|
|
|
|
কপ্টার-সহ সব অভিযোগের মোকাবিলা |
সংসদে কথা চান মনমোহন, ওড়াল বিজেপি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
লাগাতার বিরোধী আক্রমণের জবাব দিতে এ বার সক্রিয় হলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। জানালেন, সংসদেই সব বিষয়ে আলোচনা করতে চায় সরকার। কারণ, তাদের লুকনোর কিছু নেই। বিজেপি অবশ্য তাঁর কথাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। উল্টে দুর্নীতি, হিন্দু সন্ত্রাস, আর্থিক দুর্দশার সঙ্গে এ বার কাটজু-বিতর্ক এবং কপ্টার কেলেঙ্কারি নিয়েও কংগ্রেসকে বিঁধতে তৈরি হচ্ছে তারা।
তিন দিন পরেই শুরু হচ্ছে সংসদের বাজেট অধিবেশন। লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে বাজেট ছাড়াও খাদ্য নিরাপত্তা, জমি বিলের পাশাপাশি পেনশন-বিমার মতো সংস্কার সংক্রান্ত বিলগুলিও পাশ করাতে চান মনমোহন সিংহ। এর ভিত্তিতেই ভোটের হাওয়া তুলতে চাইছে কংগ্রেস। কিন্তু বিরোধীরা সংসদে যে ভাবে আক্রমণাত্মক হওয়ার রণকৌশল নিচ্ছে, তাতে সব কিছু ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ময়দানে নামেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। বলেন, “বিরোধীদের তোলা যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনার উপযুক্ত মঞ্চ হচ্ছে সংসদ। আমরা সব কিছু নিয়েই আলোচনায় প্রস্তুত।” কপ্টার-দুর্নীতি প্রসঙ্গেও মনমোহনের বক্তব্য, “আমাদের গোপন করার কিছু নেই।” পাশাপাশি দিল্লির গণধর্ষণের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনে মহিলাদের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহ রোধ সংক্রান্ত বিলটিও দ্রুত পাশ করানোর কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই সক্রিয়তায় তেমন আমল দিতে চাইছে না বিজেপি। দলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, রাহুল গাঁধীই লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের মুখ হবেন। তাঁকে আড়াল করতেই সনিয়া গাঁধী সুকৌশলে মনমোহন সিংহকে এগিয়ে দিচ্ছেন। যাতে সরকারের যাবতীয় ব্যর্থতার দায় মনমোহন সিংহের উপরে বর্তায়। শ্রমিক সংগঠনের ধর্মঘট প্রত্যাহার করার ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী সক্রিয় হয়েছেন। কিন্তু বিজেপি এখন মনমোহন সরকারের বিদায় যেমন নিশ্চিত করতে চাইছে, তেমনই দলের গোটা আক্রমণটিই গাঁধী পরিবার কেন্দ্রিক করার কৌশল নিচ্ছে।
বিজেপি মুখপাত্র রাজীবপ্রতাপ রুডি আজ বলেন, “মনমোহনের মন্তব্য হাস্যকর। আমরা গুরুত্বই দিচ্ছি না।” তাঁর বক্তব্য, “কপ্টার দুর্নীতি নিয়ে বিজেপি গত বছর থেকে সরব হলেও সরকার ব্যবস্থা নেয়নি। এখন নিজের পিঠ বাঁচাতে তড়িঘড়ি যাবতীয় চুক্তি বাতিল করছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি। কিন্তু ঘুষ কে নিয়েছে, তা খোলসা করছে না। রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ এক নেতার নামও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে, এক প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরও নাম আসছে। এই বিষয়ে আমরা সংসদে সরব হব।”
বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ অবশ্য বিজেপির তোপের মুখে আজ বলেন, “ইতালির আদালত গোপনীয়তা বজায় রাখার বিষয়ে জোর দিচ্ছে। সেটা একটা সমস্যা।” তাঁর মতে, সংবাদমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে সরকার কাজ করে না।
সলমন বলছেন, “আমরা ইতালি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব। আশা করি, ইতালির আদালতের স্বাধীনতা বজায় রেখেই আমরা কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে যেতে পারব।” বিজেপির পাল্টা দাবি, আসল তথ্য প্রকাশ না করার জন্যই সরকার এ সব কথা বলছে। আজ লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলিরা কোর গ্রুপের বৈঠক করেন। জেটলির মতে, অধিবেশন শুরু হতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের বিরুদ্ধে হিন্দু সন্ত্রাস প্রসঙ্গে সরব হবে বিজেপি। প্রকাশ্যে তিনি ক্ষমা চাননি।
জেটলির আক্রমণের পর প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান মার্কণ্ডেয় কাটজু ও দিগ্বিজয় সিংহের মতো কংগ্রেসের নেতারা যে ভাবে আজ পাল্টা সরব হয়েছেন, তার প্রেক্ষিতে আজ আরও আক্রমণাত্মক হয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
দলের একটি বড় অংশ কাটজুকে আক্রমণ করে মোদীর পক্ষে দাঁড়ানোর সুযোগ হিসাবেও কাজে লাগাতে চাইছেন। এক মোদী ঘনিষ্ঠের বক্তব্য, “মোদীর উন্নয়নে ভয় পাচ্ছে কংগ্রেস। তাই কখনও দলের থেকে, কখনও এনজিও-র মাধ্যমে, কখনও সিবিআই দিয়ে, এ বারে কাটজুর মতো সাংবিধানিক পদকে দিয়ে আক্রমণ শানানো হচ্ছে।”
সরকার-বিরোধীদের রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যে কিন্তু কপ্টার কেলেঙ্কারি নিয়ে ক্রমেই সমস্যা বাড়ছে প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান এস পি ত্যাগীর। ইতালির আইনজীবীরাও তাঁর দিকেই আঙুল তুলেছেন। জানিয়েছেন, ২০০৪-০৭ সালে হেলিকপ্টারের টেন্ডারের সময় পুরো পদ্ধতিটাকেই এমন ভাবে সাজিয়েছিলেন ত্যাগী যাতে মার্কিন এবং রুশ প্রতিবন্ধীরা টেন্ডার থেকে বেরিয়ে যায়। পরিবর্তে ত্যাগীর তিন আত্মীয় জুলি, রাজীব ও ডোসকার হাত দিয়ে ত্যাগীর কাছে বড় অঙ্কের অর্থ পাঠানো হয়। ওই তিন জনকেও ৭০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়।
|
সংসদে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘর্ষের প্রস্তুতি তৃণমূলের
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সংসদের আসন্ন বাজেট অধিবেশন বিরোধীদের চিৎকার-প্রতিবাদে ভন্ডুল হয়ে যাক, এমনটা চাইছেন না তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু কপ্টার ঘুষের কাণ্ড থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বঞ্চনার মতো সব ক’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই সংসদে কংগ্রেসের সঙ্গে সংঘাতের পথে যাওয়ার কৌশল নিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
অধিবেশন শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার। তার ঠিক আগে তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বলেন, “আমরা সংসদ অচল করব না। কিন্তু মনমোহন সরকারের জনবিরোধী নীতি ও সাম্প্রতিক দুর্নীতির বিষয়গুলি নিয়ে লাগাতার আন্দোলন করব। সাংসদরা বক্তৃতায় সুযোগ মতো দলের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। ওয়েলে নামা ও প্রতিবাদের কর্মসূচিও রয়েছে। এক কথায় প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা হবে।” রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় কী থাকছে তা দেখে নিয়েই চূড়ান্ত প্রতিবাদসূচি তৈরি করবে তৃণমূল। আপাতত যেগুলি নিয়ে সংসদ উত্তাল করার পরিকল্পনা রয়েছে, সেগুলি হল পেট্রল-ডিজেলের দাম ও রেল-ভাড়া বাড়ানো, রাজ্যের প্রতি আর্থিক বঞ্চনা, সারে ভর্তুকি বজায় রাখার দাবি। সাংসদ সৌগত রায়ের কথায়, “কপ্টার দুর্নীতি নিয়ে আমরা বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইব। আমাদের বক্তব্য, এই দুর্নীতির সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, তা জানতে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবিও তোলা হবে।” |
|
|
|
|
|