ক্ষতি হবে অন্তত ২০ হাজার কোটি
কেন্দ্রের আর্জি, যুক্তি উড়িয়ে বনধ দু’দিনই
প্রধানমন্ত্রীর আবেদন খারিজ করে দু’দিনের ধর্মঘটেই অনড় রইলেন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। এর ফলে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হবে বলে অনুমান বণিকসভাগুলি-র। দেশের আর্থিক ক্ষেত্র অন্তত যাতে সচল থাকে, সে জন্য আজ অর্থ মন্ত্রকের তরফে ব্যাঙ্ক কর্মচারী সংগঠনগুলির কাছে আবেদন জানানো হয়। কিন্তু সেই আর্জিও উড়িয়ে দিয়ে শ্রমিক নেতাদের দাবি, আগামী দু’দিন ব্যাঙ্ক পরিষেবাও সম্পূর্ণ অচল থাকবে। এর সঙ্গে পরিবহণ, জ্বালানি, বিমা, টেলিকম, প্রতিরক্ষা, ডাকের মতো ক্ষেত্রগুলির একটা বড় অংশই অচল থাকবে বলে আশঙ্কা। তবে রেল চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে না।
বনধ নিয়ে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কিন্তু গত কাল রাতে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সেই মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। সরকারের তরফে শ্রমিক নেতাদের বলা হয়, দু’দিন ধর্মঘট হলে উৎপাদন ধাক্কা খাবে। শ্রমিকরাও মজুরি হারাবেন। কিন্তু শ্রমিক নেতারা অনড় থাকেন। আইএনটিইউসি-সভাপতি তথা কংগ্রেস নেতা জি সঞ্জীব রেড্ডির কথায়, “সরকার এখন সময় কিনতে চাইছে। আমরা চাই নির্দিষ্ট পদক্ষেপ।” এআইটিইউসি-নেতা গুরুদাস দাশগুপ্তের কথায়, “শেষ বেলায় সরকারের ঘুম ভেঙেছে! এত দিন ভাবছিলেন, ধর্মঘটের বিশেষ প্রভাব পড়বে না। এখন আসল ব্যাপারটা বুঝতে পেরে চোখে ধুলো দিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করাতে চাইছেন।”
৪০-এর দশকে ছাত্রাবস্থাতেও বনধ, ধর্মঘট এত দেখিনি। স্বাধীনতার পর নকশাল আমল থেকেই এই সংস্কৃতি বাসা বাঁধে বলে মনে হয়। তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গই বনধ-সংস্কৃতির শিকার, এই ধারণাটি সত্য নয়।
তপন রায়চৌধুরী
আমাদের রাজনীতি চালানোর ধরনধারণ থেকেই এই বদভ্যাসটি গেড়ে বসেছে। বাংলার রাজনীতিতে বরাবর র্যাডিক্যাল ঘরানা ছিল, সেখান থেকেই বনধ-মানসিকতা। বনধে লাভ কার, এই প্রশ্নটা মানুষের মনে জাগাতে হবে।
আন্দ্রে বেতেই
বনধ সফল হয় মনোপলি বা একচেটিয়া ব্যবসার ক্ষেত্রে। পরিষেবাক্ষেত্র যত বাড়বে, মনোপলির বিস্তার কমবে। পশ্চিমবঙ্গে পরিষেবা সে ভাবে বাড়েনি, উৎপাদন শিল্পও ধুঁকছে। অর্থনৈতিক কারণেই ট্রেড ইউনিয়নের ডাকে এখানে বনধ-এর রমরমা।
বিবেক দেবরায়
টানা দু’দিনের বনধ নিয়ে ক্ষুব্ধ বণিকসভাগুলি। সিআইআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ধর্মঘটে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হবে। অ্যাসোচ্যামের প্রেসিডেন্ট রাজকুমার ধুতের বক্তব্য, এমনিতেই দেশের অর্থনীতি খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছে। এই অবস্থায় ধর্মঘটের জন্য এর থেকে খারাপ সময় হয় না। বণিকসভা ফিকি-র বক্তব্য, শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি সঙ্গত হতে পারে। কিন্তু ধর্মঘট দিয়ে কোনও সমাধান হবে না। গুরুদাসের জবাব, “অণ্ণা হজারের অনশনের চাপেই সরকার লোকপাল আইন করতে বাধ্য হয়। আবার দিল্লির গণধর্ষণের পরেই সরকার যৌন নির্যাতন বিরোধী আইন কড়া করতে বাধ্য হয়। আমরাও সরকারকে সেই ভাবে চাপে ফেলতে চাইছি।”
আজ অর্থ মন্ত্রকের তরফে ব্যাঙ্ক কর্মচারী সংগঠনগুলির কাছে ধর্মঘটে যোগ না দেওয়ার আবেদন জানিয়ে বলা হয়, শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবিদাওয়ার সঙ্গে ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের সম্পর্ক নেই। ব্যাঙ্কগুলিতে প্রতি বছরই নিয়োগ হচ্ছে। কর্মচারীদের সামাজিক সুরক্ষা আছে। তারা পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, বোনাস পান। কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্মচারী সংগঠন আইবিএ-র সহ-সভাপতি বিশ্বাস উটাগি বলেন, “আমাদের ধর্মঘট সরকারের শ্রমিক-বিরোধী নীতির প্রতিবাদে।” তেল সংস্থাগুলির শ্রমিকরাও ধর্মঘটে নামায় পেট্রোল পাম্প, এমনকী বিমানের জ্বালানিতেও টান পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেন্দ্র তাই বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে বলেছে।
কেন এমন ধর্মঘটে শ্রমিক সংগঠনগুলি? শ্রমিক নেতাদের বক্তব্য, সরকার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ করুক। ডিজেলের মতো পণ্যের সরকার নির্ধারিত মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও আপত্তি তাঁদের। কর্মসংস্থান, শ্রমিক আইন কার্যকর, সংগঠিত-অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা, বিলগ্নিকরণ বন্ধ, ১০ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি, ঠিকা নিয়োগ বন্ধের মতো দাবিও তুলেছে সিটু-আইএনটিইউসি-এআইটিইউসি-বিএমএস-সহ শ্রমিক সংগঠন।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্র কী বলছে? শ্রম মন্ত্রকের বক্তব্য, সরকার ঠিকা শ্রমিক নিয়ন্ত্রণ আইন, ন্যূনতম বেতন আইন এবং অন্যান্য শ্রম আইনে সংশোধনী আনতে আগ্রহী। কিছু দিনের মধ্যেই জাতীয় কর্মসংস্থান নীতি ঘোষণা হবে। শ্রমিক নেতাদের পাল্টা যুক্তি, শ্রম মন্ত্রক যা-ই বলুক, বাণিজ্য মন্ত্রকই এ সব আইন সংশোধনের বিরোধিতা করছে। কর্পোরেট সংস্থাগুলিও এর বিরুদ্ধে। সরকার কিছু করতে পারবে না। তাঁদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর গড়ে দেওয়া মন্ত্রিগোষ্ঠীর সদস্য হয়েও সোমবার রাতের বৈঠকেই আসেননি অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। এর থেকেই সরকারের সদিচ্ছা বোঝা যায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.