অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় • নলহাটি |
ছিলেন খোশমেজাজে। অন্তত মুখ দেখে তো কিছুই বোঝার উপায় নেই! আত্মবিশ্বাসী ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ’। পরনে সাদা কুর্তা ও পাজামার সঙ্গে ট্রেডমার্ক স্নিকার। মুখে আলগা হাসি।
স্থান: বীরভূমের মুরারই থানার রুদ্রনগর গ্রাম। সময়: মঙ্গলবার বিকেল চারটে। পাত্র: রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম।
হুড খোলা জিপ আগে থেকেই মজুত ছিল গ্রামের চাতরা-হিয়াটনগর রাস্তার ধারে। জড়ো হয়েছিলেন শতাধিক তৃণমূল কর্মী। ববি পৌঁছতেই স্লোগান উঠল, “ববি হাকিম জিন্দাবাদ। তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ।” জিপে ববির পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূল বিধায়ক তথা অভিনেতা চিরঞ্জিত। কখনও রাস্তার ধারে ছেলে কোলে বধূদের দেখে দুই আঙুলে ‘ভি’ দেখিয়ে ববি বললেন, “বৌদি, জোড়া ফুল তো?” রাস্তার ধার থেকে কেউ কেউ বলে উঠল, “ববিদা আস্সালাম আলাইকুম।” হাসিমুখে জবাব এল, “ওয়া-আলাইকুম আস্সালাম।” সংখ্যালঘু মহল্লায় গিয়ে বৃদ্ধদের উদ্দেশে বলেছে, “চাচা আদাব, চাচা সালাম।” প্রায় এক ঘণ্টার রোড-শোয়ে অবশ্য জিপ থেকে একবারও নামেননি ববি। এড়িয়ে গিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে। |
চিরঞ্জিতের সঙ্গে ভোটের প্রচারে ববি হাকিম। মঙ্গলবার রুদ্রনগরে।—নিজস্ব চিত্র। |
এ দিন ববি রুদ্রনগর-সহ নলহাটি বিধানসভা এলাকার অন্তর্গত একাধিক গ্রামে রোড-শো করেছেন। করেছেন গোটা চারেক সভাও। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের পর থেকেই ববির ক্ষমতা খর্ব করা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কত না জল্পনা চলছে। অথচ এমন একটা সময়ে বিধানসভা উপ-নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ববিকে সামনের সারিতে রেখে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
দলের তরফে নলহাটির ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত অবশ্য ববিই। এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি এখানে এসে সলমন রুশদিকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। এর পরেই ১২ তারিখ ঘটে গার্ডেনরিচ-কাণ্ড। নানা মহল থেকে কথা ভাসানো হচ্ছিল, ববিকে আর নলহাটির দায়িত্ব দেওয়া হবে না। ববি আর এখানে আসবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে পড়েছিলেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও। শেষ পর্যন্ত ববি আসায় নিচুতলার তৃণমূল কর্মীরা অনেকটাই চাঙ্গা। |
কৌতূহলী। দোরগোড়ায় নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। এসে পৌঁছেছে বাহিনী। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম। |
এ দিন রুদ্রনগরে জিপে চাপার আগে সাংবাদিকরা ঘিরে ধরেছিলেন ববিকে। কোনও প্রশ্ন করার আগেই পুরমন্ত্রী বলে দেন, “এখন না। পরে হবে ভাই।” জিপের পাশে হাঁটতে হাঁটতে অবশ্য প্রশ্ন করার সুযোগ মিলল“ববিদা, ভাল তো!” উত্তর এল, “ভাল আছি। কিন্তু বিপ্লব (নলহাটির তৃণমূল প্রার্থী বিপ্লব ওঝা) কোথায়? ওকে তো দরকার ছিল!” পরের প্রশ্ন, “সোমবার নলহাটির সভায় অশোক ঘোষ তো আপনাকে ‘কুলাঙ্গার’ বলেছেন।” ছক্কা মারার ভঙ্গিতে বল উড়িয়ে হাল্কা হেসে ববির জবাব, “ছাড়ুন তো! অনেকে অনেক কথা বলে। ওঁর বয়স হয়েছে। জানেনই তো, পাগলে কিনা বলে, ছাগলে কিনা খায়!”
কথোপকথন অবশ্য বেশিদূর গড়াল না। একদল তৃণমূল কর্মী রে রে করে এসে বললেন, “ববিদা উনি আনন্দবাজারের লোক।” ববির মুখের অভিব্যক্তিতে দ্রুত বদল। আর কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে যান। কিছু বলার আগেই তৃণমূল কর্মীরা টেনে সরিয়ে দিলেন জিপের পাশ থেকে। এখানে রোড শো শেষ হয় পৌনে ৫টা নাগাদ। সাংবাদিকরা ফের এগিয়ে যান প্রশ্ন করতে। কিন্তু ববি এ বারও তাঁদের এড়িয়ে যান। পরের গন্তব্য রুদ্রনগর সলংগ্ন বোনহা গ্রাম। সেখানে মিনিট পনেরোর বেশি থাকেননি ববি।
এর পরে বোনহা গ্রামে। সেখানেও মিনিট পনেরোর বেশি থাকেননি। পরের গন্তব্য নলহাটির কয়থা গ্রাম। যেখানে তখন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙছে জনতার। কারণ ববি-চিরঞ্জিতের আসার কথা ছিল বিকেল ৩টেয়। উত্তেজিত জনতা তৃণমূল কর্মীদের লক্ষ করে ঢিল-পাটকেল ছোড়া হয়। পিঠে ঢিলের ঘা খান লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মণিরুল ইসলামও। ববি-চিরঞ্জিত সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ কয়থায় গিয়ে সভা করার পরে জনতা শান্ত হয়। |