|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিয়ো না |
|
কেন ভাবে না কেউ ‘যেতে পারি কিন্তু কেন যাব’
অসময়ে চলে গেলেন নাট্যকার ইন্দ্রাশিস লাহিড়ি। কিন্তু
এখনও মঞ্চে মঞ্চে তাঁর নাটক। লিখছেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী |
|
প্যারেডটা শুরু হয়েছিল কিছু দিন আগে থেকেই। কুণাল, শিলাদিত্য, রমাপ্রসাদ, যিশু এবং ‘ইন্দ্রাশিস’। কত সহজ করে দিল চলে যাওয়াটা। বেঁচে থাকার চেয়ে অন্য কিছু কি বেশি জরুরি? “জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ সব পূর্বনির্ধারিত।” কিন্তু তার মানে নিশ্চয়ই এই নয় যে চৌমাথার মোড়টা আমি চোখ বন্ধ করে পার হব! নাহ্, বড্ড বেশি রাগ প্রকাশ করা হচ্ছে লেখাতে। আসলে কিছু মৃত্যু দুঃখের থেকেও বেশি হতাশা আর অসহায়তার জন্ম দেয়। ইন্দ্রাশিসের ক্ষেত্রে আমার তাই হল।
মনে পড়ে একবার যিশু দাশগুপ্তের পরিচালনায় একটা টেলিফিল্মের লম্বা আউটডোর করতে গিয়েছিলাম আমি, ইন্দ্রাশিস আর লকেট। সেই সময় ওর সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠতা হয়।
কোনও বিদেশি নাটকের রেফারেন্স দরকার হলে কাকে ফোন করব? কে এত সহজ ভাবে বুঝিয়ে দেবে জটিল সব দর্শন? হয়তো অনেকে আছে। কিন্তু এত সহজলভ্য, এত সুগম তো সবাই নয়। কখনও মনে হত না এক জন পণ্ডিতের সঙ্গে কথা বলছি। উপরন্তু বিনয়ের সঙ্গে বলত, “এক দিন সময় করে এসো না। ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করা যাবে। আর একটু বসাও যাবে। আর হ্যাঁ, রাতে খেয়ে যেও কিন্তু।” |
|
|
|
|
|
ইন্দ্রাশিস লাহিড়ি
(১৯৬২-২০১৩) |
রমাপ্রসাদ বণিক
(১৯৫৪-২০১০) |
কুণাল মিত্র
(১৯৬৫-২০০৯) |
যিশু দাশগুপ্ত
(১৯৫৬-২০১২) |
শিলাদিত্য পত্রনবিশ
(১৯৬৭-২০০৮) |
|
এক সময় অ্যাকাডেমির দর্শকাসনে বসে রাতের পর রাত মুগ্ধ হয়েছি ইন্দ্রাশিসের নাটকগুলো দেখতে দেখতে। ‘ইচ্ছে গাড়ি’, ‘লজ্জাতীর্থ’, ‘কন্টিনিউইটি’, ‘বাসভূমি’, ‘হরিপদ হরিবোল’, ‘বহিরাগত’... আরও কত কী! সেই লেখা শেষ দিন অবধি থামেনি। আজও কলকাতায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ‘দৌড়নামা’, ‘পিঙ্কিবুলি’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘সেই সুমৌলি’।
পরবর্তী কালে সেই ইন্দ্রাশিসের লেখায় টেলিভিশনে অভিনয় করলাম। পরিচয় হল এক অমায়িক, সজ্জন পণ্ডিত এবং এক লাজুক প্রতিভার সঙ্গে। ওর পুরোনো বন্ধুদের কাছে শুনেছি ছাত্রাবস্থায় যাদবপুরে ও ছিল হিরো। ওর নাটক করে বিখ্যাত হয়েছিল বেশ কিছু অভিনেতা। যার মধ্যে কৌশিক-চূর্ণীও আছে। অগুনতি ছাত্র-ছাত্রী ছড়িয়ে আছে কলকাতায় এবং সর্বত্র। মজা হচ্ছে সব ছাত্রই ওর বন্ধু। খুব গুণী মানুষ বলেই বোধহয় সেটা সম্ভব ছিল। ইন্দ্রাশিসের সঙ্গে আমার শেষ দেখা ৯ সেপ্টেম্বর ২০১২। ওর জন্মদিনে। আমরা বসেছিলাম। আমি, ও, মেঘনা, চন্দন, জয়, মৃণাল, সুদীপা। মৃণাল লিখে এনেছিল ‘ম্যাকবেথ’-এর একটি আধুনিক বঙ্গীকরণ। ইন্দ্রাশিস যখন তখন কোট করছিল শেক্সপিয়ার সহজ, অনর্গল। চলে যাওয়ার ক’দিন আগে মেঘনাকে বলেছিল, “আমি যাবার সময়, মাথার ধারে জুলিয়াস সিজার রেখে দিও।” রাখাও হয়েছিল। এই ভাবে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ যারা ভাবতে পারে, তারা কেন একটু ‘লার্জার লাইফ’ বহন করার কথা ভাবে না? কেন ভাবে না ‘আই ক্যান গিভ মোর দ্যান হোয়াট আই টেক’...
কেন ভাবে না ‘যেতে পারি কিন্তু কেন যাব?’ |
|
|
|
|
|