|
|
|
|
তিন দফায় নির্বাচন চাইল কমিশন |
পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের
দ্বন্দ্বই বেশি ভয় ডিএমদের
পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
|
|
মহাকরণের কর্তারা যা-ই বলুন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে কয়েক দফায় পঞ্চায়েত ভোট চাইছেন বিভিন্ন জেলার জেলাশাসকেরা। এর কারণ হিসেবে রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় তাঁরা বলেছেন, শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে পঞ্চায়েত নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হতে পারে। অধিকাংশ ব্লকে পরিস্থিতি এখনই বেশ উদ্বেগজনক। পুরনো ও নব্য তৃণমূল গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়ে গিয়েছে, যার অধিকাংশ ঘটনা থানায় নথিভুক্ত হচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য দু’দফায় ভোটে রাজি হলেও তিন দফায় ভোট করার কথা বলে মঙ্গলবার রাজ্যকে চিঠি দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে ভোট করানোর বিরোধী হলেও কমিশন আরও এক বার পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যবস্থা করার কথা বলেছে। কমিশনের এই প্রস্তাব পেয়ে বিব্রত রাজ্য। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, কমিশনের প্রস্তাব গ্রহণ, না প্রত্যাখ্যান করা হবে সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রীই।
পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি সব জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করেন মীরা পান্ডে। গত সপ্তাহে অতিরিক্ত জেলাশাসকদের সঙ্গেও তাঁর কথা হয়। সূত্রের খবর, ওই দু’টি বৈঠকে সরকারি কথাবার্তার বাইরে অন্য কোনও কথা হয়নি। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে জেলাশাসকদের সঙ্গে আলাদা করে ‘ঘরোয়া ভাবে’ কথা বলে জেলার পরিস্থিতি বুঝতে চেয়েছেন মীরা। আর তাতেই উঠে এসেছে উদ্বেগের ছবি।
তাঁদের উদ্বেগের কারণ ব্যাখ্যা করে জেলাশাসকেরা বলেছেন, যে সব জেলায় শাসক দলের মতো বিরোধী সিপিএম-ও সমান শক্তিশালী, সেখানে তো হিংসা ছড়াবেই। কিন্তু যেখানে তৃণমূলের একচ্ছত্র উপস্থিতি, সেখানেও হিংসা ছড়ানোর আশঙ্কা কম নয়। বরং বেশিই। কারণ তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এই লড়াই অনেক ক্ষেত্রে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে জানান বেশির ভাগ জেলাশাসক। এক জেলাশাসকের কথায়, “তৃণমূলের বহু পুরনো নেতা এখন হালে পানি পাচ্ছেন না। নতুনদের দাপটে তাঁরা রীতিমতো কোণঠাসা। বহু পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের চার-পাঁচ জন করে নেতা রয়েছেন। এঁদের মধ্যে সমঝোতা দূরের কথা, উল্টে মতবিরোধ বাড়ছে।” জেলাশাসকদের মতে, এখন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু টিকিট বিলির সময় ছাইচাপা আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বেশ কয়েক জন জেলাশাসক মীরাকে জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আসতেই বিভিন্ন জেলায় অপরাধ বাড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন জেলায় চোরাপথে অস্ত্র ঢুকছে এবং নানা জায়গায় তা মজুত হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের ঘনিষ্ঠতারও খবর আসছে পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন মহল থেকে। তাঁদের মতে, এমন পরিস্থিতি অভূতপূর্ব।
এই অবস্থায় লোকসভা বা বিধানসভা ভোটের সময় যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়, পঞ্চায়েত ভোটেই তা করার জন্য কমিশনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন জেলাশাসকেরা। তাঁরা চান, ভোটের আগে বেআইনি অস্ত্র ও মদ উদ্ধার, সন্দেহভাজন দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার এবং বকেয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করার ব্যবস্থা করা হোক। তাঁদের বক্তব্য, জেলাগুলিতে যথেষ্ট সংখ্যক সশস্ত্র পুলিশ না-থাকায় প্রতি বুথে বন্দুকধারী জওয়ান দেওয়া যাবে না। তাই অবশ্যই বাড়তি বাহিনী দরকার।
পঞ্চায়েত নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে একই রকম উদ্বিগ্ন রাজ্যপালও। সম্প্রতি মুখ্যসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে ডেকে পাঠিয়ে তাঁর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন তিনি। প্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্তাকে কয়েক দফায় নির্বাচন করার পরামর্শ দেন রাজ্যপাল। রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে রিপোর্টও পাঠিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, বিভিন্ন সূত্রের খবরের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে একই রকম উদ্বিগ্ন রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে রাজ্যপালের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনা সেরে এসেছেন মীরা।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অজানা নয়, তৃণমূল সূত্রেই তা কবুল করা হচ্ছে। দলের বহু নেতাই বলছেন, পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দেবে আন্দাজ করেই বছরের গোড়ায় ভোট সেরে ফেলতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর আশঙ্কা ছিল, নির্বাচনের দিন যত পিছোবে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তত বাড়বে। কিন্তু কমিশন বেঁকে বসায় রাজ্যকে পিছু হটতে হয়। এর পর এপ্রিলে দু’দফায় ভোট চেয়ে চিঠি দেয় রাজ্য। কিন্তু কমিশন সেই প্রস্তাবও বাতিল করে তিন দফাতেই ভোট করতে বলে। |
|
|
|
|
|