তাই ভয়ে ভয়ে রয়েছি।”
ছায়ারানিদেবী বলে চলেন, “এই যে আমার নাতি রাজু বেকার বসে রয়েছে। বড় ছেলেকে কত বার বলতাম, ‘হ্যাঁ রে, ও কি এ ভাবে বসে থাকবে? ওর একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দে।’ ছেলে বলত, ‘কত লোকই তো বেকার বসে রয়েছে মা।’ নিজের ছোট ভাইকেও কিছু করে দেয়নি। এতটাই সৎ ছিল আমার ছেলে। তবু তো ওকে খুন হতে হল!” কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধা। শুক্রবার বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে তাঁর বড় ছেলের স্মরণসভা? সেখানে যাবেন কি না, সে প্রশ্নে বৃদ্ধা বলেন, “আমি কোনও দিনই এ সবে যাইনি। তবে ছোট ছেলে, বউমারা যাবে।”
এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প বসেছে। তারা ঠিক মতো নজর রাখছে? রাজু বলেন, “মাঝে-মাঝে রাস্তায় ঘুরতে দেখি। তার বেশি তো কিছু দেখি না।” স্থানীয় সরাইটিকর পঞ্চায়েতের তিন তলায় উঠে দেখা যায়, ক্যাম্পে চার-পাঁচ জন পুলিশ কর্মী রয়েছেন। বাকিরা কোথায়? ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত তপন সরকার বলেন, “আমার আর মাত্র ছ’দিন চাকরি আছে। এ সব নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।” তবে তাঁর দাবি, গত বেশ কয়েক দিনে ক্যাম্পের পুলিশ চিত্রলেখাদেবীর কাছ থেকে কোনও ফোন পায়নি।
|
কাকলি গায়েন |
“স্বামীর মৃত্যুর আগে আমি দলের মহিলা সমিতিতে ছিলাম। আজও সেই সংগঠনই করে চলেছি। বর্ধমানের সুভাষপল্লির যে বাড়িতে কমলবাবু ৪০ বছর ধরে থাকতেন, সেখানেই আজীবন থাকব। অভিযুক্তদের মধ্যে প্রায় সকলে জামিন পেয়ে যাওয়ায় আশঙ্কায় রয়েছি। তবে বিচারব্যবস্থার উপরে আমার আস্থা রয়েছে। যাঁরা কমল গায়েনের মতো নির্বিরোধী মানুষকে পিটিয়ে মারতে পারে, তাদের সাজা হবেই।” |
|
ছবি: উদিত সিংহ। |
|
|
|
|
|