ভাল নেই বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল। নূব্জ্য চেহারা, পরিষেবা শূন্য পরিকাঠামো, অসুস্থ আবাসিকদের নিয়ে একেবাপেই নেই রাজ্যে পড়ে রেয়েছে সে।
২০১১ সালে সাত দিনে সাত জন এবং এক মাসে ১৬ জন রোগী মারা গিয়েছিল এই হাসপাতালে। নড়েচড়ে বসেছিল স্বাস্থ্য দফতর। নিয়মমাফিক তদন্ত কমিটিও গড়া হয়েছিল। কিন্তু রোগীদের খাবারের পরিমাণ বাড়ানো আর তার গুণগত মান পরীক্ষা করার মধ্যেই কমিটি তার কাজ সেরে হাত ধুয়ে পেলেছে। দু-জন চিকিৎসক ও নামমাত্র এক জন নার্স নিয়ে তিন জনের কমিটি এর বেশি কিছুই পরিষেবার অদলবদল ঘটাতে পারেনি হাসপাতালে।
পরিকাঠামো নিয়ে ক্ষুব্ধ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকও তিনি বলেন, “পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে হাসপাতালের কর্মীদের আরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। মানসিক রোগীদের স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার পাশাপাশি খাবারের গুণগত মান উন্নয়নের বিষয়টিও ভাবনা-চিন্তার মধ্যে রয়েছে। তবে কিছু সমস্যা রয়েছে।”
কমিটির সুপারিশ মেনে পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করা হলেও, আবাসিকেরা জানান, সকাল সাড়ে ন-টায় টিফিনে গোটা পাউরুটি বদলে অর্ধেক পাউরুটির বদল হয়নি এখনও। দুধ-কলাও সেই নিম্ন মানের। আর অন্য সময়ে? হাসপাতালের দাবি, দুপুরে ভাত, সব্জি, ডাল, মাছ। সপ্তাহে এক দিন মাংস। রাতে, ভাত, ডাল, সব্জি, ডিম থাকে। রাত সাড়ে ১০টায় আবার কলা, অর্ধেক পাউরুটি ও রসগোল্লা। কিন্তু বরাদ্দের এই রুটিন কি মেলে? আবাসিকদের কথায়, ‘না’। সব্জি মুখে তোলা যায় না। পাতলা জলের মত ডাল। আর ভাত ভীষণ শক্ত। ভাতের পরিমাণও যৎসামান্য।
জেলা সদর হাসপাতালে এখনও তাদের জন্য শয্যা নির্দিষ্ট করা যায়নি। সেই পুরনো ‘বোঝাপড়া’র মাধ্যমেই চলছে চিকিৎসা। এ দিকে মানসিক হাসপাতালের আবাসিকদের মধ্যে অপুষ্টি, রক্তল্পতার বিরাম নেই। সম্প্রতি ৪ জন রোগী যক্ষ্মা ধরা পড়েছে। ডট-এর আওতায় তাঁদের চিকিৎসা চলছে।
হাসপাতালে কার্যত বন্দিত্বও ঘোচেনি আবাসিকদের। প্রাক্তন সুপার রাঘবেশ মজুমদার হাসপাতালের আবাসিকদের ঘরের বাইরে বের করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ছিলেন। তিনি বদলি হয়ে গেলেও নতুন সুপার পবিত্রচন্দ্র সরকার সে ফরমান চালু রেখেছেন। যাঁরা এর মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাঁদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ারও কেউ নেই। এই মুহূর্তে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে পুরুষ আবাসিকের সংখ্যা ১৮৬ ও মহিলা আবাসিক রয়েছেন ১২৩ জন। কিন্তু এই শীতে কনকনে ঠাণ্ডাতেও ওই আবাসিকদের এক দিনের জন্যও ঘরের বাইরে বের করা হয়নি বলেও জানা গিয়েছে। শীত তাড়াতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি সোয়েটার দিয়েই দায় সেরেছেন।
মহিলা বিভাগের রোগীরা বেডের নিচে ঠাণ্ডা স্যাঁতসেতে মেঝেতে কম্বল গায়ে গুটিসুটি হয়ে পড়ে থাকেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই! এমনকী রোগীদের প্রতি হাসপাতালের এক শ্রেণির চিকিৎসক ও কর্মী সহানুভূতিশীল নন বলেও অভিযোগ। হাসপাতাল কতৃর্র্পক্ষ অবশ্য তা মানছেন না। |