আর নাচ? এত ভাল সিনেমার নাচ শিখলেন কোথায়? ‘‘সিনেমা হলে হিন্দি ছবি দেখতে পাই না আমরা। তবে স্যাটেলাইট চ্যানেল আছে। ওখানে সিনেমা, ফ্যাশন সব দেখা যায়। আমি হিন্দি ছবির নাচগুলো ওখানেই দেখেছি। অভিনেত্রীদের মুখগুলো চিনি। তবে নাম জানি না,’’ নসিম বলেন।
বাড়িতে জানেন যে ভারতে এসে এই নাচগানে মেতেছেন তিনি? “বাড়িতে কোনও সমস্যা নেই। আমার বাবা মারা গিয়েছেন। মায়ের এ নিয়ে কোনও অসুবিধে নেই। আমার স্বামীরও নেই,” বলে আবার নাচতে চলে যান দুই বন্ধুর সঙ্গে।
রাত যত বাড়তে থাকে, ততই পার্টি আরও জমে ওঠে। আফতাব শিবদাসানি তাঁর বিদেশিনী বান্ধবী নিন দুসাঞ্জকে নিয়ে ঢুকলেন। নিন পেশায় মডেল। জন্ম লন্ডনে। তার পর হংকং। এখন ভারতে শিফ্ট করেছেন। আফতাবের ‘গ্র্যান্ড মস্তি’ মুক্তি পাওয়ার পর হয়তো বিয়ে করবেন। বিয়ে না করলেও, ভ্যালেনটাইন’স ডে’র রেশ যে এখনও কাটেনি, তা বেশ বোঝা গেল। সারা পার্টিতেই দু’জনে হাত ধরে ঘুরলেন।
সোনু সুদ অবশ্য বেশির ভাগ সময়টাই আড্ডা দিতে ব্যস্ত। কমল হাসনের মেয়ে শ্রুতি হাসন তাঁর আড্ডার সঙ্গিনী। হায়দরাবাদের মেয়ে জ্বালা গাট্টা। তিনিও পার্টিতে।
জেনেলিয়া স্টেডিয়ামে যতটা প্রাণবন্ত ছিলেন, ঠিক ততটাই শান্ত ছিলেন পার্টিতে। হয়তো মনে মনে ঠিক করেছিলেন নাচ যা দেখানোর সব স্টেডিয়ামের জন্যই তোলা থাকবে।
অ্যাঙ্কর অর্চনা বিজয়া অল্প সময়ের জন্য এসে চট করে ডিনার সেরে নিলেন। “আমি আবার আসছি। ওয়ান্ট টু হ্যাভ আ গ্লাস অব ওয়াইন,” বললেন অর্চনা। শুনেই পাশ থেকে রোহন গাওস্করের টিপ্পনী, ‘‘ওর কথা একদম বিশ্বাস করবেন না কিন্তু। এই যে বলল আসছে, আর কিন্তু ওর পাত্তা পাওয়া যাবে না।” অর্চনার মুখে মৃদু হাসি। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। দু’টো ম্যাচ পর পর অ্যাঙ্কর করে আবার সারা রাত পার্টি করা সহজ নয়।
সে দিক দিয়ে চারু শর্মার এনার্জির কোনও খামতি নেই। রাত যত বাড়ে, চারুর উত্তেজনা ততই বাড়তে থাকে। রাত তিনটেতেও চারু ডান্স ফ্লোরে হিট। মাঝে মধ্যে সঙ্গ দিচ্ছেন দক্ষিণী ছবির জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রী প্রিয়মণি। আর নাচের ফাঁকে প্রিয়মণি আড্ডা দিচ্ছেন টলিউডের যিশু, রাহুল, স্যান্ডি, জয়, ইন্দ্রজিৎ আর ইন্দ্রাশিসদের সঙ্গে। তবে শ্রীদেবী বা বনি কপূর কারওকে পার্টিতে দেখা যায়নি। রাতের ফ্লাইটে মুম্বই চলে যান শ্রীদেবী। বিপাশা আসবেন বলেও শেষমেশ আসেননি।
রাত একটা নাগাদ টলিউডের সায়ন্তিকা চলে গিয়েছেন নিজের ঘরে। সঙ্গে ছিলেন বাবা। “সোমবার কলকাতায় ফিরেই সোজা মেদিনীপুর যাব শো করতে। তাই আর থাকতে পারছি না,” বলেন সায়ন্তিকা।
|
সলমন খান |
যিশু মাঝে মধ্যে সব্বাইকে নিয়ে নাচছেন। ইন্দ্রাশিসও একটু আধটু কোমর দোলাচ্ছেন গানের তালে তালে। ইন্দ্রাশিসের পাশেই ‘গানের ওপারে’র পুরোনো বন্ধু গৌরব। এই বুঝি কেউ নাচতে বলবে এই ভয়ে দূরে দূরে থাকছেন। “আরে ওকে নাচতে কে বলবে? ওর তো ডান কানে কী একটা ছিল যার জন্য সব সময় ব্যস্ত,” বললেন রাহুল। ‘ডান কানে কী একটা ছিল’র অর্থ হল মোবাইল ফোন। “সারা পার্টি তো ফোন করে কাটিয়ে দিল। মনে
পড়ে যাচ্ছিল আমার আর প্রিয়াঙ্কার বিয়ের আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে গল্প করার দিনগুলো। অনেক মোবাইল বিল তো আমরা সাইলেন্সের পিছনেই দিয়েছি। কোনও কথা নেই তবুও
কেউ বলতে পারছি না এ বার রাখি। গৌরবের কোন স্টেজ আমি জানি না,” বলেন রাহুল।
ততক্ষণে সলমন খান এসে গিয়েছেন পার্টিতে। বোঝা গেল, কারণ অন্তত পঞ্চাশটা আই ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠল তার ছবি। সব মোবাইল ক্যামেরা তাঁর দিকে তাক করা। ভিড় উপচে পড়ছে ‘ভাই’কে দেখতে। ডিজে বাজাচ্ছেন ‘ডিঙ্কা চিকা’, ‘ফেভিকল সে’। হলের কোণে একটা জায়গা ঘিরে দেওয়া হল সলমন আর তাঁর সঙ্গী-সাথিদের জন্য। সোহেল খান, ববি দেওল, আফতাব শিবদাসানি আর চিত্রাঙ্গদা সিংহকে নিয়ে ওখানেই আড্ডা মারলেন তিনি।
রাত সাড়ে তিনটেতেও পার্টির নেশা কাটেনি। কেউ বলছেন আইপিএল আফটার পার্টিকেও হার মানাবে সিসিএল আফটার পার্টি। কেউ ভোরের ফ্লাইট ধরবেন বলে চলে গিয়েছেন। তবে ইরানি মেয়েদের এনার্জির তখনও কমতি নেই। একজন তো খালি পায়ে স্টেজে উঠে গেলেন। বলিউড গান আর নয় তখন। পার্টি শেষ হল ইরানি গান দিয়ে। স্টেজে এক ঝাঁক বিদেশিনী। ঢেউয়ের মতো কোমর দুলিয়ে আপন খেয়ালে নেচে চলেছেন। চুল খোলা। কপালে নকল হিরের ব্যান্ড। আর শরীরের প্রতিটি অঙ্গে মাদকতা। ঠিক ক্যাটরিনা কইফের ‘মাশাল্লা’ গানের স্টেপ নকল করে নাচছেন তাঁরা। আর চোখের ভাষা যেন বলছে ‘ইস রাত কি সুবহ নেহি’!
|