প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের চেষ্টায় জুড়ল বিচ্ছিন্ন রামায়ণ |
এত দিন ধরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল অবিচ্ছেদ্য একটি পাণ্ডুলিপির দু’টি অংশ। তাও আবার যে সে পাণ্ডুলিপি নয়, অত্যন্ত সূক্ষ্ম ভাবে এবং যত্ন করে রচিত সচিত্র রামায়ণ। দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের এবং ইংল্যান্ডের পৃথক সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত ছিল তারা।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের ভারত সফরের সময় ব্রিটিশ লাইব্রেরির পক্ষ থেকে আজ ঘোষণা করা হল, রামায়ণের অংশ দু’টিকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে একত্রিত করা হবে। কোনও প্রাচীন গ্রন্থের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির প্রয়োগ এই প্রথম। সপ্তদশ শতকে মেবারে রচিত সচিত্র পাণ্ডুলিপিটির ৮০ শতাংশ রাখা ছিল লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে। বাকি অংশ সংরক্ষণ করা হয়েছিল মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ বাস্তু সংগ্রহালয়ে। ঐতিহাসিক গবেষণায় জানা গিয়েছে, ১৬৪৯ সালে মেবারের শাসক রানা জগৎ সিংহের পৃষ্ঠপোষকতায় এই শিল্পকর্মটি রচিত হয়েছিল। মোট ৪০০ ছবির সমাহারে সম্পূর্ণ হয়েছিল রামায়ণের বর্ণনা। পরবর্তী কালে, রানা ভীম সিংহ, রাজপুত বিষয়ক ইতিহাসবিদ জেমস টডকে উপহার দিয়েছিলেন রামায়ণটির বেশ কিছুটা অংশ। |
১৮২৩ সালে টড সেগুলি ব্রিটেনে নিয়ে যান। ১৮৪৪ সালে ব্রিটিশ সংগ্রহশালার হস্তগত হয় ছবিগুলি।
আজ অবধি যতগুলো সচিত্র রামায়ণ পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যে এটিই সব চেয়ে বেশি নান্দনিক।
আগামী মে মাস থেকে প্রথম অনলাইনে একত্রিত রামায়ণটি দেখতে পাবেন সাধারণ মানুষ। সম্পূর্ণ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত করার জন্য আর্থিক জোগান মিলছে স্যার দোরাবজি টাটা ট্রাস্টের পক্ষ থেকে। অন্যান্য বিভিন্ন শিল্প-পৃষ্ঠপোষক সংস্থাও এগিয়ে এসেছে।
মেবারের সচিত্র রামায়ণকে একত্রিত করে তাকে সাধারণের গোচরে আনার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হল ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান। এই বিষয়ে ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে একটি সমঝোতাপত্র সই হয়েছিল ২০১০ সালে। সম্প্রতি, ব্রিটিশ লাইব্রেরির পক্ষ থেকে একটি বড় প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় “মুঘল ইন্ডিয়া: আর্ট, কালচার অ্যান্ড এম্পায়ার।” সেখানে ভারতীয় উদ্ভিদ-বিদ্যার উপর আঁকা ১০ হাজারটি ঐতিহাসিক ছবি প্রকাশিত হয়েছে।
ব্রিটিশ লাইব্রেরির প্রধান সম্পাদক রোলি কিটিং বলেছেন, “লাইব্রেরির বিপুল সংগ্রহকে সারা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের বিশ্বাস, এই রচনাটি সাধারণ মানুষের পাঠযোগ্য করা গেলে তা একটি অভূতপূর্ব ঐশ্বর্যের সিন্দুক খুলে দেবে।” মুম্বইয়ের সংগ্রহশালার পক্ষ থেকে প্রধান অধিকর্তা ডক্টর মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “রামায়ণ পাণ্ডুলিপিটিকে একত্রিত করার এই পদক্ষেপ করতে পারার জন্য আমরা গর্বিত। গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন দিকের সন্ধান দিতে পারে এই রামায়ণটি।” |