প্রয়াত পিতার স্মৃতিতে সংস্কৃতি চর্চার জন্য কিছু একটা করতে চেয়েছিলেন তিনি। নিজের ইচ্ছা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকাশও করেন। স্কুলের তরফে তাঁকে অনুরোধ করা হয়, একটি সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরি করে স্কুলকে দান করার জন্য। সেইমত চার লক্ষ টাকা খরচ করে নিজের স্কুলেই তৈরি করলেন সাংস্কৃতিক মঞ্চ। সোমবার পূর্ণাঙ্গ ওই সাংস্কৃতিক মঞ্চটি নিজের প্রয়াত পিতা সুবোধচন্দ্র মৌলিকের নামে উৎসর্গ করে বিদ্যালয়কে দান করলেন অশোককুমার মৌলিক। |
সাংস্কৃতিক মঞ্চে চলছে অনুষ্ঠান। ছবি: শান্তনু হালদার। |
অশোকনগর বিদ্যাসাগর বাণীভবন হাইস্কুূলের অঙ্কের শিক্ষক অশোকবাবু আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণ করবেন। বাড়ি স্কুলের কাছেই ৮ নম্বর স্কিম এলাকায়। সোমবার মঞ্চের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, আশিস চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন গোবরডাঙার নাট্য সংস্থার কর্ণধার আশিস দাসও। তিনি বলেন, “এখনকার সময়ে নিজের সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করে নাট্যমঞ্চ তৈরি করে স্কুলকে দান করা সত্যিই ব্যতিক্রমী ঘটনা। এলাকার মানুষের নাট্যচর্চার কাজে আসবে মঞ্চটি।”
যিনি এই মঞ্চ তৈরি করলেন, কী বলছেন তিনি? তাঁর কথায়, “বাবা ছিলেন নাটক ও সাহিত্যের অনুরাগী। তাই ইচ্ছা ছিল বাবার নামে একটি নাট্যমঞ্চ তৈরি করার। আমার ইচ্ছা স্কুলকে জানালে তাঁরাও অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন আমায়।” প্রবীণ শিক্ষকের ইচ্ছা, মঞ্চটি শুধুমাত্র স্কুল পড়ুয়াদের জন্য সীমাবদ্ধ না রেখে যেন খুলে দেওয়া হয় বাইরের জগতের কাছেও। বাইরের কোনও সাংস্কৃতিক সংস্থা অনুষ্ঠানের জন্য মঞ্চ চাইলে তা যেন দেওয়া হয়। স্কুল পরিচালন সমিতি ও প্রধান শিক্ষককেও জানিয়েছেন সে কথা।
শিক্ষক হিসাবে অশোকবাবু পড়ুয়া ও সহকর্মীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। প্রবীণ শিক্ষকের এই কাজে স্বাভাবিকভাবেই আপ্লুত তাঁর সহকর্মীরাও। তারই সুর ধরা পড়ল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোজ ঘোষের কথায়। তিনি বললেন, “স্কুলকে নিজের সন্তানের মতোই ভালবাসেন অশোকবাবু। পরপর সাতটি ক্লাস নেওয়ার পরেও কখনও ক্লান্ত হতে দেখিনি ওঁকে। ওঁর এই ইচ্ছাপূরণ করতে পেরে আমরা সকলেই গর্বিত। এই সাংস্কৃতিক মঞ্চ খোলা থাকবে সকলের জন্য। অশোকবাবুও নিজেও নাটক করেন। তিনি চান, এলাকায় নতুন নাট্যপ্রতিভা এই মঞ্চ থেকেই উঠে আসুক।” |