সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
পাঁচটা বেড়ালের জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা। তার পরে বেড়াল-পিছু ১২০০ টাকা। কিংবা প্রথম থেকেই বেড়াল পিছু ১০০০ টাকা।
এসএসকেএম জুড়ে রাজত্ব করা অগুনতি বেড়াল ধরতে এমনই দর হেঁকেছে দুই সংস্থা। যা শুনে মাথায় হাত কর্তৃপক্ষের। আলাদা কোনও খাতে বরাদ্দ নেই। তা হলে কোথা থেকে আসবে এত বড় হাসপাতালের এতগুলি বিভাগে দাপিয়ে বেড়ানো এত বেড়াল ধরার টাকা?
কেউ বলছেন, রোগী-কল্যাণ সমিতি থেকে দেওয়া হোক। কারণ বেড়াল ধরার সঙ্গে আদতে তো রোগী নিরাপত্তার বিষয়টিই জড়িত। আবার অন্য মতের লোকজনও রয়েছেন। তাঁদের যুক্তি, যে টাকায় রোগীর ওষুধ বা চিকিৎসার সরঞ্জাম কেনা হয়, তা মার্জারকুলের জন্য ব্যয় করা আসলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অপদার্থতাকেই স্বীকৃতি দেওয়া। এত বেড়াল এমন নির্বিঘ্নে বংশবৃদ্ধি করল কী করে, সেই আদি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেয়েছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে ‘বেড়াল হটাও’ প্রকল্প নিয়েই এখন সরগরম রাজ্যের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। |
সুপার তমালকান্তি ঘোষ বলছেন, “কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না। এত টাকা দিয়ে বেড়াল ধরানোর পরে আবার যদি কোনও খাঁজে বেড়ালের বাচ্চা হয় বা কেউ হাসপাতালে বেড়াল ছেড়ে দিয়ে যায়, তা হলে সামলাব কী করে? বারবার এমন টাকা খরচ তো আর কেউ মেনে নেবে না!” কিন্তু সরকারি হাসপাতালে বেড়ালের উৎপাত তো নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জেলা হাসপাতাল থেকে শুরু করে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত বেড়ালদের অবাধ যাতায়াত। তা হলে হঠাৎ এমন কী হল, যার জন্য এমন শোরগোল?
সেই গল্পটা শুনিয়েছেন হাসপাতালের এক কর্তা। রাজ্যের সেরা হাসপাতালের ভিআইপি ওয়ার্ডের মধ্যে দিন কয়েক আগে জন্মেছে চার খুদে। নার্সদের টেবিলের নীচে তাদের মিহি গলার কান্না শুনে সকলের চক্ষু চড়কগাছ। তা হলে এই ওয়ার্ডও বাদ পড়ল না? নার্সদের থেকে খবর গেল চিকিৎসকদের কাছে। চিকিৎসক মারফত কর্তৃপক্ষ জানলেন। যে ওয়ার্ডে নেতা, মন্ত্রী-সহ নানা ক্ষেত্রের ভিআইপি-রা ভর্তি হন, সেখানে বেড়ালের আনাগোনা হলে চলবে কেন? অতএব খবর গেল বেড়াল ধরার কাজ করে, এমন নানা সংস্থার কাছে। স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ করলে টেন্ডার ডাকতে হবে। তাই সংস্থাগুলির কাছ থেকে দরপত্র চাওয়া হল। কিন্তু সেই দরপত্র পেয়েই মাথায় হাত পড়েছে সকলের। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, “ওই সংস্থা বলছে, বেড়াল ধরতে গেলে প্যাকেজে সই করতে হবে। পাঁচটা বেড়াল ধরলে ওরা সাড়ে তিন হাজার টাকা নেবে। কিন্তু এত বিভাগের বেড়াল ধরতে গেলে তো খরচ তো লাখের হিসেবে পৌঁছবে।”
শুধু উডবার্ন নয়, সার্জারি, মেডিসিন, স্ত্রী-রোগ, শিশু বিভাগ সর্বত্রই এক অবস্থা। কোথাও বেড়াল দেখলেই দূর-দূর করা হয়। আবার কোথাও রোগী বা তাঁদের পরিবারের লোকেরাই উচ্ছিষ্ট খাবার খাইয়ে দিব্যি যত্নআত্তি করেন মার্জারকুলের।
দুই সংস্থাই জানিয়েছে, বেড়াল ধরতে এর কমে রফা করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, যে কর্মীরা কাজটা করবেন, তাঁদের সুরক্ষার দিকটাও দেখতে হবে। আঁচড়ে দিলে প্রতিষেধকও লাগতে পারে। এক সংগঠনের কর্তার কথায়, “কুকুরের ক্ষেত্রেও আমাদের এমনই ‘রেট’। মাথা-পিছু ৭৫০ টাকা।” |