১০০ দিন কাজের প্রকল্পে টাকা আত্মসাতের চেষ্টা, মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েতের এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্টের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করল ব্লক প্রশাসন। ঘটনাটি ঘটেছে ময়ূরেশ্বরের দাশপলশা পঞ্চায়েতে। প্রধান অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১-১২ অর্থবর্ষে ওই পঞ্চায়েত এলাকায় মল্লিকপুকুরে মাটি কাটা এবং একটি নালা সংস্কারের জন্য ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে প্রায় ২ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। ওই বছরই সমস্ত টাকা পরিশোধ হলেও বর্তমান বছরে ১৮ হাজার টাকার ভুয়ো মাস্টার রোল জমা পড়ে বলে ব্লক প্রশাসন তদন্তে জেনেছে। সম্প্রতি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের বিডিও-র কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগে দাবি করা হয়, স্থানীয় সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য ফরিদা বিবি জব ওয়ার্কারদের সঙ্গে যোগসাজস করে ভুয়ো মাস্টার রোলে দলীয় জবকার্ডধারীদের নামে টাকা তুলে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্য অবশ্য ওই অভিযোগ মানেননি। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে ওই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তদন্তের পর মঙ্গলবার ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে পঞ্চায়েত প্রধান, বিজেপি-র প্রতিমা বাগদি এবং এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট নন্দদুলাল মালের বিরুদ্ধে ময়ূরেশ্বর থানায় লিখিত অভিযোগ দা।রে করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে কোনও কাজ হওয়ার পর মজুরদের মাস্টার রোলে প্রধান, এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট ও নির্মাণ সহায়কের স্বাক্ষর থাকা আবশ্যক। কিন্তু পুকুর কাটার কাজে নির্মাণ সহায়কের কোনও স্বাক্ষর ছিল না বলে ব্লক প্রশাসনের তদন্তে ধরা পড়েছে। তা সত্ত্বেও ওই পুকুর কাটার কাজে প্রায় ১৮ হাজার টাকা মজুরদের নামে সংশ্লিষ্ট পোস্ট অফিসে পাঠিয়েও দেওয়া হয়। ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের যুগ্ম বিডিও মলয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর সেই টাকা অবশ্য পঞ্চায়েতের তহবিলে ফিরিয়েও দেওয়া হয়।
ব্লক প্রশাসনেক শো-কজের জবাবে প্রধান ও এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট দাবি করেন, পোস্ট অফিস থেকে টাকা ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মলয়বাবু বলেন, “আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, পোস্ট অফিস থেকে কোনও টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। আসলে ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে অভিযুক্তেরা নিজেরাই টাকা ফেরত দিয়ে প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়েছেন।” ওই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্মাণ সহায়ক কার্তিক মণ্ডল জানিয়েছেন, “আমি ওই কাজের ব্যাপারে কিছু জানি না। তাই কিছু বলতে পারব না।” বারবার চেষ্টা করা হলেও এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্টের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। পঞ্চায়েত থেকে বলা হয়, তিনি ছুটি নিয়েছেন। ঘটনাচক্রে পঞ্চায়েতটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে সিপিএমের। কিন্তু সংরক্ষিত পদে তাদের দলীয় কোনও প্রাথীজ্ঞ না থাকায় প্রধান হন, বিজেপি-র প্রতিমা বাগদি। তিনি বলেন, “আমি স্বল্প শিক্ষিত। তাই অত বুঝি না। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি আধিকারিকেরা যেখানে বলেন, সেখানে স্বাক্ষর করে দিই মাত্র। যদি কিছু দুর্নীতি হয়ে থাকে, তার জন্যই তাঁরাই দায়ী।”
মলয়বাবু বলেন, “নালা সংস্কারের ব্যাপারে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু পুকুর কাটার মাস্টার রোলে নির্মাণ সহায়কের কোনও স্বাক্ষর ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী ১০০ দিনের কাজে প্রধান, জব অ্যাসিস্ট্যান্টের পাশাপাশি নিমার্ণ সহায়কের স্বাক্ষর থাকা দরকার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নির্মাণ সহায়ককে অন্ধকারে রেখেই প্রধান ও এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট ওই প্রকল্পের চেকে স্বাক্ষর করেছিলেন। তাই তাঁরা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না। পাশাপাশি পোস্ট অফিস থেকে টাকা ফেরত নেওয়ার ভুল তথ্যও দিয়েছেন। সমস্ত বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। এরপর পুলিশ যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।” পুলিশ জানায়, তদন্তের পর এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। |