দামোদরের জলের তোড়ে পাড় ভাঙছে গ্রামের। কাঁকসার সিলামপুরের গ্রামবাসীদের দাবি, জলের হাত থেকে গ্রামকে বাঁচাতে বড় বাঁধের ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। প্রশাসন যদি এই মুহূর্তে ব্যবস্থা না নিলে গোটা গ্রামই তলিয়ে যেতে পারে দামোদরের তলায়। ইতিমধ্যেই তলিয়ে গিয়েছে বেশ কিছু কৃষি জমি। গ্রামবাসীরা জানান, এমন ঘটনা রোজকার। বর্ষায় জল বাড়লে বা ব্যারাজ থেকে জল ছাড়লে প্রতি বছরই বেশ কিছু কৃষি জমি তলিয়ে যায় নদীর তলায়। এ বিষয়ে মৌখিকভাবে দুর্গাপুরের বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানো হয়েছে বলে জানান গ্রামবাসীরা। নিখিলবাবু জানান, জেলাশাসকের কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।
দামোদরের তীরেই কাঁকসা থানার সিলামপুর গ্রামটিতে ১০ থেকে ১২ হাজার বাসিন্দার বসত। দিনে দিনে গড়ে উঠেছে সরকারি স্কুল, বড় বাজার। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনবসতিও। ফলে জায়গা না পেয়ে দামোদরের পাড় ঘেঁষেই বসতি গড়ে তুলতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা। আর পাড়ের ভাঙনে বারবার অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে নিরাপত্তা। নেই কোনও পাকা বাঁধও। গ্রামের বাসিন্দাদের বক্তব্য, গ্রামের কলতলাঘাটটি ভেঙে যাচ্ছে জলের তোড়ে। নিরাপদে থাকতে পারছেন না এখানকার বাসিন্দারা। গ্রামবাসী খাদেম মোহর আলি খান জানান, গ্রামে প্রায় ৫৫-৬০ ঘর পরিবার রয়েছে। বর্ষায় এমনিতেই তাঁদের গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে আশ্রয় নিতে হয়। জল নামলে নিজেদের জায়গায় ফিরে যান। |
দামোদরের পাড়। —নিজস্ব চিত্র। |
তাঁরা জানান, বেশ কিছু কৃষি জমি ছিল এই এলাকায়। তার সবই তিন ফসলি। তার বেশিরভাগই এখন দামোদরের পেটে। বাসিন্দাদের বক্তব্য, যে ভাবে দামোদর গতিপথ পাল্টাচ্ছে, তাতে এখনই বাঁধের ব্যবস্থা না হলে ভবিষ্যতে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। খাদেমবাবুর ক্ষোভ, “দিনের পর দিন ধরে দামোদরে তলিয়ে গিয়েছে গ্রামের অনেকটা জায়গা। বাকি জমি বাঁচাতে যদি প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়, তাহলে ভাল হয়। আমাদের গ্রামকে বাঁচাতে একটি পাকা বাঁধের প্রয়োজন।”
গ্রামবাসীদের দাবি, কারও কারও এক বিঘা বা তারও বেশি জমি চলে গিয়েছে। ওমর শেখ, কালো শেখ, ভাদু মীরেরা জানান, তাঁদের সবারই কমবেশি জমি দামোদরে তলিয়ে গিয়েছে। তাঁদেরও বক্তব্য, “যেটুকু যা জমি বাকি রয়েছে, সেগুলি বাঁচাতে একটি পাকা বাঁধের ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। না হলে তা-ও চলে যাবে। তার পরে না খেতে পেয়ে মরতে হবে।” গ্রামবাসীদের বক্তব্য, নদীর পাড়ের ক্ষয় শুরু হয়েছে। হয়তো কোনও দিন গ্রামের ভিতরেও জল ঢুকে যাবে।
বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ও স্বীকার করেছেন সমস্যার কথা। তিনি বলেন, “ওই অঞ্চলের বেশ কিছুটা অঞ্চলে ক্ষয় শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছি। তবে এখনও কোনও উত্তর পাইনি।” তিনি আরও জানান, বিহারীপুর গ্রাম থেকে এই সমস্যা শুরু হয়েছে। এডিডিএ বা পঞ্চায়েতের পক্ষে এত বড় কাজ সম্ভব নয়। বিহারীপুর গ্রাম থেকে যাতে একটি পাকা বাঁধ তৈরি করা যায়, সে জন্য জেলাশাসককে আবেদন জানিয়েছেন তিনি। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।” |