|
|
|
|
নিজের বাহনে নিজেই সওয়ারি |
চেনা মুখ সঙ্গী করে বেরিয়ে পড়ুন ‘রোড ট্রিপ’-এ। কেমন হবে সেই ভ্রমণ? লিখছেন শতরূপা চক্রবর্তী |
হাঁসফাঁস করা কেজো জীবন থেকে অল্প কয়েক দিনের ছুটি কে না চায় বলুন তো?
মনে হয় না, দু’দিন ছুটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়া যাক যে দিকে দু’চোখ যায়! পিছনে পড়ে থাক সব দুশ্চিন্তা, ব্যস্ততা আর যত শত দায়ভার। যত বড় কাজপাগল মানুষই হোন না কেন, এ ব্যাপারে ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিতে দু’বার ভাববেন না কেউই। তাই-ই তো উড়ন্ত মনকে শান্ত করতে বিনা দ্বিধায় বেরিয়ে পড়া জানা-অজানা জায়গার সন্ধানে। আর তারই সঙ্গে যদি জড়িয়ে পড়েন পথের মায়ায়, তা হলে ট্রেন-বাস-ফ্লাইট-ট্র্যাভেল এজেন্টকে দূরছাই করে রাস্তায় নেমে পড়া ছাড়া গতি নেই। নিজের বাহনে নিজেই সওয়ারি হয়ে, গুটিকতক চেনা মুখকে সঙ্গী করে মন উড়াল দিক পথে পথে।
হলিউড-বলিউডেও তৈরি হয়েছে ‘রোড ট্রিপ’ নিয়ে ছবি। ২০০৭-এ মুক্তিপ্রাপ্ত ওয়ল্ট বেকর-এর ‘ওয়াইল্ড হগস’ সিনেমাটির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। যেখানে চার মাঝবয়সি বন্ধু প্রাত্যহিক জীবনে হতাশায় ভুগতে শুরু করেছিল। মন চাইছিল মুক্তি। তার পরই তাদের বাইক-অভিযানের পরিকল্পনা। ঠিক তেমন বলিউডেও তৈরি হয়েছে ‘জিন্দেগি না মিলেগি দো বারা’র মতো ছবি...
সিনেমার গল্পই হয়তো অনুপ্রাণিত করেছে জনমানসকে। “হঠাৎ করে আটসকালে মোবাইলে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ার ডাক... মুহূর্তের মধ্যে প্ল্যান তৈরি করে বেরিয়ে পড়েছি। কত বার যে এ ভাবে শান্তিনিকেতন আর মন্দারমণি ঘুরে এসেছি কর গুনে বলতে পারব না,” বলছেন কলকাতার এক বেসরকারি সংস্থার ম্যানেজার আকাশ রায়। তবে সঙ্গী নির্বাচনে খুব ‘চুজি’ তিনি। কারণ মনের মতো সঙ্গী না পেলে পুরো ট্রিপটাই যাবে ভোগের খাতায়।
যদিও হঠাৎ করে কোনও ট্রিপ অ্যারেঞ্জ করার মধ্যে আছে রোমাঞ্চ-গন্ধ, তবু এই ‘উঠল বাই তো কটক যাই’ হুজুগে আপত্তি তুলেছেন কেউ কেউ। “আগে থেকে ঠিক করে রাখলে ট্রিপটা বেশি প্ল্যানমাফিক হয়। স্পট বাছতে অনেক বেশি অপশন পাওয়া যায়। তা ছাড়া অন্য অনেক আনুষঙ্গিক কাজও তো থাকে,” জানাচ্ছেন বরানগরের রাহুল বসু। দরকারে সপ্তাহ তিনেক আগে গাড়ি এক বার সার্ভিসিং-এ পাঠিয়ে দেওয়া যেতে পারে। “একটা নিরাপদ যাত্রাই তো সকলে চায়। আগে থেকে সতর্কতা না নিলে যদি মাঝরাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে যায়!” বললেন রাহুল। শুধু কাছেপিঠেই নয়। গাড়ি নিয়ে তিনি বার কয়েক দূরের সফরেও পাড়ি দিয়েছেন। পাহাড়ি অঞ্চলও বাদ যায়নি। |
|
‘জিন্দেগি না মিলেগি দো বারা’ ছবির চরিত্ররা |
যাঁরা খেতে ভালবাসেন, তাঁদের কাছে রোড-ট্রিপ মানে তো হাতে চাঁদ পাওয়া। হাইওয়ের উপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন ধাবা কিংবা বিশেষ কোনও জায়গার ‘বিশেষ’ খাবারের স্বাদ নেওয়ার কথা ভাবলেই তো জিভে জল আসে। তা ছাড়া নিজের মতো গাড়ি নিয়ে বেরোলে রাস্তার মাঝে মাঝে অনেক দ্রষ্টব্য জায়গাও দেখা হয়ে যায়, যেটা ট্রেন বা বাসে ঘুরতে গেলে কখনওই সম্ভব নয়।
লং ড্রাইভ পছন্দ করলে রোড-ট্রিপে আসক্তি জাগবেই। আহা! এ যে কী বিলাসিতা তা যাঁরা একবার স্বাদ পেয়েছেন, তাঁরাই জানেন। তবে হ্যাঁ, গতির নেশায় বুঁদ হয়ে কিংবা অকারণ অন্য গাড়িকে ওভারটেক করে শ্রীঘরে যাওয়ার পথটা নিজেকেই বন্ধ করতে হবে। তা ছাড়া ড্রিংক করার জন্য গলা শুকিয়ে এলেও ড্রাইভ করার সময় ও-পানে ভুলেও যাবেন না। সারা রাস্তা ড্রাইভিং-এর ক্রেডিটটা একা না নিয়ে সঙ্গীকেও স্টিয়ারিং ধরার সুযোগ দিন।
ঘুরতে বেরিয়ে শরীরটাও তো ঠিকঠাক রাখতে হবে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুব্রত মৈত্র বলছেন, ‘‘ভমিটিং সিকনেসের সমস্যা থাকলে অবশ্যই বমি বন্ধ রাখার ওষুধ নিতে হবে। যাঁদের কোমরে ব্যথা কিংবা স্পন্ডেলাইটিস আছে তাঁরা যেন আগে থেকে সতর্ক হয়ে তবেই বেরোন।” রাস্তার ধারের খাবার খেয়ে কিংবা ধুলোবালি লেগে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে অ্যালার্জির ওষুধও সঙ্গে রাখবেন।
তা হলে এবার হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যান শহুরে জীবন থেকে। শুভারম্ভ হোক পথযাত্রার। হিট দ্য রোড...
|
চেকলিস্ট |
• আগেভাগে গাড়ি সার্ভিস করিয়ে রাখুন।
• গাড়ি সারানোর টুকটাক যন্ত্রপাতি, অতিরিক্ত টায়ার সঙ্গে রাখবেন।
• যথেষ্ট পরিমাণে স্ন্যাকস আর জলের বোতল সঙ্গে নিন।
• ফার্স্ট-এইড বাক্স নিতে যেন ভুল না হয়।
• শীতকালে ট্র্যাভেল করলে কম্বল সঙ্গে রাখবেন।
• সঙ্গে অবশ্যই বেশ কিছু প্লাস্টিক ব্যাগ রাখবেন, যাতে গাড়িতে বমি পেলে সকলের সামনে অস্বস্তিতে না পড়তে হয়।
• ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড তো নেবেনই। তা ছাড়া সঙ্গে যেন যথেষ্ট পরিমাণে নগদ টাকা থাকে। না হলে হাইওয়ের উপর এটিএম কাউন্টার না থাকলে অসুবিধায় পড়তে হবে।
• মোবাইলের চার্জার অবশ্যই নেবেন।
• পছন্দের গানের ডিভিডি/ আইপড নিতে ভুলে গেলে ঘেঁটে ঘ হয়ে যাবেন। মিউজিক না থাকলে ট্রিপের দফারফা। পছন্দের বইও সঙ্গে নিতে পারেন।
• মেয়েরা অবশ্যই ব্যাগে পেপার স্প্রে নেবেন। |
|
|
|
|
|
|