মুচকি হাসছেন কর্মীরা
কাজের অভ্যেস ফেরাতে উদ্যোগী সচিব
রকারি অফিসের কর্মসংস্কৃতি অনেকটা সোনার পাথরবাটির মতো। সরকার আসে, সরকার যায়। কেউ বলেন, ‘ডু ইট নাও’। কেউ বলেন, ‘ফটাফট, স্যাটাস্যাট’। কর্মীরা এ সব দেখেন, শোনেন, আর ঘাড় ঘুরিয়ে মুচকি হাসেন। ফলে কাজের সময় সেই চেয়ার ফাঁকা। মানুষের হয়রানি কমে না।
মহাকরণের এই চেনা ছবিটার কথা তিনিও শুনেছেন। তবু অফিসে কাজের পরিবেশ ফেরাতে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ নিয়ে দফতরের সব কর্মীদের কাছে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন শ্রম দফতরের সচিব অমল রায়চৌধুরী। মাস খানেক হল এই পদে যোগ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু এরই মধ্যে দফতর-ঘুরে চক্ষু চড়কগাছ। শ্রম দফতরে প্রায় শ’দুয়েক অফিসার-কর্মী কাজ করেন। নিয়ম অনুযায়ী, সকাল সোয়া দশটায় তাঁদের অফিসে হাজিরা দেওয়ার কথা।
দফতর সূত্রের খবর, হাজিরা দেখতে এক দিন নির্দিষ্ট সময়ের বেশ কিছুটা পরে অফিসে ঢুকে পড়েন সচিব। তখনও বেশির ভাগ চেয়ার ফাঁকা। কর্মীদের হাজিরার উপর যাঁদের নজর রাখার কথা, সেই আধিকারিকদের উপস্থিতির হার দেখেও বিস্মিত অমলবাবু। এর পর মুখে কিছু না বলে সোমবার দফতরে গিয়ে প্রতিটি কর্মী-অফিসারের হাতে একটি বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপি ধরিয়ে দেন সচিব। তাতে অমলবাবুর সাফ কথা, দফতরে কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতেই হবে।
এক পাতার বিজ্ঞপ্তিতে শ্রমসচিব সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, অফিসে হাজিরার ব্যাপারে দফতরের আধিকারিক ও কর্মীদের ঢিলেঢালা ভাব দেখে তিনি উদ্বিগ্ন। শুধু তাই নয়, দফতরের প্রয়োজন বা নিজেদের দায়িত্বের কথা মাথায় না-রেখে যে ভাবে ‘খেয়ালখুশি মতো’ ছুটি নেওয়া হচ্ছে, তা-ও চোখে পড়ার মতো। ফাইল ছাড়ার ব্যাপারে ঢিলেমি কমানোরও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। উপযুক্ত শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ ছাড়া কোনও দফতর যে সুষ্ঠু ভাবে চলতে পারে না, সেই ব্যাপারে সকলকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি অফিসার-কর্মীদের কাছে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
তাঁর নির্দেশ, অবিলম্বে সরকারি নিয়ম মেনে সকলকে হাজিরা দিতে হবে। যে কোনও ছুটির জন্য কর্তৃপক্ষের আগাম অনুমতি নিতে হবে। কাউকে না-জানিয়ে দু’দিনের বেশি গরহাজির থাকলে তা ‘অবৈধ অনুপস্থিতি’ হিসেবে গণ্য হবে। ফাইল যথাসম্ভব দ্রুত ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে শ্রমসচিবের মন্তব্য, ‘মনে রাখতে হবে, ফাইল কেবল শুকনো কাগজের এক-একটি গোছা নয়। প্রতিটি ফাইলের পিছনে রয়েছেন মানুষেরা।’
শ্রমসচিব চান, দফতরে যে কোনও চিঠি এলে ১৫ দিনের মধ্যে তার যথাবিহিত ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষত রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিবের কার্যালয় এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো যে কোনও চিঠির ব্যাপারে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনও শ্রমিক বা কর্মীর কাছ থেকে অভিযোগ এলে তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। কারণ, শ্রমিক-কর্মীরাই শ্রম দফতরের সব চেয়ে বড় উপভোক্তা।
নিউ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংয়ের শ্রম কমিশনার হিসাবে এত দিন দায়িত্ব সামলেছেন অমলবাবু। সেখানে ছিলেন শ’দেড়েক কর্মী। তাঁর কথায়, “ওই অফিসে জনে জনে বিজ্ঞপ্তি না দিলেও নির্দিষ্ট সময়ের পরে আমি হাজিরার খাতা নিয়ে নিতাম। দেরিতে এলে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে ‘অনুপস্থিত’ করে দেওয়া হত। এতে ওই অফিসে কাজের পরিবেশের অনেকটা উন্নতি হয়েছে।”
কিন্তু নতুন সচিবের কাছ থেকে নিয়ম মানার বিজ্ঞপ্তি পেয়ে কী বলছেন শ্রম দফতরের অফিসার-কর্মীরা? এক কথায়, তাঁরা বড় একটা চিন্তিত নন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন বললেন, “দফতরে নতুন সচিব এলে এমনটা হয়। কিছু দিন কড়াক্কড়ি চলে। তার পর আবার যে-কে সেই। এ সব গা-সওয়া।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.