নিজেদের ডাকা বনধই এখন প্রত্যাহারের উপায় খুঁজছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
আলাপ-আলোচনায় না গিয়ে সরাসরি টানা আন্দোলনের হুমকি দিয়ে চাপে পড়েছে তারা। রাজ্য সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও রাতারাতি সুর নরম করেছে মোর্চা। রাজ্যের সঙ্গে আলোচনাতে বসতেও এখন তারা আগ্রহী। সরকারি সূত্রের খবর, মঙ্গলবার মোর্চা নেতাদের অনেকেই রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথাবার্তাও বলেছেন। এর পরেই ‘মুখরক্ষার উপায়’ খুঁজতে শুরু হয়েছে নানা মহলে তৎপরতা। সব ঠিকঠাক চললে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই রাজ্যের তরফে সরকারি ভাবে আলোচনায় ডাকা হতে পারে মোর্চাকে।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব জানিয়েছেন, “পাহাড়ে অশান্তি তৈরি করে যদি সামগ্রিক উন্নয়ন স্তব্ধ করে দেওয়া হয়, তা হলে আমজনতা কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। সে কথা মোর্চা নেতাদের বারেবারেই বলছি। আমরা মনে করি, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানসূত্র মিলবে।” মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রোশন গিরি জানান, তাঁরাও আলোচনায় ডাকার কথা শুনেছেন। তাঁর কথায়, “মহাকরণ থেকে সরকারি ভাবে ডাক আসুক। তার পরে দলীয় বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
কিন্তু যে মোর্চা রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি তুলেছে, রাজ্য সরকারকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেছে, তারা কোন ধরনের চাপের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত সুর পাল্টাতে বাধ্য হল?
মোর্চার অন্দরের খবর, বাইরের চাপ তো রয়েইছে, তার উপরে বাড়ছে পাহাড়ের বিভিন্ন মহলের চাপও। বনধ ও সরকারি দফতর অচল করে দেওয়ার মতো কর্মসূচি পালন করা হলে রুটি-রুজি ও উপার্জন বন্ধের আশঙ্কায় দলের অন্দরেও ক্ষোভ দানা বাঁধছে। মোর্চা সূত্রেই জানা গিয়েছে, কিছু ঠিকাদার সংস্থা ইতিমধ্যেই নানা প্রকল্পে তাঁদের বিনিয়োগ করা বহু লক্ষ টাকা জলে যাওয়ার আশঙ্কায় খোদ মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের কাছে গিয়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানিয়েছেন। গুরুঙ্গ তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন বলেও ঠিকাদারদের কয়েকজনের দাবি। জিএনএলএফের প্রথম সারির এক নেতার কথায়, “আমরাও তো বহুদিন ডিজিএইচসি চালিয়েছি। যাঁরা চাঁদা দিতেন, তাঁদের আর্জিও তখন রাখতে হয়েছে। মোর্চাকেও ওঁদের কথা রাখার চেষ্টা করতে হবে।” তাঁর মন্তব্য, “ঠিকাদারদের অল্পবিস্তর চিনি। তাঁদের অনেকে কাজ শুরুর আগেই টাকা বিনিয়োগ করে রাখেন। কাজেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চাপ তাঁরা তো দেবেনই।” রোশন অবশ্য জানান, তাঁরা পাহাড়ের সামগ্রিক উন্নয়নের কাজে বিঘ্ন ঘটতে দেবেন না।
চা-পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মহলগুলি এবং বোর্ডিং স্কুলগুলির তরফেও মোর্চা নেতাদের অনুরোধ করা হয়েছে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে। তাঁদের চাপও মোর্চা নেতাদের পক্ষে উপেক্ষা করা শক্ত।
দার্জিলিঙের হোটেল মালিক সংগঠনের এক কর্তা জানান, তাঁরা আজ, বুধবার গুরুঙ্গের কাছে গিয়ে মার্চের টানা আন্দোলন প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করবেন। ওই কর্তার বক্তব্য, “যে কোনও সময়ে আমরা মোর্চার পাশে দাঁড়াই। সবরকম সাহায্য করি। আমাদের ব্যবসা লাটে উঠলে সেই সাহায্য করব কী ভাবে?”
সরকারি অফিসারদের অনেকেও মোর্চা নেতাদের জানিয়েছেন, মার্চে সরকারি অফিস লাগাতার বন্ধ করে রাখলে বড় ধরনের অসুবিধা হবে। ৩১ মার্চের মধ্যে বরাদ্দ টাকা খরচ করে হিসেব জমা দিতে হয়। না হলে টাকা ফেরত চলে যেতে পারে, পরের বরাদ্দও সেক্ষেত্রে না-মেলার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের কর্মসূচি থেকেই এখন মুখরক্ষা করে সরে আসতে পারলে বাঁচে মোর্চা।
কিন্তু জায়গার নাম দার্জিলিং। এখানে ঘনঘন আবহাওয়া পাল্টায়। তাই আরও কয়েকদিন অপেক্ষা না-করলে পাহাড়ের রাজনৈতিক আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি স্পষ্ট হবে না বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করছেন। |