প্রসঙ্গ: হাতি-মানুষ সংঘাত
ভারত-নেপাল বৈঠক
ভারত-নেপাল সীমান্তের মানুষ-হাতি সংঘাত মেটাতে কেবলমাত্র বৈঠক করে কাগজে কলমে পরিকল্পনা তৈরি করলে সমস্যা কোনদিনই মিটবে না বলে মনে করছেন উত্তরবঙ্গের পশুপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবীরা। এরজন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের তরফে আন্তরিক উদ্যোগের পাশাপাশি দুই দেশের স্বেচ্ছাসেবীদের একযোগে কাজে নামানো প্রয়োজন বলে তাঁরা মনে করছেন। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে ডব্লুডব্লুএফের তরফে দুই দেশের বন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকের পর ওই দাবি আরও জোরাল হয়েছে। সমস্যার সমাধানে একটি চূড়ান্ত ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরির লক্ষ্যে এদিন বৈঠকটি ডাকা হয়। এর আগে আরও ছয়বার বৈঠক হয়েছে বলে উদ্যোক্তারাই জানিয়েছেন।
বন দফতর সূত্রের খবর, দুই দেশের যৌথ নজরদারি, প্রচার সচেতনতা, নেপালে ওয়াইল্ড লাইফ গঠন, সীমান্ত রাস্তা তৈরি, ব্যাটারি বিদ্যুৎ চালিত ফেন্সিং, হাতিদের জন্মনিয়ন্ত্রণ, সীমান্তে ফসলের ধরণ পাল্টানো-মত একগুচ্ছ পরিকল্পনা বৈঠকে নেওয়া হয়েছে। তাতে নেপালের বন দফতরের পাশাপাশি রাজ্যের বন দফতরের বড় ভূমিকা থাকবে ঠিক হয়। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) সীতাংশু বিকাশ মণ্ডল বলেন, “দুই দেশের সীমান্তে মানুষ-হাতি সংঘাতের সমস্যা দীর্ঘদিনের। ডব্লুউ ডব্লুউ এফকে আমরা একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে বলেছিলাম। সেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলে দ্রুত কাজ করা হবে। তবে বিষয়টি যেহেতু দুই দেশের তাই আমরা কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রককে সবকিছু জানিয়েছি।”
তবে বৈঠকে উঠে আসা পরিকল্পনাগুলি আদৌও কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সন্দিহান প্রশুপ্রেমীরা। যেমন হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের (ন্যাফ) মুখপাত্র অনিমেষ বসু জানান, হাতিরা ভৌগলিক সীমানা বোঝে না। তাই বরাবর এপার থেকে ওপারে যাতায়াত লেগেই থাকে। আর এই জায়গায় ফসলকে ঘিরে মানুষের সঙ্গে তাদের সংঘাত। কিন্তু শুধু পরিকল্পনা তৈরি করলে হবে না, এর বাস্তবায়ন দরকার। দীর্ঘদিন ধরে তা ঠিকঠাক হচ্ছে না। দুই দেশের সাধারণ মানুষ, স্বেচ্ছাসেবীদের মাঠে ময়দানে কাজে না লাগালে কাজের কাজ কিছুই হবে না। পরিকল্পনা কাগজে কলমেই থাকবে। কার্যত একই বক্তব্য আলিপুরদুয়ার পিপলস ফর অ্যানিমেলস-র মুখপাত্র জয়দেব দেব’রও। তিনি বলেন, “আমরা প্রাণীদের নিয়ে কাজ করি। বাস্তবের সমস্যাগুলি দেখথে পাই। কিন্তু সরকারি স্তরে যখন পরিকল্পনা তৈরি হয়, তখন বরাবর তা ঠান্ডা ঘরে অফিসারেরা বসে তৈরি করেন। বৈঠক করেন। স্বেচ্ছাসেবী, এলাকার বাসিন্দাদের সামিল করা হয় না।”
অনিমেষবাবু ও জয়দেববাবুরা জানান, সীমান্তে ধান-ভুট্টার ফসলের বদলে সুপারি, হলুদ, গোলমরিচ চাষ, নেপালে স্কোয়াড তৈরি, যৌথ নজরদারি, জন্মনিয়ন্ত্রণ মত বিষয়গুলি সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ যেমন প্রয়োজন। তেমনি অনেক ক্ষেত্রে যে ধরণের পরিকল্পনার কথা বলা হয়, তার বাস্তবায়িত করার পরিকাঠানোই নেই। সেগুলি আগে তৈরি করতে হবে। তেমনিই সীমান্তের মানুষকে বোঝাতে দুই তরফে স্বেচ্ছাসেবীদের সাহায্য নেওয়াটা দরকার। পুরোটাই একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আওতায় না হলে কিছুই হবে না। মানুষের সহযোগিতার কথা স্বীকার করে নিয়েছে নেপালের বন দফতরের আধিকারিক বিষ্ণু ভান্ডারি। তিনি বলেন, “মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উপরেই বেশি জোর দিয়েছি।”
অসম থেকে দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ির জেলা ধরে হাতির পাল প্রতি বছর নেপালে ঢোকে। মূলত ভুট্টা এবং ধানের লোভে হাতিরা মূলত নেপালের ঝাপা, সুনসারি এবং মোরাং জেলায় বিস্তীর্ণ এলাকায় ঢোকে। ৫০-৮০টি হাতির দল একযোগে নেপালে ঢুকে যায়। এর পরে গুলি, তির এবং হামলার শিকার হতে হয় হাতিদের। নেপালের তরফে সবসময় বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। উত্তরবঙ্গে বর্তমানে ৫৫০- ৬০০ হাতি রয়েছে। এরমধ্যে ১০০ মত হাতি নেপালে যাতায়াত করে থাকে। এর জেরে প্রতিবছর ১০ জন মানুষ এবং কমকরে ৪টি হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে। গত বছর মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১২। হাতি মারা গিয়েছে ২টি। সরকারি হিসাব অনুসারে, গত দুই দশকে ভারত- নেপাল সীমান্তে ২৪টি হাতির মৃত্যু হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.