|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিয়ো না |
হতে চাই মধ্যমণি |
পার্টিতে যাব। ঝলমল করব। সবাই তাকাবে আমার দিকে। কীভাবে? লিখছেন রেশমি বাগচি |
সকালে উঠেই রীতশ্রীর মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছে। আজ ওঁর কলিগের বিবাহবার্ষিকী। অনেক আগে থেকেই ওঁর নেমন্তন্ন। সকালে উঠেই ভাবতে বসলেন কী অজুহাত দেবেন না যাওয়ার।
নেমন্তন্ন! অথচ না যাওয়ার অজুহাত খুঁজছেন? নিশ্চয়ই ভাবছেন, দু’জনের সম্পর্ক খুব খারাপ!
কারণটা আসলে ওঁর নিজের অস্বস্তিবোধ। এই সমস্যায় উনি ভুগছেন অনেক দিন ধরেই। অনেককেই দেখেছেন সুন্দর ভাবে সব আকর্ষণ নিজের দিকে টেনে নিতে। রীতশ্রীরও ইচ্ছে করে খুব। কিন্তু পারেন না। তাই যে কোনও পার্টিতে যেতেই ওঁর অনীহা। গেলেও মিনিট পাঁচেক থেকেই ‘হাই’ বলে বেরিয়ে আসেন। ছোটবেলায় রূপকথার গল্পে সিনড্রেলাকে দেখে নিজেকেও তাই ভাবতেন। কিন্তু যা ভেবেছিলেন, তা আর হল কই?
আপনিও কি নানা অজুহাতে এই ভাবেই গেট টুগেদার স্কিপ করেন? যাই বলুন না কেন, পার্টির মধ্যমণি হতে কে না চান?
মিঠুনদার কথা তাই না বলে থাকতে পারছি না। এই কিছু দিন আগে আনন্দ প্লাসের ক্যুইজে ওঁর কথা বলার ক্ষমতা, রসিকতা, হাসি, ঝগড়াসব মিলিয়ে দর্শকাসনে যাঁরা বসেছিলেন, তাঁরা তো অন্য কারও দিকে নজর দেওয়ার সুযোগই পাননি। ক্যুইজ শেষে ডিনারেও ছবিটা ছিল একই। অভিনেতা আবিরের মতে মিঠুনদার মতো ক্রাউড পুলার খুব কমই আছেন। যে পার্টিতে উনি থাকেন, সেখানে সবাইকে মাতিয়ে রাখেন। অবশ্য আবির নিজে বলেছেন, তিনি নিজে বেশ বোরিং। মোটেই পার্টির মধ্যমণি হয়ে উঠতে পারেন না। বেশ অস্বস্তিই বোধ করেন পার্টিতে গিয়ে। কিন্তু এত ফ্যান যাঁর, যাঁর সঙ্গে নায়িকাদের এত ভাল সম্পর্ক, পরিচালকরা যাঁর ওপর এত ভরসা করেন, তিনি বোরিং! নাহ্, আবির মনে হয় একটু বেশি বিনয়ী হয়ে কথাটা বললেন। |
|
তমালিকা আবার পার্টিতে গিয়ে নিজের যাবতীয় চার্ম হারিয়ে ফেলেন। বন্ধুমহলে যদিও ওঁর হাস্যরসবোধ নিয়ে যথেষ্ট নামডাক আছে। কিন্তু পার্টিতে গেলে কী যে হয়!
পারকাশনিস্ট বিক্রম ঘোষের মত, সব থেকে জরুরি নিজের সত্তা বজায় রাখা। “আমি যা, তাই যেন দেখাতে পারি। ওভার-ডু করা ঠিক নয়। নিজের আত্মবিশ্বাস চূড়ান্ত মাত্রায় ধরে রাখা দরকার। সবার সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলা, তাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়াটাও জরুরি।” কিন্তু কথা শুরু করব কী ভাবে?
গ্রুমিং কনসালট্যান্ট সঞ্চিতা কুশারী বলছেন, কথা শুরু করুন সপ্রতিভ ভাবে। প্রথমে নিজের পরিচয় দিন। তার পর অন্যের পরিচয় জানুন।
“কথার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও বিনয়ী ভাব রাখবেন,” বললেন মুনমুন সেন। “এমন কোনও কথা বলবেন না যাতে অন্য কেউ ক্ষুণ্ণ হন।” তবে এই বিষয়ে একটা সতর্কবাণী দিলেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তাঁর মতে, “সপ্রতিভ থাকা জরুরি। তবে নিজেকে জাহির করতে যাবেন না। অনেক ধরনের মানুষ আসেন পার্টিতে। সক্রিয় ভাবে অংশ নিন। আর যে বিষয়ে কথা হচ্ছে যদি সেই বিষয়ে আপনার ধারণা না থাকে, তা হলে চুপ করে শুনুন।”
গ্রুমিং কনসালটেন্ট সঞ্চিতা কুশারী বলেছেন ভিতর থেকে সুন্দর হওয়া যতটা জরুরি, ততটাই জরুরি ‘আমাকে দেখতে কেমন লাগছে’ এই বিষয়টা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ দেখাচ্ছে মনে হলে, ওখানেই অনেকটা আত্মবিশ্বাস পেয়ে যাবেন আপনি।
অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বলছেন, “তাতে কী হয়েছে? আপনার পছন্দের শাড়ি, সঙ্গে হালকা গয়না। কপালে টিপ। খোলা চুলে আপনি খুব ফ্যাশন না জেনেও অপরূপা। |
পার্টিতে অস্বস্তি দূর করে দিতে পারে
আপনার হাসি। ঠিক যেমন ছিল উত্তম
কুমারের। আমি তখন ছোটই ছিলাম।
ওঁর ব্যক্তিত্ব, মুখে হাই ভোল্টেজ হাসি
দিয়ে অনায়াসেই হয়ে উঠতেন
পার্টির মধ্যমণি
মুনমুন সেন |
|
পুরুষদের ক্ষেত্রে অগ্নিমিত্রা বলছেন, “ট্রাউজারের সঙ্গে জহর কোট পরতে পারেন। বিকেলের অনুষ্ঠানে কটন ব্লেজারও ভাল লাগে। আর পাঞ্জাবিতে এখন এত বৈচিত্র যে, জমকালো না পরে হালকা স্টিচ বা ছাপাও পরতে পারেন। ”
কিন্তু পার্টিতে অপরিচিতদের সঙ্গে কী ভাবে ফ্রি হওয়া যায়?
ঋতুপর্ণার পরামর্শ, “খুব রিল্যাক্সড থাকুন। নিজের মতো থাকুন। নিজের কাজের জগৎ নিয়ে বেশি কথা না বলে, বরং বই পড়া, সমাজ বা খেলার জগৎ নিয়ে কথা বলতে পারেন। দেখবেন আপনাদের কথোপকথনেও কমন ইন্টারেস্ট বেরিয়ে পড়েছে। বিক্রম ঘোষের আবার অপরিচিতদের সঙ্গে কথা বলতে দারুণ লাগে। পেশার কারণে অনেক জায়গায় ঘোরেন, দেখা হয় কত নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে। খেয়াল করে দেখেছেন, প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন কাহিনি আছে। তাই অচেনা মানুষের সঙ্গে দিব্যি গল্প জুড়ে দেন।
মুনমুন সেন বললেন, “সবার সঙ্গে কথা বলতে ভালবাসি। কিন্তু খাওয়ার সময় কেউ যদি আলাপ করতে আসেন, তখন ভাল লাগে না। না পারি ভাল করে কথা বলতে, উলটে খাবারও ঠান্ডা হয়ে যায়।”
সদ্য বিয়ে হয়েছে শৈলজার। স্বামীর সঙ্গে পার্টিতে গেলে ওঁর প্রধান সমস্যা, সবার সামনে খেতে লজ্জা পান। তাই অনেক সময় ডিনার এড়িয়ে চলেন। কাজটা একেবারে ঠিক নয়, মনে করেন ঋতুপর্ণা। “দরকার হলে বাড়িতে কাঁটাচামচ হাতে খাওয়া অভ্যেস করুন। পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে আসবেন না।”
বিক্রম ঘোষ শোনালেন জীবনের এক অত্যন্ত মূল্যবান ঘটনার কথা। ১৯৯৫তে জাপানে পণ্ডিত রবিশঙ্করের সঙ্গে অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। অনুষ্ঠান শেষে বিশেষ আয়োজন সিটডাউন ডিনার। রয়েছেন তাবড় তাবড় প্রতিনিধি। পরিবেশিত হল ট্র্যাডিশনাল জাপানিজ খাবার। খেতে হবে চপস্টিক দিয়ে। “আমার তো হয়ে গিয়েছে। ওই আধা সেদ্ধ খাবার দু’টো কাঠি দিয়ে কী করে খাব? পণ্ডিতজি বুঝতে পেরেছেন আমার অবস্থা। তিনি আমায় বাংলায় বললেন, ‘এত দিন বাঙালি হয়ে থেকেছ। বাকি জীবনটা শুধু বাঙালি হয়ে কাটাবে? নাকি সুযোগ গ্রহণ করে এই মানুষগুলোর সঙ্গে পরিচিত হবে? এখানে এসে জাপানিজ জীবনকে বোঝার চেষ্টা করবে। আরও সমৃদ্ধ হবে।” কথা শেষ হতে না হতেই টপ করে মুখে পুরলাম গোটা অক্টোপাস। তার পর থেকেই জাপানিজ খাবারের ফ্যান হয়ে গেলাম। এর থেকে শিক্ষা পেলাম যে আমরা যে কোনও জায়গায় গিয়ে মনে করি সবই আমার মনের মতো হবে। মস্ত ভুল ধারণা। পার্টির রঙে ওখানকার পরিবেশে নিজেকে রঙিন করে তোলাটাই আপনার সিগনেচার।
সিগনেচার হয়ে উঠতে পারে আপনার মুখের মিষ্টি হাসি। মুনমুন সেনের কথায়, “আপনার সব অস্বস্তি দূর করে দিতে পারে আপনার হাসি। ঠিক যেমন ছিল উত্তম কুমারের। আমি তখন ছোটই ছিলাম। ওঁর ব্যক্তিত্ব, মুখে হাই ভোল্টেজ হাসি দিয়ে অনায়াসেই হয়ে উঠতেন পার্টির মধ্যমণি। বসন্ত চৌধুরী এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কথাও অবশ্যই বলতে হবে। ধুতি-পাঞ্জাবিতে অনবদ্য বসন্ত চৌধুরী। সৌমিত্রর ব্যবহার সম্পর্কে কে না জানেন! যখনই দেখা হয় খুব গল্প করি আমরা।”
ঠিক যেমন বিক্রম ঘোষের কাছে পণ্ডিত রবিশঙ্কর। পরনে পাজামা পাঞ্জাবি, মুখে হাসি। ঘরে ঢোকা মাত্রই যেন চার দিকে জ্যোতি ছড়িয়ে পড়ত। যার সঙ্গেই দেখা হত, সবাইকে মনে রাখতেন। পরের বার দেখা হলে ঠিক জানতে চাইবেন আপনার কোনও ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কে যা আপনি গত বার বলেছিলেন তাঁকে। বিক্রম বুঝতে পারেন না, এত বড় মাপের শিল্পী হয়েও কী ভাবে এত অমায়িক ছিলেন! এখন অনেকেই পার্টিতে দেখা হলে একে অপরকে বলেন, “কোথায় যেন দেখা হয়েছিল?” বিক্রমের টিপস, চিনেও না চেনার ভান করবেন না।
পার্টিতে বন্ধুরা থাকলে সত্যিই সুবিধা হয়। মানছেন আবির। এই তো সে দিন কোয়েল-রানের বিয়েতে দেখলাম, আবির আর মিমি ঢুকলেন একসঙ্গে। সঙ্গে সঙ্গে সবার নজর সে দিকে। কী করে মেনে নিই বলুন তো, যে আপনি পার্টির মধ্যমণি হয়ে উঠতে পারেন না?
তবে ঋতুপর্ণা বলছেন, “খুব এফর্ট না দিয়েও কেয়ারলেস ভাবে সুন্দর হয়ে ওঠা যায়। হৃতিক রোশন, কাজল সাধারণ সাজে সুন্দর ব্যবহারে অনবদ্য।” কিন্তু পার্টি থেকে বেরোনোর আগে যিনি নিমন্ত্রণ করেছেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে ভুলবেন না। মনে করিয়ে দিলেন গ্রুমিং কনসালট্যান্ট সঞ্চিতা।
পার্টির মধ্যমণি হয়ে ওঠার ভিত হল আপনার আত্মবিশ্বাস। ভাল ব্যবহার আর একটা দিক। টপিং করবেন মার্জিত সাজ-পোশাক দিয়ে। আইসিং অন দ্য কেক, আপনার সোনা ঝরানো হাসি। এই মোড়কে নিজেকে পরিবেশন করুন। হলফ করে বলছি প্রচুর মানুষের সঙ্গে পরিচয় হবে। অনেকে আপনার মোবাইল নম্বরও চাইবেন। তাঁদের ভিজিটিং কার্ডও দেবেন। তার পর হয়তো আপনার অবস্থা ওই গানটার মতো হল। ‘চার বজ গয়ে লেকিন পার্টি অভি বাকি হ্যায়’... তখন আমায় দোষ দেবেন না যেন...
|
টিপস |
অগ্নিমিত্রা পল |
মেয়েদের
• পার্টিতে যাওয়ার আগে একটু ভেবে নিয়ে পোশাক, মেক-আপ আর অ্যাকসেসরিজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখুন।
• গর্জাস শাড়ি হলে ব্লাউজ হতে হবে সাধারণ। উল্টো কম্বিনেশনও করতে পারেন। সাজের বেলাতেও তাই।
• চোখ সুন্দর করে আঁকুন। মাস্কারা দিন।
• কিন্তু তখন ঠোঁটে বেশি গাঢ় রং দেবেন না।
• যদি হিল পরে অভ্যস্ত হন, তাহলে স্টিলেটোস পরুন। না হলে হিল পরে টলমল পায়ে হাঁটলে খুব খারাপ দেখাবে। |
ছেলেদের
• বিকেলের কোনও অনুষ্ঠানে কটন ব্লেজারও ভাল লাগে।
• পাঞ্জাবিতে এখন এত
বৈচিত্র, যে জমকালো না পরে হালকা স্টিচ বা ছাপাও পরতে পারেন। |
|
|
|
|
|
|