নন্দীগ্রামে জমি-জট
অধিগ্রহণে ফের বাধা, আপত্তি দামে
সেই নন্দীগ্রাম। আবারও জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে বাধার মুখে প্রশাসন। তবে, এ বার শিল্প নয়, রাস্তার জন্য। আপত্তিটা জমির দামে। নন্দীগ্রাম বাজারের যানজট এড়াতে বাইপাস রাস্তা করবে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ। তার জন্যই প্রায় ৩.৩৮ একর জমি অধিগ্রহণে উদ্যোগী হয়েছে হলদিয়া ভূমি অধিগ্রহণ দফতর। জমি দিতে অবশ্য আপত্তি নেই কারও। আপত্তি দামে। বলা ভাল, জমির চরিত্র অনুযায়ী নির্ধারিত দামের বৈষম্যে। সরকারি বৈঠকে সে কথা জানিয়েছেন জমি মালিকেরা। এমনকী জেলা প্রশাসনে লিখিত আবেদনও জানিয়েছেন। তবে, দাম নিয়ে কোনও আপত্তি আছে বলে মানতে রাজি নন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি। তাঁর দাবি, “জমি মালিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। কারও আপত্তি নেই।”
এখানেই তৈরি হবে প্রস্তাবিত বাইপাস।—নিজস্ব চিত্র।
নন্দীগ্রামে গিয়ে অবশ্য জমি মালিকদের অসন্তোষই নজরে এল বেশি। স্থানীয়রা জানালেন, বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা থেকে তারাচাঁদবাড় পর্যন্ত খাল বরাবর প্রায় দেড় কিলোমিটার মোরামের একটা রাস্তা ছিল। সেটাই চওড়া করে পিচের হবে। নন্দীগ্রাম, গদাইবলবাড় ও তারাচাঁদবাড় মৌজার প্রায় ১৪০ জন কৃষকের জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। জানুয়ারি মাসে দাম নির্ধারণের জন্য নন্দীগ্রাম বিডিও অফিসে জমি মালিকদের ডাকা হয়। নন্দীগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বনশ্রী খাঁড়া জানান, জলা জমির দাম ধরা হয়েছে ডেসিমেল প্রতি ২২ হাজার, বাস্তু জমির ৯০ হাজার ও বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহৃত জমির সাড়ে ১১ লক্ষ। বৈঠকে দামের এই বৈষম্যে আপত্তি জানান জমি মালিকেরা।
বাজারের কাছেই বাইপাস রাস্তার শুরুতে দাস পরিবারের চার ভাইয়ের জমি অধিগ্রহণের আওতায় পড়েছে। এর মধ্যে রাস্তার ধারে গুরুপদ দাস নামে এক ভাইয়ের হোটেল। তিনি শুধু দোকানের দু’ডেসিমেল জমির জন্য ২২ লাখ পাবেন। অথচ, ওই দোকানের পিছনেই জমি যাঁদের, সেই তিন ভাই মাত্র ২২ হাজার টাকা করে ডেসিমেল প্রতি দাম পাচ্ছেন। সরকার নির্ধারিত এই দামে তীব্র আপত্তি জানিয়ে জেলা প্রশাসনে স্মারকলিপি দিয়েছেন অন্য দুই ভাই নৃপেন্দ্রনাথ দাস ও সন্তোষকুমার দাস। আর এক ভাই পরিতোষ দাস বলেন, “এখানে ডেসিমেল প্রতি তিন-চার লক্ষ টাকা এমনিই দাম। সেখানে জলা জমি বলে ২২ হাজার টাকা ধরিয়ে দেওয়া নিতান্ত অন্যায়।” রাস্তার ধারে আর একটি দোকান অধিগ্রহণের আওতায় পড়েছে। ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি ওই দোকানের মালিক রেহানা খাতুনের ছেলের চাকরি করে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। খুশি গলায় রেহানা খাতুন বলেন, “জনগণের স্বার্থে দোকান ছেড়ে দিচ্ছে।”
কিন্তু ওই এক-দু’জনই। শেখ মুনাব্বরতুল্লা, আয়ুব খান, দীপক দাস, তপন দাস-সহ অধিকাংশ জমি মালিকই সরকারি দামে সম্মত নন। তাই গত ২৪ জানুয়ারি জেলা প্রশাসনের সভাঘরে ১০ জন জমি মালিককে নিয়ে ফের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে দাম মেনে নেওয়ার জন্য মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয় বলেও অভিযোগ জমি মালিকদের। নৃপেন্দ্রনাথ দাস, আসগর মহম্মদ বলেন, “আমরা জমির বেশি দাম চাইলে শুভেন্দুবাবু বলেন জনগণের জন্য রাস্তা বানানো হবে। জমি না দিলে জনগণ বুঝে নেবে। সাংসদের এই কথায় আমরা উদ্বেগে রয়েছি।”
শুভেন্দু মন্তব্য করতে চাননি। তবে, নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সহ-সভাপতি আবু তাহের দাবি করেন, “জমি মালিকরা সম্মতি জানিয়েছেন। সিপিএমের কিছু লোক বিরোধিতা করছে শুধু।” এইচডিএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠ অবশ্য প্রকাশ্যে রাস্তা তৈরির এই উদ্যোগকে ‘সাধুবাদ’ জানিয়েছেন। সঙ্গে তাঁর খোঁচা, “তৃণমূল রাজনৈতিক দ্বিচারিতা করছে। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় ওরা বলেছিল কোনও জমি অধিগ্রহণ করতে দেবে না। এখন যদি দু’জনও আপত্তি জানান, ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না কেন?” আর প্রশাসন কী ভাবছে? বাধা উপেক্ষা করেই কী রাস্তা হবে?
এইচডিএ-র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক পি উলগানাথনের সংক্ষিপ্ত জবাব, “বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নন্দীগ্রামে বাইপাস রাস্তা হবেই।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.