নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
নিয়ম বলছে ৬৫ ডেসিবলের বেশি জোরে শব্দ বাজানো যাবে না। তার উপর আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা। কলেজ কর্তৃপক্ষও তাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার পক্ষে মত দেন। কিন্তু রাজ্যের শাসক দলের ছাত্র সংগঠন তার পরোয়া করেনি। মাধ্যমিক পরীক্ষার মুখে মঙ্গলবার থেকে ৩৬০০০ ওয়াটের ‘সাউন্ড বক্স’ বাজিয়ে তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে থাকা ছাত্র সংসদ শিলিগুড়ি কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠান শুরু করেছে। এ দিন দুপুর গড়াতেই অনুষ্ঠান শুরু থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত প্রচণ্ড শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। ২ দিন ধরে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তার পর বৃহস্পতিবারও শিলিগুড়ি কমার্স কলেজে ওই ছাত্র সংগঠনের দখলে থাকা ছাত্র সংসদ তাদের বার্ষিক অনুষ্ঠান করবে। সব মিলিয়ে ৩ দিন ধরে পাড়া কাঁপিয়ে ব্যান্ডের গান, নাচে বেলা ২ টা থেকে রাত পর্যন্ত ওই অনুষ্ঠানের জেরে এলাকার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। কলেজের কাছেই বাড়ি খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের। বাঘা যতীন পার্কে মেলা, মাইক বাজানো নিয়ে আগেও বাসিন্দাদের আপত্তিতে তিনি সাড়া দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ দিন সকালে তাই বাসিন্দাদের অনেকে তাঁর বাড়িতে যান কলেজের অনুষ্ঠান নিয়ে অভিযোগ জানাতে। উপনির্বাচনের প্রচারে তিনি মালদহে থাকায় তাঁরা ফিরে আসেন। |
শিলিগুড়ি কলেজের ছাত্র সংসদের বার্ষিক অনুষ্ঠান। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
রাতে খবর পেয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, ‘‘মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সমস্যা যাতে না হয় সে জন্য অনুষ্ঠান প্রয়োজনে সংক্ষিপ্ত করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করতে বলা হয়েছে।” উদ্যোক্তা ছাত্র সংগঠনের দাবি, ছাত্র সংসদের ভোটের আগেই তারা অনুষ্ঠান করেন। কিন্তু আগামী ৬ মাসের মধ্যে কলেজে কোনও নির্বাচন হবে না এ দিনই তারা জানতে পেরেছেন। আগে জানলে মাধ্যমিক এবং কলেজের পরীক্ষার পরেই তারা অনুষ্ঠান করতেন।
এ ভাবে মাধ্যমিকের পড়ুয়ারা বিপাকে পড়ায় পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠেছে। শুধু তাই নয় কলেজের ওই অনুষ্ঠানের জন্য দুপুরের পর থেকে কলেজ লাগোয়া রাস্তায় ব্যারিকেড বসিয়ে বন্ধ করে দেয় পুলিশ। তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ মণ্ডল বলেন, “পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে নিয়ম মেনেই অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। ২২ এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠান করার কথা ভাবা হয়েছিল। মাধ্যমিক পরীক্ষা আগে ওই সময় পুলিশ প্রশাসন অনুমতি দেবে না। তাই আগেই করতে হয়েছে।” শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মাধ্যমিকের ৩ দিন আগে থেকে মাইক, সাউন্ড বক্স বাজিয়ে কোনও অনুষ্ঠান করা যাবে না। শিলিগুড়ি কলেজের ছাত্র সংসদের তরফে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চাইলে তাদেরও জানিয়ে দেওয়া হয়। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার বলেছেন, “নিয়ম মেনে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ মোতায়েন থাকছে। নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে তাদের মাইক, সাউন্ড বক্স বাজাতে বলা হয়েছে।”
বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় কলেজ কর্তৃপক্ষও। কলেজের অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেই পরীক্ষার মুখে এ ভাবে অনুষ্ঠান করার পক্ষে নন। কলেজের অনুষ্ঠান নিয়ে সোমবার শিলিগুড়ি থানায় পুলিশ আধিকারিক বৈঠক ডাকেন। সেখানে কলেজ কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যার আগেই অনুষ্ঠান শেষ করতে মত দেন। বিরোধী ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের তরফে তা জানানো হয়। কলেজের অধ্যক্ষ মলয় করঞ্জাই বলেন, “সন্ধ্যার মধ্যেই অনুষ্ঠান শেষ করতে বলে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাত বাড়লে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হতে পারে। কোনও কারণে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে তখন কলেজ কর্তৃপক্ষকেই দায় নিতে হয়। তা ছাড়া সাউন্ড বক্সের শব্দ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলা হয়েছিল।”
বাস্তবে তা যে নিয়ন্ত্রণে থাকেনি তা এলাকার বাসিন্দারা টের পেয়েছেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে বিষয়টি আঁচ করে ছাত্র সংগঠনকে তাড়াতাড়ি অনুষ্ঠান শেষ করতে অনুরোধ করা হয়। তাতে অবশ্য কাজ হয়নি। বিরোধী এসএফআই ছাত্র সংগঠনের জেলা সম্পাদক সৌরভ দাস জানান, তাঁরা যখন ছাত্র সংসদে ছিলেন তখন সন্ধ্যার আগেই অনুষ্ঠান শেষ করতেন। তা ছাড়া মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যত ভাবা উচিত। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের একটি সূত্রই জানিয়েছে, এ ধরনের অনুষ্ঠানে সাউন্ড বক্স-এর শব্দ সীমার মধ্যে রাখতে বলা হয়েছে। পুলিশেরই বিষয়টি দেখা দরকার। কলেজের অনুষ্ঠানে ৪৮টি সাউন্ড বক্স বজালে যে শব্দ হচ্ছে তা নির্ধারিত সীমার বহুগুণ বেশি।
|