ভিন্ রাজ্য থেকে ঢুকে নানা অপরাধ ঘটাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। দুষ্কর্মের আগে একাধিক বার মহড়াও দিয়ে নিচ্ছে তারা। অথচ খবর নেই পুলিশের কাছেই। সম্প্রতি স্থানীয় বাসিন্দারা সন্দেহভাজন তিন জনকে ধরিয়ে দেওয়ার পরে তাদের জেরা করে এমন তথ্যই পেয়েছে পুলিশ। আর তার পরেই নড়েচড়ে বসেছে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। নিরাপত্তা বাড়াতে জরুরি ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশকর্তারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বুধবার আসানসোল কোর্ট মোড় এলাকায় একটি বহুতলের সামনে ব্যাগ কাঁধে অপরিচিত যুবকদের ঘোরাফেরা করতে দেখে সন্দেহ হয় বাসিন্দাদের। পুলিশ ডেকে তিন জনকে ধরিয়ে দেন তাঁরা। ধৃতদের ব্যাগ তল্লাশি করে মেলে কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ও চপার। আদালত ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। পুলিশ জানায়, ধৃতদের জেরা করে জানা যায়, তারা ঝাড়খণ্ডের জামুই, মিহিজাম ও দেওঘরের বাসিন্দা। এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশকুমার চাডিয়া বলেন, “তারা একটি বহুতল ও একটি সংস্থায় লুঠপাট করতে এসেছিল।” এডিসিপি-র দাবি, ধৃতেরা জেরায় স্বীকার করে, দুষ্কর্মের আগে একাধিকবার শহরে ঢুকে মহড়া দিয়ে নেয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি। তারা সংখ্যায় পাঁচ জন ছিল। দুর্গাপুর থেকে একটি ভাড়া করে আসানসোলে ঢোকে। বিএনআর মোড়ে গাড়ি রেখে তিন জন কোর্ট মোড়ে যায়। তারা ধরা পড়ে যাওয়ায় বাকি দু’জন গাড়ি নিয়ে পালায়।
পুলিশ জেনেছে, ধৃতেরা এর আগে দোকান লুঠপাট ও আসানসোলের এসবি গড়াই রোডের একটি পেট্রোল পাম্পে ডাকাতিতে জড়িত। সম্প্রতি আসানসোলের ধাদকা ও রূপনারায়ণপুরে সোনার দোকানে ডাকাতি, বেসরকারি আর্থিক সংস্থায় লুঠ ও নানা ছিনতাইয়ের ঘটনায় তারা জড়িত কি না, পুলিশ তার তদন্ত শুরু করেছে। মাস দুয়েক আগে আসানসোল পুলিশ লাইন লাগোয়া একটি বহুতলে এক শিল্পপতির বাড়িতে রিভলভার নিয়ে হামলা চালায় দুই দুষ্কৃতী। পরে এলাকাবাসীর তাড়া খেয়ে দুষ্কৃতীরা রিভলভার ফেলে পালায়। পুলিশ জানতে পারে, দুষ্কৃতীরা ভিন্ রাজ্যের।
প্রতিবেশী রাজ্য থেকে দুষ্কৃতীদের যাতায়াতের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু তারা দুষ্কর্মের আগে শহরে একাধিকবার মহড়া দিলেও পুলিশ তা জানতে না পারায় প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। চিন্তা বেড়ছে পুলিশেরও। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, দুষ্কৃতীদের একটি দল কখনও আসানসোল, কখনও দুর্গাপুরে অস্থায়ী ডেরা বাঁধছে।
এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশকুমার চাডিয়া জানান, কমিশনারেটের অপরাধ দমন বিভাগের আধুনিকীকরণ হচ্ছে। শহরে ঢোকার বিভিন্ন সংযোগস্থলে বিশেষ ‘নাকাবন্দি’ করা হয়েছে। চার চাকার ছোট গাড়ি ও দু’চাকার গাড়ি শহরের নানা জায়গায় পরীক্ষা করা হচ্ছে। বহুতল আবাসনগুলিতে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী রাখা ‘ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা’ বসাতে বলা হয়েছে। আসানসোলের হোটেলগুলিতেও ‘ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা’ বসানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রাখতে বলা হয়েছে অতিথিদের যাওয়া-আসার ব্যাপারে সম্পূর্ণ তথ্য।
কাজের কাজ কতটা হল, তা সময়ই বলবে। |