পায়ে ধারালো কাঁইত। মাথার ঝুঁটি দুলিয়ে গলার লোম ফুলিয়ে তাগড়াই মোরগটা লাফিয়ে পড়ল বিপক্ষের মোরগটার উপর। চারপাশে ঘিরে ধরা জনতা চিৎকার করে উঠল। অনেকেই নিজেদের বাজি ধরা মোরগটার রঙের নাম ধরে গলার শিরা ফুলিয়ে চিৎকার করছিলেন। কারণ পছন্দের মোরগ বিপক্ষের মোরগকে কুপোকাত করলেই তাঁদের হাতে বাজির টাকা চলে আসবে।
মোরগ লড়াইয়ের এই বাজার ধরতে নেমে পড়েছে দক্ষিণী মোরগরাও। তামিলনাড়ু থেকে কেরালা, অন্ধপ্রদেশের গ্রামে গ্রামে ঢুঁ মেরে মোটা টাকা খসিয়ে তাগড়াই চেহারার মুরগিদের কিনে আনছেন অনেক লড়াই রসিক। বলবর্ধক ওষুধ খাইয়ে (ভাগ্যিস লড়াইয়ে নামা মোরগের ডোপ টেস্ট হয় না) সেই মোরগকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশি মোরগকে ঘায়েল করতে। তবে দেশিদের তেজও কম নয়। মোরগদের ভাষাগত সমস্যা নেই। কুরুক..কু...করতে করতে তারা জোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। |
সম্মুখ সমরে। ছবি: প্রদীপ মাহাতো। |
মালিকের মুখ রক্ষা করা দক্ষিণী এই মোরগদের খাতির অবশ্য কম নয়। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার হুড়ার জোড়গোড়া শিমূলডাঙা ফুটবল ময়দানে বসেছে দু’দিনের মোরগ লড়াইয়ের আসর। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তো বটেই, লোক এসেছে বোকারো, ধানবাদ, গালুডি, ঘাটশিলা, ময়ূরভঞ্জ থেকেও। গাড়ি থেকে মোরগ কোলে নামতে নামতে গালুডির পেলুরাম হাঁসদা বলছিলেন, “আজকের দিনে এই মোরগ সত্যিকারের ভিআইপি। পথের ধকল যাতে ওর কম হয়, তাই গাড়ি ভাড়া করেই চলে এলাম।” হুড়া ব্লকের নডিহা গ্রামের শান্তিরাম মাহাতোও ভাড়া গাড়িতে তাঁর প্রিয় মোরগকে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “দুর্গাপুজোর সময় ভেল্লোর থেকে বেশ কয়েক হাজার টাকা দিয়ে কটকি প্রজাতির এই মোরগ কিনে এনেছি। একে গাড়ি ছাড়া আর কিসে নিয়ে আসব?” ৩০ বছর ধরে মোরগ লড়াইয়ে অভিজ্ঞ শান্তিরামবাবুর দাবি, “এই প্রজাতির মোরগরা শক্তিশালী হয় ও লড়তে জানে। দেশি মোরগ এর ধারেকাছে আসে না।” আসানসোলের মকরু মাহাতো মোরগ এনেছেন কেরল থেকে। তিনি বলেন, “আমি ওয়ালটেয়ার প্রজাতির মোরগ এনেছি। এই মোরগের লড়াই যে না দেখেছে, তাঁর কিছুই দেখা হয়নি।”
জখম মোরগের চিকিৎসার ব্যবস্থাও বেশ খাসা। সূঁচ-সুতো আর ওষুধে ভেজা তুলো নিয়ে ‘ডিসপেনসারি’ সাজিয়ে মাঠের একপাশে সতরঞ্জি বিছিয়ে বসেছিলেন ক্ষীরোদ হেমব্রম। বলছিলেন, “মানুষ চায় বলেই এসেছি।” লড়াইয়ের অন্যতম উদ্যোক্তা সুশীলকুমার মাণ্ডি বলেন, “৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে এই আসর বসছে। তবে ইদানিং দেশি মোরগদের সঙ্গে দক্ষিণী মোরগরাও ভালই লড়াই দিচ্ছে। হাজারে হাজারে লোক দেখতে আসছেন।” |