পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ড
চার্জ গঠন কোর্টের, মূল অভিযুক্তেরা কিন্তু অধরাই
ক বছর পেরিয়ে গেলেও প্রধান দুই অভিযুক্ত এখনও ‘ফেরার’। তার মধ্যেই পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু হতে চলল। মূল দুই অভিযুক্ত কাদের খান এবং আলিকে গ্রেফতার করতে না পারায় তাদের বিরুদ্ধে এখনও চার্জ গঠন করা যায়নি। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, মূল অভিযুক্তদের কাছে আদৌ পৌঁছনো যাবে কি না।
পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডে ধৃত তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার চার্জ গঠন করেছে আদালত। বিচার শুরু হবে আগামী ২ মার্চ। চার্জশিটের প্রথম সাক্ষী ওই দিন আদালতে হাজির হবেন। দ্রুত এই মামলার বিচার শেষ করতে দু’পক্ষের আইনজীবীর সহযোগিতা চান তৃতীয় ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক। উল্লেখ্য, ধর্ষণ-মামলায় দ্রুত বিচার-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সম্প্রতি নিম্ন আদালতগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
এ দিকে, এ দিনই দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন অর্ডিন্যান্সের দিকে নজর রেখে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ মামলার বিচার হোক বলে আর্জি ওঠে আদালতে। এ দিন তৃতীয় ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক মধুছন্দা বসুর এজলাসে এই আবেদন জানান অভিযোগকারিণীর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা। তিনি বলেন, শুনানির সময়ে অভিযোগকারিণীকে ‘সম্মানহানিকর’ কোনও প্রশ্ন করা যাবে না বলে নয়া অর্ডিন্যান্সে বলা হয়েছে। মহিলার অতীতে শারীরিক সম্পর্কের কোনও প্রসঙ্গ নিয়েও প্রশ্ন অনুচিত। বিচারক জানান, অর্ডিন্যান্সটি দেখার পরে এই বিষয়ে তাঁর মতামত জানাবেন তিনি।
মহিলাদের যৌন হেনস্থার বিচারের ক্ষেত্রে নতুন অর্ডিন্যান্স (ক্রিমিনাল ল’ অ্যামেন্ডমেন্ট অর্ডিন্যান্স, ২০১৩) তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। গত ৩ তারিখ তাতে সই করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
এ দিন কাঠগড়ায় হাজির রুমান খান, নাসির খান ও সুমিত বজাজকে তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির কোন ধারায় চার্জ গঠন হচ্ছে, তা পড়ে শোনান সরকারি আইনজীবী সর্বাণী রায়। ধৃত তিন জনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের ধারায় চার্জ গঠন হয়েছে। তা ছাড়া, রুমান এবং নাসিরের বিরদ্ধে মারধর এবং হুমকির অভিযোগও আনা হয়েছে। ঘটনার সময়ে সুমিত গাড়ি চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ থাকায় তার বিরুদ্ধে শেষ দু’টি ধারায় চার্জ গঠিত হয়নি।
চার্জ গঠন যে ধারায়
অভিযুক্ত ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা শাস্তি
রুমান খান
ও নাসির খান
গণধর্ষণ (৩৭৬-২জি)
কম করে ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। জরিমানা।
অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, (১২০বি) ৬ মাস থেকে যাবজ্জীবন
কারাদণ্ড। জরিমানা।
হুমকি (৫০৬) সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড। জরিমানা।
মারধর (৩২৩) ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড। জরিমানা।

সুমিত বজাজ গণধর্ষণ কম করে ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। জরিমানা।
অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ৬ মাস থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। জরিমানা।
পার্ক স্ট্রিট মামলায় পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বারবারই প্রশ্ন উঠেছে। মহিলার অভিযোগ, ঘটনার চার দিন পরে, অর্থাৎ গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি পার্ক স্ট্রিট থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে তাঁকে আমল দেওয়া তো হয়ইনি, উল্টে দুই পুলিশকর্মী তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। অভিযোগ নেওয়ার পরেও ঠিক সময়ে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা না করানোর অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। পরবর্তী কালে এই ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসে লালবাজার। তদন্তভার হাতে নেয় গোয়েন্দা বিভাগ।
পুলিশি তদন্ত চলাকালীনই মহাকরণে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একে ‘সাজানো ঘটনা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনারও তখন কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই সুর মিলিয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, রাজ্য সরকারের কয়েক জন মন্ত্রী, সাংসদ প্রকাশ্যে ধর্ষিতার চরিত্র-পেশা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। পুলিশের একাংশের মতে, ১৮ ফেব্রুয়ারি তিন অভিযুক্তের গ্রেফতারের ঘটনা মুখ্যমন্ত্রীর ‘সাজানো ঘটনা’র তত্ত্ব কার্যত খারিজ করে দিয়েছিল। তার জেরে এপ্রিল মাসে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধানের পদ থেকে বদলি হতে হয় দময়ন্তী সেনকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতেই পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ-মামলায় ‘ত্রুটিপূর্ণ’ নথি দাখিল করে সুপ্রিম কোর্টে ভর্ৎসনার মুখে পড়ে রাজ্য সরকার। ‘ওই নথি ৫০ ফুট দূরে ছুড়ে ফেলার যোগ্য’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিরা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.