|
|
|
|
জ্ঞানেশ্বরী শুনানি |
|
ট্রেনে কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি
ছিল না, মত সহ-চালকের
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
|
খেমাশুলি পেরোনোর পরই জোর আওয়াজ শুনতে পাই। ট্রেন নড়ে ওঠে। কেবিনের মধ্যে পড়ে যাই। পরে নিজেকে সামলে নিই। কেবিন থেকে নেমে পড়ি। চারদিকে তখন অন্ধকার। সাক্ষ্য দিতে এসে মঙ্গলবার আদালতে এমনটাই জানালেন ২০১০ সালের ২৭ মে রাতে দুর্ঘটনাগ্রস্ত জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের সহ-চালক ত্রিলোচন দেবাঙ্গন।
সোমবার থেকে মেদিনীপুরের বিশেষ জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক পার্থপ্রতিম দাসের এজলাসে শুরু হয়েছে জ্ঞানেশ্বরী-মামলার শুনানি। প্রথম দিন সাক্ষ্য দেন ট্রেনের চালক বিভয়কুমার দাস এবং গার্ড শ্রীবাসচন্দ্র ঘোষ। মঙ্গলবার সাক্ষ্য দেন সহ-চালক। ত্রিলোচন ছাড়াও এ দিন সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল ঝাড়গ্রাম জিআরপির তত্কালীন ওসি অভিজিত্ হাইতের। তবে তাঁর কাছে সমন পৌঁছনো যায়নি। পরে তাঁর সাক্ষ্য নেওয়া হবে। এই মামলায় জেলবন্দি ১৯ জনকেই মঙ্গলবার দুপুরে মেদিনীপুরের বিশেষ জেলা ও দায়রা আদালতে হাজির করা হয়। এসেছিলেন জামিনে মুক্ত বিমল মাহাতোও।
ত্রিলোচনের বাড়ি ওড়িশার সুন্দরগড় জেলার রৌরকেলায়। এখন তিনি চক্রধরপুর ডিভিশনের অন্তর্গত বান্ডামুণ্ডায় কর্মরত। সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থ তপস্বীর প্রশ্নের উত্তরে সহ-চালক বলেন, “ট্রেনে ২৪টি বগি ছিল। ট্রেন ছাড়ার আগে ব্রেক পাওয়ার সহ-সমস্ত কিছুই দেখা হয়। সব ঠিক ছিল। রাত ১২টা ৫০ নাগাদ ট্রেনটি খড়্গপুরে পৌঁছয়। ১২টা ৫৫ নাগাদ ট্রেনটি ফের রওনা দেয়।” তারপর? ত্রিলোচন বলেন, “খড়্গপুর ছাড়ার পর ট্রেনটি নর্মালই চলছিল। খেমাশুলি পেরোনোর পর দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলের পাশে একটি রক্ষীবিহীন লেভেল ক্রসিং রয়েছে। জোর আওয়াজ শুনতে পাই। ট্রেন নড়ে ওঠে। তখন আমি কেবিনের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। পরে নিজেকে সামলে নিই।”
সহ-চালকের বক্তব্য, ইমার্জেন্সি ব্রেক মারার পর ৩০০-৪০০ মিটার দূরে গিয়ে ট্রেনটি দাঁড়ায়। ডাউন লাইনে একটি মালগাড়ি আসছিল। কেবিন থেকেই লাল আলো দেখাই। ডাউন লাইনের উপর এক্সপ্রেসের যে বগিগুলো চলে গিয়েছিল, মালগাড়ির ইঞ্জিন সজোরে সেইগুলোয় ধাক্কা মেরে লাইনচ্যুত হয়। ত্রিলোচন আদালতকে জানান, জ্ঞানেশ্বরীর এস ৩, ৪, ৫ এবং ৬ নম্বর কোচ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধাক্কার জেরে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। রাত ৩টে নাগাদ খড়্গপুর থেকে রিলিফ ট্রেন আসে। ঘটনার পর ঝাড়গ্রাম জিআরপির কাছে যে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল, সেই অভিযোগপত্রটি লিখেছিলেন সহ-চালকই। তা মেনেই ত্রিলোচন বলেন, “হাতের লেখাটা আমার। চালক বলেছেন। আমি লিখেছি।”
এরপর অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী অজয় ঘোষ জানতে চান, অভিযোগপত্রে আপনার কোনও সই নেই। এটা ঠিক? উত্তরে ত্রিলোচন জানান, ঠিক। পরে অজয়বাবুর প্রশ্নের উত্তরে সহ-চালক বলেন, “দুর্ঘটনার ১৫-২০ দিন বাদে সিবিআই অফিসারদের সঙ্গে আমার দেখা হয়। ওঁদের ঘটনার কথা জানাই।” আজ, বুধবার সাক্ষ্য দেওয়ার কথা দুই বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অপূর্বকুমার ঘোষ এবং রোহন সিংহের। |
|
|
|
|
|