জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে মাইকে প্রচার পুলিশের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ক্ষমতায় এসে বনধ-ধর্মঘটের বিরোধিতায় তাঁর সরকারের দায়বদ্ধতার কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো বনধ নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীও বন্ধে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার আবেদন রেখেছেন। সাধারণ মানুষের উদ্দেশে সোমবারই তিনি বলেছেন, “বিরোধীদের ডাকা ধর্মঘটে আপনারা আত্মসমর্পণ করবেন না। দোকান-বাজার-স্কুল খোলা রাখুন। কোনও ক্ষতি হলে আমি ক্ষতিপূরণ দেব। আমি আপনাদের পাশে রয়েছি। আমি আপনাদের পাহারাদার।” সেই মতো বনধে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে এ বার পথে নামল পুলিশ। মঙ্গলবার পুলিশের পক্ষ থেকে মেদিনীপুর শহরে মাইকিং করা হয়। প্রচারগাড়ি শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ায়। বলা হয়, ‘আপনারা কোনও রকম প্ররোচনায় পা দেবেন না। দোকান-বাজার খোলা রাখুন। জনজীবন স্বাভাবিক রাখুন।” তমলুক, পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, ঝাড়গ্রাম-সহ দুই মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকাতেই মাইকে প্রচার করে পুলিশ। |
|
কোলাঘাটে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার ডাক পুলিশের।—নিজস্ব চিত্র। |
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ সহ বেশ কয়েক দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলো বুধ ও বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। ফলে এই দু’দিন স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ধর্মঘট ঘিরে অশান্তি এড়াতে আজ, বুধবার সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি অফিসগুলোর সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। |
|
এগরায় ধর্মঘটের সমর্থনে বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনের মিছিল।—নিজস্ব চিত্র। |
টহলদারিও চলবে। এ দিকে, বন্ধে দোকানপাট খোলা রাখার আবেদন জানিয়ে পুলিশ যে মাইকিং করেছে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। বিরোধীদের বক্তব্য, মঙ্গলবার থেকে মাদ্রাসা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সামনে মাধ্যমিক। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ এ ভাবে মাইকিং করে প্রচার করতে পারে না। স্থানীয় সিপিএম নেতা সারদা চক্রবর্তী বলেন, “পুলিশ নিজেই বিধি ভাঙছে।” তাঁর কথায়, “বনধের সমর্থনে আমরাও পথসভা করতে চেয়েছিলাম। পুলিশ-প্রশাসন জানায়, এখন মাইক ব্যবহার করা যাবে না। পরীক্ষা রয়েছে। অথচ, মঙ্গলবার দিনভর পুলিশই শহর জুড়ে মাইকিং করেছে।” একই বিতর্ক দেখা দিয়েছে ঘাটালেও। জেলার অন্য এলাকার মতো ঘাটাল শহরেও এদিন বনধের সমর্থনে-বিপক্ষে প্রচার হয়। |
|
|
ধর্মঘটের সমর্থনে মেদিনীপুরে মিছিল বামেদের। মিছিল করল তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য সরকারি
কর্মচারী সংগঠন ইউনিফায়েডও। মঙ্গলবার ছবি তুলেছেন রামপ্রসাদ সাউ। |
|
সিপিএমের ঘাটাল শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক উত্তম মণ্ডলের বক্তব্য, “আমরাও মাইক নিয়ে প্রচার করতে চেয়েছিলাম। পুলিশ-প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। অথচ, তৃণমূল মাইক নিয়ে প্রচার করল। তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হল না।” কেন? ঘাটালের মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারীর সেই একই বক্তব্য। তাঁর কথায়, “আমার কাছে লিখিত কোনও অভিযোগ আসেনি।” মঙ্গলবার খড়্গপুর থেকে ঝাড়গ্রাম, সর্বত্র মিছিল করে তৃণমূল এবং তৃণমূল প্রভাবিত বিভিন্ন সংগঠন। মিছিল থেকে বনধ ব্যর্থ করার আহ্বান রাখা হয়। বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি বলেন, “বন্ধ হলে কর্মসংস্কৃতি ভেঙে পড়ে। বাম জামানায় রাজ্যে তাই হয়েছে। আমাদের সরকার রাজ্যে কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে চায়। আমরা চাই, বুধ ও বৃহস্পতিবার জনজীবন স্বাভাবিক থাকুক। দোকানপাট-স্কুল-কলেজ খোলা থাকুক। সকলের কাছে সেই আবেদনও রেখেছি।” |
|