|
|
|
|
হুল্লোড় |
ছেলে দেখলেই হাত নিশপিশ করে |
বক্সিং জানেন বলে তাঁকে সমঝে চলে ইন্ডাস্ট্রি। আপাতত প্রেম বা সম্পর্ক নয়।
কাজ নিয়েই থাকতে চান ব্যস্ত মুমতাজ সরকার। মুখোমুখি সংযুক্তা বসু |
টালিগঞ্জের নায়কেরা নাকি আপনার সঙ্গে প্রেম করতে ভয় পান?
জানি।
কেন বলুন তো?
মার খাওয়ার ভয়ে। আমি তো বক্সিং জানি। তা ছাড়া ছেলেদের দেখলে মারার জন্য কেমন যেন হাত নিশপিশ করে।
বক্সিং শিখেছিলেন কেন? ছেলেদের মারবেন বলে?
বক্সিং শিখেছিলাম আত্মরক্ষার জন্যই। একবার আমরা কয়েক জন বন্ধু মিলে দল বেঁধে বেরোব ভাবছিলাম। তখন বন্ধুর বাবা বললেন, “এতজন মেয়ে যাবি? সঙ্গে এক জন ছেলে দরকার। তোরা বরং আমার ছেলেকে নিয়ে যা।” সেদিনই ঠিক করেছিলাম বক্সিং শিখব। রাস্তায় ইভ টিজিং হলে দেব ধরে। বার দু’য়েক বদ ছেলেদের পাল্লায় পড়ে ঘুসিটুসিও মেরেছি । ইন্ডাস্ট্রিতেও এমন কিছু লোক আছেন, যাঁদের দেখলেই প্যাঁচপয়জার চালিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। এ সব তো ইন্ডাস্ট্রির লোক জন জানেন। তাই ভয় পান।
না হল না। ভয় পান কারণ আপনার বাবা ম্যাজিশিয়ান জুনিয়র পি সি সরকার যখন তখন যাকে তাকে ভ্যানিশ করে দিতে পারেন। কে আর ভ্যানিশ হতে চায়...
বাবা-মা খুব উদার মনের মানুষ। ছেলে দেখলেই ভ্যানিশ করে দেবেন তা নয়। কেউ বেয়াড়া আচরণ করলে ভ্যানিশ করে দিতেই পারেন বাবা। হি ইজ এক্সপার্ট ইন দ্যাট। যদি মনে করেন আমি যাকে পছন্দ করলাম সেই মানুষটি ঠিকঠাক, তা হলে কিন্তু ভ্যানিশ করবেন না। আমিও তো ম্যাজিক জানি। দরকার হলে মা-বাবার আগেই আমি ভ্যানিশ করে দেব।
|
|
মুমতাজ সরকার। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল |
ভ্যানিশ করে দিতে গিয়েই কি সাহেব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপনার বিশেষ ‘বন্ধুত্ব’টা ভেঙে গেল?
এ নিয়ে কথা বলতে চাই না। একদমই বলতে চাই না।
তা হলে এই মুহূর্তে আর প্রেমট্রেমে নেই!
না একেবারেই নেই। কাজের সঙ্গেই আমার রোম্যান্স। আমার চব্বিশ ঘণ্টাই কাজ করতে ইচ্ছে করে।
শনিবার ২৩ ফেব্রুয়ারি আপনার ঠাকুর্দা সিনিয়র পি সি সরকারের একশো বছর পূর্ণ হবে। সে দিনও কি তা হলে শ্যুটিং নিয়ে ব্যস্ত?
একটা বিশেষ কাজের জন্য কলকাতায় থাকতে পারছি না। কিন্তু যেখানেই যাই সেখানকার ম্যাজিশিয়ানেরা আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন। কারণ ওই দিনটা ওয়ার্ল্ড ম্যাজিশিয়ান ডে।
তা হলে ভাবুন একবার, বিশ্ব জাদুকর দিবসে আপনি ম্যাজিকে নেই, অন্য কাজে ব্যস্ত। এটা কি ঠিক?
কাজ থাকলে তো যেতেই হবে। এ নিয়ে আমার বাবা-মায়ের কোনও আপত্তি নেই। বাবা বলেন, ম্যাজিকদাদু যদি থাকতেন তা হলে তিনি তাঁর নিজের জন্মদিনেও কাজেই যেতে বলতেন।
তাই? সিনিয়র পি সি সরকারকে আপনি ম্যাজিকদাদু বলেন?
হ্যাঁ ।
সরকার পরিবারের মেয়ে হয়ে ম্যাজিকে রইলেন না। ভাল লাগে এটা?
আমি যখন অভিনয় করি, তখন একটা চরিত্রের মধ্যে কী ভাবে যেন ঢুকে যাই। সেটাও তো ম্যাজিকই। এমনিতে আমি ম্যাজিক শিখেছি। এখনও তো বাবা-মা আর আমাদের তিন বোনকে নিয়ে যখন ফ্যামিলি শো হয়, আমি থাকি। এই রকম ফ্যামিলি শো হলে আমি যদি স্পিলবার্গের ছবিতেও কাজের অফার পাই, সে কাজ ফেলে ছুটে আসব ম্যাজিকে। ম্যাজিক আমাদের মজ্জায়।
ম্যাজিক যখন শিখেছেন, জাদুমন্তরে তো এক নম্বর নায়িকা হয়ে যেতে পারেন?
জাদু দিয়ে শর্টকাটে ভাল অভিনেত্রী হওয়া যাবে না। গোটাটাই স্ট্রাগল। ম্যাজিকও সুপারন্যাচারাল শক্তি নয়। পুরোটাই বিজ্ঞান।
ম্যাজিক দিয়ে তা হলে কিছুই অর্জন করতে চান না ?
যদি কোনও দিন প্রথম সারির নায়িকা হই, আমার ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে মেয়েদের প্রতি অত্যাচার বন্ধ করার চেষ্টা করব। এটা বলতে চাইছি না আমি সন্ন্যাসিনী। তবে শুধুই নিজের আখের গোছাব তা নয়। আইন নিয়ে পড়েছি। অত্যাচারিত মানুষকে আইনি সাহায্যও করতে পারি।
বীরসা দাশগুপ্তের ‘জিরো থ্রি থ্রি’ থেকে ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ কিংবা ‘মেঘে ঢাকা তারা’ সবই তো মাল্টিপ্লেক্স ফিল্ম। মূল ধারার ছবিতে সে ভাবে আসছেন না কেন?
মেনস্ট্রিম বাংলা ছবিতে মেয়েদের অভিনয়ের সুযোগ কম। হিরোদের বেশি বড় করে তোলার জন্যই নায়িকারা তাঁদের পাশে থাকেন। ভাল জামাকাপড় পরে মেয়েরা ‘প্রপস’ হিসেবে ব্যবহৃত হন। গাছের পাশে, ঝরনার পাশে গান গাইতে, নাচতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু অভিনয়ের জায়গাও তো থাকতে হবে।
‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এ কোয়েলের বদলে যদি কদলীবালার চরিত্রটা করতে দেওয়া হত? কেমন ভাবে ইমপ্রোভাইজ করতেন?
প্রশ্নই ওঠে না কদলীবালা চরিত্রে নিজের কথা ভাবার। স্বস্তিকাদি কদলীবালা চরিত্রে এক কথায় অসাধারণ। শি হ্যাজ ডান ফ্যাবিউলাস জব। চোখ নাচিয়ে, কণ্ঠস্বর টেনে টেনে এমন অভিনয় স্বস্তিকাদি ছাড়া আর কেউ করতে পারতেন না।
অনীক দত্তের পরের ছবি ‘আশ্চর্য প্রদীপ’-এ আপনার নাম নাকি মালা মাল?
হ্যাঁ। তিনি এক সুপার মডেল। মাঝে মাঝে অভিনয় করেন। মুম্বইতে এখন বেশ বড় হিরোইন। প্রায় সব বিজ্ঞাপনেই তাঁর মুখ। মালা কলকাতার মেয়ে। মুম্বই গিয়ে অতি প্রচারের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে অন্য একটা রূপ ধারণ করেছেন।
কিন্তু ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এ আপনার কোয়েলের রোলটা সারা ছবি জুড়েই ছিল। মালা মালের চরিত্রটা সেই তুলনায় কম সময় জুড়ে ছবিতে থাকে। আপনার ফুটেজ কমল তো?
চরিত্রটা দৈর্ঘ্যে অতটা বড় নয় কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। মালা মালের মধ্যে দিয়ে পুরো ছবির দর্শনটা বেরিয়ে আসে। বেশি মিষ্টি দিলে অনেক সময় তেতো হয়ে যায়, গা গোলায়। মালা মালকে বেশি রাখা যায় না তাই।
কমলেশ্বরের ‘মেঘে ঢাকা তারা’য় আপনি সুপ্রিয়া চৌধুরীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কত বার দেখেছেন ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’?
বহু বার। ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ দেখেছি নতুন ‘মেঘে ঢাকা তারা’ করছি বলে নয়। যত বার দেখি তত বার কাঁদি। তবে সুপ্রিয়া দেবী হয়ে ওঠার চেষ্টা করিনি। নিজের মতো অভিনয় করেছি। কমলেশ্বরদা যখন বললেন সুপ্রিয়া দেবীর চরিত্রে অভিনয় করতে হবে, খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বড় বড় শিল্পী অভিনয় করেছেন ছবিটায়। তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া আমার মতো নিউকামারের পক্ষে খুব কঠিন। কিন্তু কমলদার ব্রিফিং-এর গুণে ভয় কেটে যায়। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ ছবিতে সমদর্শীর সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন।
আপনাদের দু’জনেরই একটা বোহেমিয়ান ব্যাপার আছে। বন্ধুত্ব কতটা হয়েছিল?
খুব আড্ডা হত শ্যুটিংয়ের সময়। কারণ অন্য আর্টিস্টরা ছিলেন সিনিয়র। সমদর্শী আমার বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু নয়। আপনি কী বলতে চাইছেন বুঝতে পারছি। কিন্তু এখন আমি কারও সঙ্গে প্রেম নিয়ে ভাবছি না। কাজটাই করতে চাই মনে দিয়ে। ইন্ডাস্ট্রিতে সরকার পরিবারের কোনও প্রভাব নেই। যা করতে হবে নিজের মুরোদে করতে হবে। তাই খুব মনোযোগী হয়ে লড়ে যাচ্ছি।
সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ‘মেঘে ঢাকা তারা’র চিত্রনাট্য শোনার পর?
না। দেখা করতে চেয়েছিলাম। সময়ের অভাবে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি। তু ‘মেঘে ঢাকা তারা’য় সুপ্রিয়া দেবীকে অনুকরণ করতে গেলে বোকামি ছাড়া কিছুই হত না। ওঁর মতো অভিনয় করা সোজা কথা নয়। প্রিমিয়ারের দিন হয়তো উনি আসবেন। খুব ভয় লাগছে। দেখার পর কী রি-অ্যাকশন দেবেন কে জানে! |
|
|
|
|
|